বাড়ি4th Issue, September 2013ভারতকে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট দল

ভারতকে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট দল

 

মুয়ায বিন জাকারিয়াঃ ভারতের আগ্রার ডিজেবল্ড স্পোর্টিং সোসাইটির বিপক্ষে “তাজমহল ট্রফি টি-টোয়েন্টি সিরিজ” জয় করে গত ২ জুলাই’১৪ হাসি মুখে দেশে ফিরল  মোঃ মহসিনের নেতৃত্বে ১১ জন শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্যা ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড (বিসিএপিসি)।

এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি’১৪ ডিজেবল্ড স্পোর্টিং সোসাইটির আমন্ত্রণে ভারতের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করে মহসিন ও তার দল। সেখানে গত ২৩, ২৫ ও ২৭ জুন তিন ম্যাচের এই টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৩-২ এ ভারতকে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা। ভারতের গোয়ালিয়রে প্রথম ম্যাচে ১৫ রানে হেরে গেলেও ফরিদাবাদে দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়িয়ে এক উইকেটেই জয় তুলে নেয়  এবং আগ্রা আর্মি স্টেডিয়ামে চার উইকেটে সর্বশেষ ম্যাচ জিতে ২০১৩ সালে ভারতের কাছে হেরে যাবার শোধ নিয়ে নেয়  মহসিনের দল।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে বিসিএপিসি টিমের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফরে আসে ভারতীয় ডিজেবল্ড স্পোর্টিং সোসাইটি ক্রিকেট দল এবং সেবার দেশের মাটিতে ৩-২ এ সিরিজ হেরে যায় স্বাগতিক দল। এবারের জয়ের অনুভূতি জানাতে গিয়ে হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী এ অধিনায়ক মোঃ মহসিন অপরাজেয়’কে বলেন, তিল তিল করে নিজের হাতে গড়ে তোলা দল নিয়ে প্রথমবার দেশের বাইরে গিয়ে প্রথমবারেই সিরিজ জয়ের ট্রফি হাতে নেয়া, এ অন্যরকম এক আনন্দানুভূতি যা ভাষায় প্রকাশের মত নয়।

এদিকে গত ১৬ জুলাই’১৪ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিজয়ী দল ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ভারতের মাটিতে এই জয় আমাদের এক বড় অর্জন। সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রতিবন্ধী মানুষের সফলতার কথা সঠিকভাবে তুলে ধরা হয় না এমন অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের জন্য এটা খুবই দুঃখজনক, সফলতার শিরোনাম কমই হয়, তারচেয়ে বরং অন্যের সমালোচনায় ব্যস্ত সবাই। শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের এই দলকে আরও এগিয়ে নিতে বাংলাদেশে একটি  ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট আয়োজনের উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেন তিনি।

উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের এই দলকে আরও শক্তিশালী করে গঠনের জন্য এক কোটি টাকা অনুদান এবং অনুশীলনের জন্য বঙ্গভবনের পাশে ফাঁকা জায়গায় মাঠসহ, সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য মিরপুরে একটি অফিস দেয়ার ঘোষণা দেন। এছাড়া বিজয়ী দলের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকার চেক প্রদান করেন।

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী এক কোটি টাকা অনুদান প্রসঙ্গে মহসিন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কথা রেখেছেন। এক মাসের ব্যবধানে গত ২০ আগস্ট’১৪ খেলার গুণগতমান উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্যা ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড দলকে এক কোটি টাকা অনুদানের চেক হস্তান্তর করেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে মহসিন আরও বলেন, মূল টাকাটা শেষ করতে চাই না তাই জনতা ব্যাংকে ফিক্স ডিপোজিট করে রাখতে চাই আমরা, যেখান থেকে প্রতি মাসে এক লক্ষ টাকা মুনাফা পাওয়া যাবে যা দিয়ে আমাদের খেলার সরঞ্জামসহ, অফিস ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক মাসিক খরচ উঠে আসবে। তাছাড়াও ঢাকার বাইরে থেকে যেসব খেলোয়াড়রা আসবে তাদের খরচও বহন করা হবে সেখান থেকেই।

এদিকে ২০১৫ সালে পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান এশিয়ার এই পাঁচটি দেশের ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট দলগুলোকে নিয়ে এশিয়া কাপ আয়োজনের প্রস্তুতিও নেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মহসিনের প্রত্যাশা ২০১৫ এর এশিয়া কাপেও চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জিতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবেন তারা। তাই এখন সব মনযোগ এশিয়া কাপের দিকেই দিতে চান তিনি। সরকারের সহযোগিতায় অফিস এবং অনুশীলনের মাঠ পেলেই জোরেশোরে এশিয়া কাপের প্রস্তুতি শুরু করবেন বিসিএপিসি দল।

বিসিএপিসি দলের অন্যান্য শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটাররা মনে করেন, অন্যান্য দেশের যেমন ভারত ও পাকিস্তানের ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট দলগুলো সেই দেশের জাতীয় ক্রিকেট বোর্ডের তত্বাবধানে নিজেদের ভালভাবে গড়ে তোলার সুযোগ পাচ্ছে। একই ভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকেও সব ধরনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তারা।

কথা প্রসঙ্গে মহসিন এ প্রতিবেদককে জানান, ২০১২ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে ইন্ডিয়ার হারুনুর রশিদ নামের একজনের সাথে কথা বলে উৎসাহিত হয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের নিয়ে ক্রিকেট দল প্রস্তুতের নেশায় মেতে উঠেছিলেন তিনি। আর সেই নেশা ও নিরলস চেষ্টার ফলে এই মূল সংগঠক হিসেবে একত্রিত করতে থাকেন শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের এবং কঠোর পরিশ্রমের ফলে একটি দল গঠন করতে পেরেছেন তিনি।

পরবর্তীতে কোচ এস কে এম জসিম এর সহযোগিতায় তাদের দল এই জয় পেয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।  ভবিষ্যতে বিসিএপিসি এর অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোতে দল গঠন করে সেখান থেকে ভাল খেলোয়াড়দের বাছাই করে মূল একাদশ গঠন করারও পরিকল্পনা রয়েছে।

সর্বশেষ

চাকরি নামক সোনার হরিণ নিয়ে যখন তামাশা!

প্রতিবন্ধী মানুষের জব প্লেসমেন্ট সংক্রান্ত সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ বিজনেস এন্ড ডিজেবিলিটি নেটওয়ার্ক (বিবিডিএন) এর সাথে বি-স্ক্যান’র গত ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তিনমাসের একটি চুক্তি হয়।...

মাসিক আর্কাইভ

Translate | অনুবাদ