বাড়িনির্বাচিত প্রধান সংবাদআমেরিকাস গট টেলেন্ট বিজয়ী কোডি লি

আমেরিকাস গট টেলেন্ট বিজয়ী কোডি লি

সগীর হোসাইন খান

দিনটি ২৮ মে, ২০১৯। পৃথিবী বিখ্যাত ট্যালেন্ট হান্ট শো “আমেরিকাস গট ট্যালেন্ট” (America’s Got Talent) এর ১৪তম আসরের বাছাই পর্বের মঞ্চে ২৩ বছরের এক যুবক তার মায়ের সাথে গুটি গুটি পায়ে প্রবেশ করল। বিচারক আর দর্শকদের চোখে তখন কৌতুহলের ছাপ। কারণ ছেলেটা তার এক হাত দিয়ে মায়ের হাত ধরে রেখেছে আর আরেক হাতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ব্যবহৃত সাদা ছড়ি।

মঞ্চে স্থির হতেই বিচারক গ্যাব্রিয়েল ইউনিয়ন তাদের স্বাগতম জানালেন। এদিকে দর্শকদের তীব্র চিৎকার আর জোর করতালি চলছেই। গ্যাব্রিয়েল ইউনিয়ন যখন জানতে চান, “Who are you?” কোডি লী’র উত্তর , “I’m Kodi…Kodi Lee”। “তুমি কি করবে?” গ্যাব্রিয়েল ইউনিয়নের এই প্রশ্নের উত্তর দিতে কোডি লিকে কষ্ট করতে হয়েছে। এমনকি অনুষ্ঠানের নির্মাতা এবং নির্বাহী পরিচালক সাইমন ক্রাউলকেও চোখ বড় বড় করে অপেক্ষা করতে দেখা যায় সেই সময়। কষ্ট করে হলেও যখন কোডি লি বলে, সে গান করবে, তখন বিচারকসহ সবাই অবাকই হয়েছে বৈ কি। আমেরিকা’স গট ট্যালেন্ট এর অন্যতম বিচারক হাউই ম্যান্ডেল এর প্রশ্নের জবাবে মা টিনা লি বলেন, “কোডি অটিস্টিক এবং চোখেও দেখে না। এ কারণে তার দুনিয়াটাই আলাদা। সে অন্য সবার মত অনেক কাজই করতে পারে না। একদিন সে পিয়ানো নিয়ে খেলার সময় আমি লক্ষ্য করি তার চোখ দুটি বড় বড় হয়ে আছে। আমি তখন বুঝতে পারি সে গান খুব পছন্দ করে। সে একজন “এন্টারটেইনার”।

কিন্তু তখনো আসল অবাক হওয়া বাকি ছিল। কথা বলতেই যে ছেলের কষ্ট হয় সেই ছেলেটাই পিয়ানোতে হাত রাখতেই যেন পাল্টে গেল। গলা দিয়ে বের হয়ে আসা শুরু করল সুমধুর সুর। সাথে পিয়ানোর চমৎকার সংমিশ্রণ। বিচারকরা তন্ময় হয়ে শুনলেন তার গান। দর্শকদের হুইসেল, চিৎকার আর করতালি যেন থামছিলই না যখন কোডি লি তার গান শেষ করেন। আর বিচারকবৃন্দ! তারা মুগ্ধতার সর্বোচ্চ শিখরে ছিলেন। তাই গান শেষ হতেই দাঁড়িয়ে কোডি লিকে সন্মান জানাতে ভুল করেননি। তবে কোডি লি জন্য সবচাইতে বড় পাওনাটা ছিল গ্যাব্রিয়েল ইউনিয়নের দেওয়া “গোল্ডেন বাজার”। এই বাজার যে পায় তাকে বাছাই পর্ব থেকে সরাসরি লাইভ শো তে অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দেওয়া হয়।

এই একটা গান দিয়েই কোডি লী হয়ে যান পৃথিবী বিখ্যাত। তার বাছাই পর্বের ভিডিওটি এখন পর্যন্ত ৪৭,৪১১,০৮৬ জন মানুষ ইউটিউবে উপভোগ করেছেন। ভিডিওতে মন্তব্য পড়েছে ৮৮,২১৯ টি। এতেই বোঝা যায় কোডি লী’র আবেদন কতটা জোরালো ভাবে মানুষের উপর পড়েছে।

এর পর কোয়ার্টার ফাইনালের বাধা পার হতে কোডি লি কে আর কষ্ট করতে হয়নি। ফাইনালের আগেই যেন বেশীর ভাগ মানুষ বুঝে গিয়েছিলেন কে হতে যাচ্ছে এবারের আসরের বিজয়ী। তাই কোডি লি’র জন্য ফাইনালের পারফর্মমেন্সটা ছিল অনেকটা আনুষ্ঠানিকতার মতই। বেশীর ভাগ মানুষের অনুমানকে সত্য প্রমাণিত করে কোডি লি ছিনিয়ে নিয়েছেন বিজয়ের মুকুট। তিনি এখন আমেরিকা’স গট ট্যালেন্ট সিজন -১৪ (২০১৯) এর চুড়ান্ত বিজয়ী।

আমেরিকা’স গট ট্যালেন্টের এবারের আসরটি যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণর বিচারে বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ ছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই। এজিটির এবারের ১৪তম আসরের আরেক ফাইনালিস্ট রায়েন নিমেলার এর কথাই ধরা যাক। জন্মগত ভাবে দুই হাত নেই যার। কিন্তু তিনি যখন কমিডি পারফর্মেন্স শুরু করেন তখন আত্মবিশ্বাসে ভরপুর মানুষটার প্রতিটা কৌতুকে মানুষ না হেসে থাকতে পারেন না। নিজের প্রতিবন্ধিতাই তার কৌতুকের মূল বিষয়। আর এই বিষয়ে মানুষের মন জয় করেই তিনি হয়েছেন তৃতীয়।

এবারের আসরে আরেকজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিও সবার নজর কেড়েছেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ নেওয়া সাবেক সৈনিক রবার্ট ফিনলে বর্তমানে চোখে না দেখলেও ৬৫ বছর বয়সে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে মেয়েকে সাথে করে এজিটির আসরে উপস্থিত হতে কুণ্ঠা বোধ করেন নি।

আরেকজন ব্যক্তির কথা না বললেই নয়। অন্য তিনজনের মত তিনি এত দূর যেতে পারেন নি। দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই  বিদায় নিতে হয়েছে তাকে। কিন্তু তিনি যে বহু মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা তৈরী করে গিয়েছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। তিনি হলেন কেভিন সোয়ার্জ। ৪৯ বছর বয়সী এই মানুষটার রয়েছে ফোবিয়া। ঘর থেকে বের হওয়ার ফোবিয়া। তিনি কমিডিকে একটি কারণ হিসেবে নিয়েছেন যাতে তিনি সাহস করে ঘর থেকে বের হতে পারেন। সেই সাহসে ভর করেই তিনি এজিটিতে নিজের একটি অবস্থান তৈরী করতে এসেছিলেন। বেশিদূর যেতে না পারলেও ঘর থেকে বের হওয়ার অনেক সাহস যে তিনি ঠিকই জুটিয়েছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই।

কেভিন সোয়ার্জ, রবার্ট ফিনলে, রায়েন নিমেলার আর কোডি লি’দের এই বিজয় শুধু তাদের একার নয়। এই বিজয় সারা পৃথিবীর প্রতিবন্ধী মানুষের বিজয়। মানসিক প্রতিবন্ধী মানুষ, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষ, শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষ, অটিস্টক মানুষসহ সব ধরণের প্রতিবন্ধী মানুষের বিজয়। এই বিজয়ের মাধ্যমে আবারো সারা বিশ্বের মানুষের কাছে সেই পুরনো বার্তা নতুন করে পৌঁছল, “সুযোগ পেলে আমরাও পারি। প্রতিবন্ধিতা কোন বাধাই না।” 

সর্বশেষ

চাকরি নামক সোনার হরিণ নিয়ে যখন তামাশা!

প্রতিবন্ধী মানুষের জব প্লেসমেন্ট সংক্রান্ত সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ বিজনেস এন্ড ডিজেবিলিটি নেটওয়ার্ক (বিবিডিএন) এর সাথে বি-স্ক্যান’র গত ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তিনমাসের একটি চুক্তি হয়।...

মাসিক আর্কাইভ

Translate | অনুবাদ