বাড়ি8th Issue, September 2014বাধাহীন ও একীভূত সমাজ গঠনে প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার ও সুরক্ষা আইন

বাধাহীন ও একীভূত সমাজ গঠনে প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার ও সুরক্ষা আইন

 

মোঃ রজব আলী খান নজীব

 

জাতিসংঘ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার সনদ (সিআরপিডি) গৃহীত হওয়ার পর থেকে রাষ্ট্র ও সমাজে প্রতিবন্ধিতা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সম্পর্কে ধারণার বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে। সনদে স্বীকৃত, প্রতিবন্ধিতা অস্বাভাবিকতা নয়, বরং মানব বৈচিত্রের অংশ। প্রতিটি মানুষের একে অপরের মধ্যকার ভিন্নতার মত প্রতিবন্ধিতাও ভিন্নতারই অংশ। এ সনদে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মূলধারায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয়টি বারংবার উল্লেখ করা হয়েছে এবং সারা বিশ্বে সচেতনতা বৃদ্ধিতে জোর প্রচেষ্টা নেয়া হচ্ছে। প্রতিবন্ধী মানুষের পক্ষে জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরাম উদ্যোগী ভূমিকায় সিআরপিডি’র আলোকে দেশে ইতিমধ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ এবং নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন ২০১৩ জাতীয় সংসদে পাশ হয়েছে। বর্তমান সরকারকে অভিনন্দন জানাচ্ছি, খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই আইন প্রণয়নের জন্য। যদিও অতীতে সরকারের প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক যে সকল আইন, নীতিমালা ও কর্ম পরিকল্পনা প্রণীত হয়েছে, তা কার্যকরভাবে কখনও বাস্তবায়িত হয়নি বলে এই আইনের বাস্তবায়ন নিয়েও আমরা শংকিত।

 

সরকার ২০০৭ সালে সিআরপিডি অনুসর্মথন করেছে। এরপর থেকে ধীরে ধীরে মূলধারায় প্রতিবন্ধী মানুষের অংশগ্রহণের বন্ধ দরজা খুলতে শুরু করেছে। বিগত সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি চাকুরি, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, শিশু সাংস্কৃতিক চর্চা প্রতিষ্ঠান ও ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানে স্বল্প পরিমাণ প্রতিবন্ধী শিশু ও ব্যক্তির অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি সমাজে নেতিবাচক ধারনা ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ভিত্তিক একীভূত ও সুর্নিদিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্প বা কর্মসূচির অভাবে তাদের সমঅংশগ্রহণ বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

 

প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার সুরক্ষায় সমাজকে সবার জন্য উপযোগী করতে সকল ক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং প্রতিবন্ধীবান্ধব সমাজ গঠনে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ অপরিহার্য। দীর্ঘদিনের জমে থাকা বাধা সমাজ থেকে একদিনে দূর করা সম্ভব নয়। সমাজের সকল স্তরের মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সকল উন্নয়ন পরিকল্পনায় প্রতিবন্ধী মানুষের ভাবনা বিবেচনায় রাখতে হবে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ভৌত পরিবেশ, যানবাহন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ জনসাধারণের জন্য প্রাপ্ত সব সুবিধা ও সেবাসমূহে অ-প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মতো সমান সুযোগ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। আর এজন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইনের বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে দ্রুত এই আইন কার্যকর করা আমাদের অন্যতম দাবী।

 

মানুষকে যে কোন সময়ে প্রতিবন্ধিতার অভিজ্ঞতা বরণ করতে হতে পারে। কাজেই সমাজ প্রতিবন্ধীবান্ধব হলে শুধু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিই নয়, গোটা সমাজই উপকৃত হবে। এছাড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবস্থার উন্নয়ন ও মূলধারায় সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে একীভূত সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই এই আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাদের সম-অধিকার, মর্যাদা, ক্ষমতায়নসহ সার্বিক জীবনমানের উন্নয়নের মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন ও একীভূত সমাজ বিনির্মাণ করা সম্ভব হবে।

 

 

লেখকঃ মহাসচিব-নির্বাহী পরিচালক ও উদ্যোক্তা, 

গ্রীন ডিজেবল্ড ফাউন্ডেশন (জিডিএফ),

চেয়ারপার্সন, ডিজএ্যাবল্ড কমিউনিটি এ্যাডভান্সমেন্ট ফাউন্ডেশন (ডিকেফ), 

(দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সমাজকর্মী)

 

সর্বশেষ

চাকরি নামক সোনার হরিণ নিয়ে যখন তামাশা!

প্রতিবন্ধী মানুষের জব প্লেসমেন্ট সংক্রান্ত সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ বিজনেস এন্ড ডিজেবিলিটি নেটওয়ার্ক (বিবিডিএন) এর সাথে বি-স্ক্যান’র গত ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তিনমাসের একটি চুক্তি হয়।...

মাসিক আর্কাইভ

Translate | অনুবাদ