বাড়ি19th Issue, March 2019অগ্রযাত্রার পথে হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী নারী বাস্কেটবল দল

অগ্রযাত্রার পথে হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী নারী বাস্কেটবল দল

অপরাজেয় প্রতিবেদক

বাংলাদেশের হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী নারী বাস্কেটবল খেলোয়াড়েরা প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক সিরিজ জয় করে এসেছেন। ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত পঞ্চম বালি আন্তর্জাতিক হুইলচেয়ার বাস্কেটবল প্রতিযোগিতায় ৫-০ তে এই সিরিজ জয় করেন তারা।

ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেডক্রস (আইসিআরসি)-এর অর্থায়নে গত জুন, ২০১৮ তে বিশ দিনের বাছাই ক্যাম্পে নয়জন নারী খেলোয়াড়কে নির্বাচন করা হয়েছিল এই সিরিজের জন্য। বালি সাফল্যের পর আরও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ বছরের ২৩ মার্চ একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে থাইল্যান্ড সফরে যায় দলটি। আন্তর্জাতিক হুইলচেয়ার বাস্কেটবল ফেডারেশন ও এশিয়া ওশেনিয়া জোনের আয়োজনে সাত দিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণ ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হবে থাইল্যান্ডের সুফান বুরির ন্যাশনাল প্যারালিম্পিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। প্রশিক্ষণ ক্যাম্পটিতে এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী খেলোয়াড়দের বাস্কেটবলে দক্ষতা বৃদ্ধিতে অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক দ্বারা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত জার্মান নারী দলের সাবেক কোচ হলগার গ্লিনিকি ও অস্ট্রেলিয়ান পুরুষ দলের হয়ে প্যারালিম্পিককে দুবার স্বর্ণপদক জয়ী  ট্রয় সাচ।

থাইল্যান্ডের এই প্রশিক্ষক দলের সঙ্গে আছেন বাংলাদেশের হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী নারী বাস্কেটবল দলনেতা মারজানা আক্তার। মেরুরজ্জে আঘাত পাওয়ার পর জীবনপথের গতি থমকে দাঁড়িয়ে ছিল। সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড (সিআরপি) তে চিকিৎসা নিতে এসে যুক্ত হয়ে যান বাস্কেটবল দলে। এরপর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মারজানাকে। থাইল্যান্ডে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন দলের আরেক সদস্য শাকিলা মিতু। মারজানার মতো তিনিও ভাবেননি, প্রতিবন্ধী নারী হয়েও দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনতে পারবেন। মিতু সিআরপি তে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে চিকিৎসা নিতে এসে প্রথম হুইলচেয়ার বাস্কেটবল খেলা দেখেন। প্রথম দেখাতেই বাস্কেটবল খেলার সুপ্ত আশা সঞ্চার হয় তার মনে। পরের বছরই স্বপ্ন বাস্তবায়নের ডাক আসে সিআরপি থেকে। বাস্কেটবল দলে প্রশিক্ষণের জন্য তাকে নেওয়া হয়। রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় বেড়ে ওঠা মিতু ঢাকা শহরে হুইলচেয়ার নিয়ে একা বসবাস করতে পরিবারের বাধা ছিল। তাকে বেগ পেতে হয় সবাইকে মানিয়ে নিতে। অবশেষে সব বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে মিতু পনেরো জনের দলে এক মাসের প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে সিআরপিতেই চাকরিতে যোগদান করেন এবং সময় পেলে বাস্কেটবল নিয়ে চলতে থাকে খুনসুটি। নেপালে ত্রিদেশীয় বাস্কেটবল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী নারী খেলোয়াড়েরা আন্তর্জাতিক আয়োজনে অংশ নেয়। বাছাইপর্ব থেকে মূল পর্বের জন্য নির্বাচিত হন মিতু। নেপালের প্রতিকুল আবহাওয়া সত্ত্বেও রানার্সআপ এবং ওম্যান অব দ্য ম্যাচের ট্রফি বাংলাদেশের ঘরেই নিয়ে আসেন মিতুরা। পরবর্তী সময়ে দেশে ফেরার পর বাংলাদেশ বাস্কেটবল ফেডারেশনের উদ্যোগে খেলোয়াড়দের সংবর্ধনা, সনদ ও প্রীতি ম্যাচ খেলার আয়োজন হয়। মিতু বলেন, দেশে হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী নারী খেলোয়াড়ের সংখ্যা বেশি নেই এবং পর্যাপ্ত খেলারও সুযোগ নেই। সরকার যদি প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করে, তাহলে ভবিষ্যতে প্রতিটি জেলায় আরও হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী নারী খেলোয়াড় তৈরি হবে এবং দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনবে তারাও।

সর্বশেষ

চাকরি নামক সোনার হরিণ নিয়ে যখন তামাশা!

প্রতিবন্ধী মানুষের জব প্লেসমেন্ট সংক্রান্ত সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ বিজনেস এন্ড ডিজেবিলিটি নেটওয়ার্ক (বিবিডিএন) এর সাথে বি-স্ক্যান’র গত ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তিনমাসের একটি চুক্তি হয়।...

মাসিক আর্কাইভ

Translate | অনুবাদ