রিপা রহমান
ক্রীতদাস প্রথা ঘুচেছে বহু আগেই। এরপর সমাজকে পাত্তা না দিয়ে নারীরাও দীর্ঘ সময়ের আন্দোলন-সংগ্রামে খানিকটা এগিয়ে গেছে। কিন্তু আমরা কী ভাবছি, কোথায় আছি আমরা?
বহু যুগের পুরোনো ক্রীতদাসদের অবস্থা মনে পড়ছে। দীর্ঘদিন প্রভুর অধীনে থাকতে থাকতে বদ্ধমূল ধারণার ছাপ পড়ে যেত মননে-মগজে; যেন নিজস্ব চিন্তা-চেতনা-স্বপ্ন বলে কিছু থাকতে নেই। ইচ্ছে নেই। অধিকার নেই। নিজ থেকে কিছুই করার নেই জীবনে। একটা সময় ক্রীতদাসেরা ভাবতে শুরু করত, প্রভুর অধীন থেকে বেরিয়ে নিজ পায়ে ভর করে চলতেই পারবে না কখনো। তার চেয়ে ‘এই বেশ ভালো আছি! পরনির্ভরশীলতাই আমার ধর্ম’ এই হয়ে যেত তাদের নীতি। ধীরে ধীরে এই পরনির্ভরশীলতার এক চরম পর্যায়ে গিয়ে তাদের মনেই থাকত না স্বাধীনভাবেও বেঁচে থাকা যায়। নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়া যায়। প্রভুর চোখে চোখ রেখেই পৃথিবীর মাটিতে বীরদর্পে ঘুরে বেড়ানো যায়। মানুষের মৌলিক প্রাপ্য অধিকারগুলো না পেতে পেতে একটা পর্যায়ে সেটা অর্জন করে নেওয়ার সাহসকে ঘোরতর পাপ মনে করতে শুরু করতেন তারা।
আমাদের প্রতিবন্ধী মানুষদের অবস্থা তাই হয়েছে। আমরা ক্ষমতাসীনদের দিকে চোখে চোখ রেখে তাকাতে ভয় পাই। সমাজ বা রাষ্ট্রযন্ত্রের দিকে আঙুল তাক করা দূরের কথা, নিজ পরিবারে নিজ অধিকার নিয়ে কথা বলতে সাহস পাই না আমরা। ক¤িপত বুকে এক-আধবার বললে তৃতীয়বারে চুপ হয়ে যাই আমরা। কারণ, আমরা নিজেদের পরিবার তথা সমাজের বোঝা ভাবি। নিজের পড়ালেখা বা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো অথবা শখ-আহ্লাদ পূরণ করাকে পরিবারের সমস্যা হবে ভেবে পাথর চাপা দিয়ে রাখি মনের গহিনে।
পুনশ্চ: এই ভাবনা থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ নয়, কিন্তু অসম্ভবও নয়। প্রশ্নটি হলো আমরা কি পারতে চাই? আমাদের কোনো উন্নতি হবে না গলায় আওয়াজ তুলতে না পারলে। জোর গলায় চিৎকার করে নিজের ইচ্ছে জানান দিতে হবে। আমার বেঁচে থাকার অধিকার আমার পছন্দের হতে হবে। আর তা কেবল ভাবতে শিখতে হবে শুধু।