বাড়ি19th Issue, March 2019সর্বস্তরে অংশগ্রহণে প্রতিবন্ধী নারীর ক্ষমতায়ন

সর্বস্তরে অংশগ্রহণে প্রতিবন্ধী নারীর ক্ষমতায়ন

অপরাজেয় প্রতিবেদক

চার বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বরে দৃষ্টিশক্তি হারানো মহিমা বেগম আজ ভূমিহীন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় লড়ছেন। বাল্যবিবাহ, যৌন নির্যাতন, যৌতুকের বিরুদ্ধে কাজ করছেন মাঠপর্যায়ে। তবে এই উঠে আসার লড়াইটা এত সহজ ছিল না বললেন মহিমা।

শিক্ষাজীবনের শুরুতেই মহিমাকে পাড়ি দিতে হয় দীর্ঘ কণ্টকাকীর্ণ এক পথ। মিরপুর আইডিয়াল গার্লস থেকে মাধ্যমিক শেষে বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হতে গেলে অধ্যক্ষ প্রথম দিকে তাকে ভর্তি নিতে অস্বীকৃতি জানান। পরবর্তী সময়ে সেখান থেকেই উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়ে মহিমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে পড়তে শুরু করলেন। কিন্তু হলে থাকতে চাইলে প্রতিবন্ধী নারী হিসেবে আবার বাধার সম্মুখে পড়েন। হলের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকের নেতিবাচক মনোভাবের কারণে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয় মহিমাকে। তিনিও ছেড়ে দেওয়ার মানুষ নন। রোকেয়া হলে থাকার ব্যবস্থা করেই তবে দম নিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে ২০১০-১১ সালের দিকে তিনি ব্র্যাকের ব্রেইল শিক্ষকের পদে আবেদন করেন। তবে তারা কোনো দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে নেননি। এতে তিনি মানসিকভাবে বেশ আঘাত পান।

এরপর মহিমা গ্রামের দরিদ্র, পিছিয়ে পড়া মানুষদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছেতেই নিজেরা করি সংগঠনে কর্মজীবন শুরু করেন। বর্তমানে তিনি কুমিল্লা চান্দিনা উপজেলায় নিজেরা করি এর কর্মসূচি সংগঠক হিসেবে কর্মরত আছেন। মহিমা তার সংগঠনের হয়ে ত্রিশটি গ্রামে তিন শত আটষট্টিটি দল গঠনে কাজ করেন। এই দলে এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্যসহ স্থানীয়দের যুক্ত করা হয়। স্থানীয়দের মধ্যে নেতৃত্ব গুণাবলি আছে যার, তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা বাল্যবিবাহ, যৌন নির্যাতন, যৌতুকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পরামর্শের ব্যবস্থা করেন। উঠোন বৈঠক করেন। সাধারণ নির্যাতিত নারীদের সচেতন করতে কর্মশালাও করেন।

মহিমা প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে প্রতিবন্ধী মানুষদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করেন। পরিবার ও সমাজে প্রতিবন্ধী মানুষের প্রতি বৈষম্য দূরীকরণে ধারাবাহিক আন্দোলনের রূপ দিতে চান। তিনি গ্রামের প্রতিবন্ধী সন্তান জন্মানোর ভ্রান্ত ধারণা পরিবর্তনের লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিবারে গিয়ে কারণ ব্যাখ্যা করেন এবং প্রতিবন্ধী সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে অনুপ্রেরণা দেন। গ্রাম কমিটি থেকে নির্ধারিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে উপবৃত্তি বা ভাতা পাওয়ার ব্যবস্থা করেন। প্রসঙ্গক্রমে তিনি জানালেন, সচেতনতার অভাবে গ্রামে প্রতিবন্ধী মানুষেরা কী ভীষণ অবহেলায় দিনাতিপাত করছেন। তার পাশের গ্রামের একজন শ্রবণ প্রতিবন্ধী মেয়েকে তার পরিবারই মানুষের মর্যাদা দিতে চায় না। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক তার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মেয়েকে কারও সাথে মিশতে দেন না এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে রাখেন। এ প্রসঙ্গে মহিমা বলেন, শিক্ষিত মানুষ এমন অসচেতন কার্মকান্ড করলে অশিক্ষিত মানুষের জন্য তা অস্বাভাবিক নয়। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী মানুষের প্রতি পরিবার ও সমাজের সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি একই রকম নয়। তাই আমাদের মতো প্রতিবন্ধী মানুষের উচিত নিজেদের অধিকারগুলো বুঝে নেওয়া। যদিও বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণাটা অনেকাংশেই কমে যাচ্ছে। তার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সরাসরি অংশগ্রহণের ফলস্বরূপ এই পরিবর্তন।

মহিমা বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সর্বত্র সরাসরি অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রতিবন্ধিতা বরণ করার পর মহিমার পরিবারও তাকে নিয়ে চিন্তিত ছিল। তিনি তার পরিবারের সঙ্গে লড়াই করে বিদ্যালয়ে যান এবং পড়াশোনা শেষ করেন। যার ফলে এখন পরিবারে অনেকেই উৎসাহিত এবং ইতিবাচক। একেও তিনি একধরনের পরিবর্তন হিসেবেই মনে করেন।

সর্বশেষ

চাকরি নামক সোনার হরিণ নিয়ে যখন তামাশা!

প্রতিবন্ধী মানুষের জব প্লেসমেন্ট সংক্রান্ত সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ বিজনেস এন্ড ডিজেবিলিটি নেটওয়ার্ক (বিবিডিএন) এর সাথে বি-স্ক্যান’র গত ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তিনমাসের একটি চুক্তি হয়।...

মাসিক আর্কাইভ

Translate | অনুবাদ