বাড়ি10th Issue, March 2015দিবস উদযাপনের আড়ালে প্রতিবন্ধী শিশুদের ভোগান্তি

দিবস উদযাপনের আড়ালে প্রতিবন্ধী শিশুদের ভোগান্তি

 

ইশতিয়াক আহমেদ

 

বাংলাদেশে প্রতি বৎসর আড়ম্বরপূর্ণভাবে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক দুটি দিন উদযাপিত হয় যার একটি ’অটিজম সচেতনতা দিবস’ এবং অন্যটি ’প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক দিবস’  এবং ’জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস’। প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রতিবন্ধী মানুষদের অধিকার আদায়ে দিবস দুইটির তাৎপর্য ব্যাপক।

 

তাই তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি নিজে সেই সকল অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে প্রতিবন্ধী শিশু এবং ব্যক্তিদের উৎসাহিত করে থাকেন। কিন্তু দিবস দু’টি উদযাপনে আয়োজিত অনুষ্ঠানকে ঘিরে কোমলমতি প্রতিবন্ধী শিশু কিশোরদের কত রকম বঞ্চনা, লাঞ্চনা আর অমানবিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা প্রধানমন্ত্রী অথবা রাষ্ট্রপতিসহ অন্যান্য সচেতন কর্ণধারদের কাছ থেকে আড়াল করে রাখা হয়। সুতারাং এ সকল শিশুদের কষ্টদায়ক তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা অজানাই থেকে যায় সকলের কাছে। বিভিন্ন দিবস উদযাপনে শিশুদের ভোগান্তি উদাহারণ দিয়ে তুলে ধরা যাক। এই দিনের আয়োজিত র‌্যালীগুলোতে অনেকটা জোর জবরদস্তি করে বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যে প্রতিবন্ধী শিশুদের দীর্ঘ পথ হাঁটতে বাধ্য করা হয়। বিশেষত অটিজম এর সম্মুখীন শিশুদের নতুন কোন মানুষ, পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে ও স্বাভাবিকভাবে চলাচলে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়, সেখানে কড়া রোদ বা বিরূপ পরিবেশে দীর্ঘ পদচারণ খুবই অমানবিক ও কষ্টদায়ক। এটা অনস্বীকার্য যে, সচেতনতা বৃদ্ধি বা দিবস উদযাপনে র‌্যালীর ভূমিকা অনেক। কিন্তু তবুও প্রশ্ন থেকেই যায়, যে মহৎ উদ্দেশ্যে দিবস ও র‌্যালীর আয়োজন সেই উদ্দেশ্য যেন এই শিশুদের অন্তরের কান্না ও দীর্ঘশ্বাসে কলুষিত না হয়। তাছাড়া দিবস উদযাপনে আয়োজিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্যেও এদের পোহাতে হয় অগণিত লাঞ্ছনা ও বঞ্চনা। তাদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার তোয়াক্কা না করে আয়োজক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ দিনের পর দিন রিহারস্যাল (মহড়া) করায়, কিন্তু শিশুদের চরম অসুবিধার মূহুর্তগুলো আয়োজকদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায় বেশির ভাগ সময়। এমন কি শিশুদের সাথে রূঢ় ব্যবহার করতেও দ্বিধাবোধ করেন না কেউ কেউ। সংশ্লিষ্ট আয়োজক, প্রতিষ্ঠান জেনে অথবা না জেনেই যে ভুল করে যাচ্ছেন যা দিবস বা র‌্যালী সম্পর্কে শিশুদের কোমলমতি মনে বিরূপ ধারণার জন্ম দেয়। ফলশ্রুতিতে ভবিষ্যতে তারা নিজেদের জন্য মূল স্রোতধারার অর্ন্তভুক্তির আন্দোলন করার আগেই পিছু হটবে।

 

দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে শিশুদের ভোগান্তি ব্যাপারটা অনেকের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ না শোনালেও এর গভীরতা কিন্তু অনেক। অধিকার আদায়, সচেতনতা বৃদ্ধি ও উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় অন্তর্ভুক্তিকরণের মত মহৎ লক্ষ্যে ’অটিজম সচেতনতা দিবস’, ’প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক দিবস’ ও অন্যান্য দিবসগুলো উদযাপিত হয়। সুতরাং আয়োজক, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসহ সকলকে খেয়াল রাখতে হবে যে, দিবস বা র‌্যালীকে সাফল্যমন্ডিত করার প্রত্যয়ে আমরা যেন আমাদের কোমলমতি শিশুদের বিশেষ চাহিদা গুলোকে উপেক্ষা না করি। আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস, দিবস উদযাপনের জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে যদি শিশুরা অজান্তে ভুল ভ্রান্তি করেও ফেলে তাহলে এই শিশুদের বন্ধু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য কর্ণধাররা কোন কিছুই মনে করবেন না; যতোটা না তারা ব্যথিত হবেন এসব অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য শিশুদের পীড়াদায়ক অনুভূতির কথা জানতে পারলে।

 

আমাদের সকলের উচিৎ শিশু কেন্দ্রিক পরিবেশের মাধ্যমে বিশেষ দিনগুলো উদযাপন করা এবং শিশুদের শারীরিক, মানসিক অবস্থা ও চাহিদার প্রতি খেয়াল রেখে এবং প্রচুর সময় হাতে নিয়ে আরও অনেক আগে থেকে তাদের প্রস্তুতিমূলক রিহারস্যাল শুরু করা। আমাদের মনে রাখতে হবে, বিশেষ দিবসের মূলনীতি থেকে শিক্ষা নেয়াই হল আসল। আমাদের সন্তানদের যুগোপযোগী করে গড়ে তুলে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসাই হল সকলের প্রত্যাশা।

 

লেখকঃ উন্নয়ন কর্মী

সর্বশেষ

চাকরি নামক সোনার হরিণ নিয়ে যখন তামাশা!

প্রতিবন্ধী মানুষের জব প্লেসমেন্ট সংক্রান্ত সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ বিজনেস এন্ড ডিজেবিলিটি নেটওয়ার্ক (বিবিডিএন) এর সাথে বি-স্ক্যান’র গত ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তিনমাসের একটি চুক্তি হয়।...

মাসিক আর্কাইভ

Translate | অনুবাদ