বিজিএমইএ’র নারীসহ ১৮ হাজার প্রতিবন্ধী মানুষের কর্মসংস্থানের ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক: কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রশিক্ষণের পর তিন হাজার ছয়’শ পোশাক কারখানায় প্রায় ১৮ হাজার প্রতিবন্ধী মানুষের কর্মসংস্থানের ঘোষণা দিয়েছে বিজিএমইএ।

শ্রম কল্যাণমূলক বাজার ভিত্তিক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তুলে এ বিষয়ে কর্মকৌশল তৈরি, দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি এবং উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিবন্ধী মানুষদের সামাজিক উন্নয়নে কর্মরত সংস্থা এবং এনজিওগুলোকেও আরও সক্রিয় হবার আহ্বান জানিয়েছেন বিজিএমইএ’র সহ সভাপতি মোঃ শহিদুল্লাহ আজিম।

গত ২৪ নভেম্বর, ২০১৩ বিজিএমইএ ভবনের সভাকক্ষে ‘প্রতিবন্ধী নারীদের কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণে নিয়োগ দাতা ও প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্য রাখা কালীন তিনি এ কথা বলেন।

এসময় তিনি দেশীয় পোশাক কারখানাগুলোর মধ্য অনন্য উদাহরণ সৃষ্টিকারী হিসেবে উল্লেখ করে কেয়া গার্মেন্টস লিমিটেড, ইন্টারস্টফ অ্যাপারেলস লিমিটেড ও টেক্স ইউরোপ (বিডি) সহ সংখ্যায় অল্প হলেও আরও কিছু প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধী মানুষদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ পরবর্তী চাকরী দিয়ে দেশের মূল শ্রমশক্তিতে মূল্যবান অবদান রাখার সুযোগ করে দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

তবে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, প্রশিক্ষক ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার ব্যাপারে জোর তাগিদ দিয়ে তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠুভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে তারা যদি বিজিএমইএ এর কাছে তালিকা পাঠায় তাহলে দেশের ৩ হাজার ৬০০ পোশাক কারখানায় প্রায় ১৮ হাজার প্রতিবন্ধী মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব। যেহেতু এসব পোশাক কারখানায় প্রতিবন্ধী মানুষেরা অন্যান্য অ-প্রতিবন্ধী মানুষের সাথে স্বাভাবিকভাবেই কাজ করছেন। আমরাও অন্যান্যদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে চাই কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতায়।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের মহাপরিচালক আশরাফ হোসেন সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে এসে কর্ম প্রক্রিয়া আরও বেগমান করার তাগিদ দিয়ে বলেন, প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য নির্ধারিত আইন বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি-২০১১ অনুমোদনকে দেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক আখ্যা দিয়ে প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য নেয়া সরকারি উদ্যোগগুলোর প্রশংসা করেন তিনি।

জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরাম, এনএএসপিডি, অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে এবং অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় আয়োজিত উক্ত আলোচনা সভায় প্রতিবন্ধী মানুষদের পক্ষ থেকে মহিলা বিষয়ক অধিদফতর ও যুব উন্নয়ন অধিদফতরের আওতাধীন সমস্ত জেলা ও আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নারী প্রতিবন্ধী মানুষদের প্রশিক্ষণ পরবর্তী কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিতে জোর দাবি জানানো হয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এর পরামর্শে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ সংস্কারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে বলে সভায় দাবী করা হয়। তাই তারা “দক্ষতা উন্নয়ন রূপকল্প ২০১৬” উপস্থাপন হওয়া বাঞ্ছনীয় বলে মনে করেন। সভায় এ রূপকল্পের সফল বাস্তবায়নের জন্য সবার ঐকান্তিক সহযোগিতা কামনা করা হয়।

অন্যান্যদের মাঝে আরও বক্তব্য রাখেন, জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের মহাসচিব মিজানুর রহমান, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার টিভিইটি রিফর্ম প্রজেক্টের চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজর আর্থার ই. শিয়ার্স, অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আলবার্ট মোল্লা, এনএএসপিডির মহাসচিব এম এ বাতেন ও জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরাম এর কোঅরডিনেটর এবং টিম লিডার – প্রোগ্রাম, জনাব রফিক জামান উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিবন্ধীদের মূলধারায় সম্পৃক্ত হওয়ার প্রধান অন্তরায় যাতায়াত ব্যবস্থা

আজ ২১ তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও যথাযোগ্য মর্যাদায় সরকারী এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের সহযোগিতায় এ দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। আর আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসে এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয়- “Removing barriers to create an inclusive and accessible society for all” বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রদত্ত বিভিন্ন অজ্ঞীকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য ইতিমধ্যেই প্রণয়ন করেছে জাতীয় প্রতিবন্ধী বিষয়ক নীতিমালা এবং বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন-২০০১। বর্তমানে “প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার আইন-২০১২” সংসদে উপস্থাপনের অপেক্ষায়। এ সকল নীতিমালা ও আইনে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সমসুযোগ, সমঅংশীদারীত্ব এবং তাদের অধিকার সংরক্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে আমরা কি দেখতে পাই?

দেখুন, আপনি আপনার প্রতিবন্ধী সন্তানকে শিক্ষিত করে তুলতে সকল বন্দোবস্ত করলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রের সমস্ত নির্দেশনা প্রতিপালন করে ভর্তি করে নিল আপনার সন্তানকে, স্কুলেও পরিবেশ সৃস্টি করা হল সমস্ত সহায়ক সামগ্রী দিয়ে। কিন্তু এখন প্রশ্ন আসে আপনার সন্তানকে স্কুলে নিয়ে যাবেন কিভাবে! কতজনের সামর্থ আছে নিজেস্ব প্রাইভেট কারে করে নিত্যদিন স্কুলে আনা-নেওয়ার। আবার, যদি সবদিক বিবেচনায় আপনি যোগ্য হন চাকুরী করার, সেক্ষেত্রেও অফিসে যাওয়া-আসার প্রশ্নটি সামনে এসে যায় । আর বিনোদনের কথা উঠলে সবার আগে যাতায়াত ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতাই প্রধান বিবেচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। প্রতিবন্ধিবান্ধব অর্থাৎ হুইলচেয়ার এ্যক্সেসিবল যানবাহন ব্যবস্থার অপ্রতুলতাই প্রধান অন্তরায় বলে আমার কাছে প্রতিভাত হচ্ছে। আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে আমি যা উপলব্ধি করেছি তা এখন আমি একটু শেয়ার করতে চাই।

আমার কোন পার্সোনাল ট্রান্সপোর্ট নেই। সেক্ষেত্রে কোথাও যেতে হলে কার/এ্যম্বুলেন্সের উপর নির্ভর করতে হয়। এক সময় ইয়েলো ট্যাক্সিক্যাব হায়ার করতাম আর মিটারে ভাড়া পরিশোধ করতাম। এখন যেমন ইয়েলো ট্যাক্সিক্যাব খুব একটা পাওয়া যায় না, তেমনি অন্য ক্যাবগুলোতে পিছনে গ্যাস-সিলিন্ডার সংযোজন করায় হুইলচেয়ার ফোল্ড করে রাখা যায় না। অন্য দিকে হুইলচেয়ার এ্যক্সেসিবিল এ্যম্বুলেন্স আমার চোখে পড়ে নি, উলটো সাধারণ এ্যম্বুলেন্সের আকার (আভ্যন্তরীণ স্পেস) দিন দিন এত ছোট হচ্ছে যে একটা হুইলচেয়ারই ফোল্ড করার জায়গা হয় না। আবার সিএনজিতে আমার মত মেরুরুজ্জে (স্পাইনাল কর্ডে) আঘাতপ্রাপ্ত হুইলচেয়ার নির্ভরশীলদের উঠা-নামা একেবারেই সম্ভব নয়।

আবার রেলপথে যাতায়াতের ক্ষেত্রে, রেলওয়ের প্লাটফর্ম থেকে বগির উচ্চতা বেশ উঁচুতে হওয়ায় এবং দরজার প্রশস্ততা সংকীর্ণ হওয়ায় একজন হুইলচেয়ার নির্ভরশীল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে যে বিপদজনকভাবে অন্যের সাহায্যের উপর নির্ভর করে উঠতে হয়, তা যে কোন সচেতন নাগরিক স্বচক্ষে দেখলে আঁতকে উঠবেন। জীবনের এই চরম ঝুঁকি নিয়েই আমার মতো অনেক প্রতিবন্ধীকেই চলতে হয় ট্রেনে।

১অত্যান্ত বিপদজনক অবস্থায় জীবনের ঝুকি নিয়ে ট্রেনে উঠছেন হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী ব্যক্তি

{দিল্লির একটি মেট্রোরেলে নির্বিঘ্নে হুইলচেয়ার নিয়ে প্রবেশ করা যাচ্ছে}

অথচ বহিঃবিশ্বের মত একটি পোর্টেবল র‌্যাম্প প্রতিটি স্টেশনে (স্টেশন মাস্টারের কাছে)/ ট্রেনে (গার্ডের কাছে) রাখার ব্যবস্থা করা গেলে খুব স্বাচ্ছন্দে এবং নিরাপদে ভ্রমণ করা যেত। আর নৌপরিবহনের অবকাঠামোগত দুর্বলতা এত প্রকট যে সেগুলো দূর করার আগে নৌপথে নিরাপদে ভ্রমনের কথা বিবেচনায় না আনাই ভাল।

সমাজে শারীরিক তথা হুইলচেয়ার নির্ভরশীল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পাশাপাশি মানসিক, বাক, দৃস্টি ও শ্রবণপ্রতিবন্ধীর মতো নানা ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিও রয়েছেন। ঘনবসতিপূর্ণ এই বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল পাবলিক পরিবহনে এই অসহায় ও দূর্বল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উঠা-নামা যে কতখানি কষ্টকর এবং গ্লানিময় তা একমাত্র ভুক্তভোগীই জানেন। সরকারী নির্দেশনায় প্রতিটি বাসে মহিলা, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ৯টি সীট সংরক্ষিত থাকার কথা বলা হয়েছে, অথচ বাস্তবচিত্র হচ্ছে, প্রতিবন্ধী দেখলেই পাবলিক পরিবহনগুলো এড়িয়ে যেতে চায় আবার কোনমতে ঊঠা গেলেও ভিতরের পরিবেশে বাস-কন্ডাক্টরকে বার বার ধর্ণা দিয়েও সেই সীটে আর বসা হয়ে উঠে না ।

আর এই প্রেক্ষাপটে আমাদের সামনে দুটো পথ খোলা আছে, প্রথমত পাবলিক পরিবহনে হুইলচেয়ার এ্যক্সেসিবল বাস সংযোজন করতে হবে এবং দ্বিতীয়ত সমস্ত ফিডার রোড তথা অলিগলি থেকে যাতে একজন প্রতিবন্ধী সহজে ও স্বাচ্ছন্দে যাতায়াত করতে পারেন সেজন্য হুইলচেয়ার এ্যক্সেসিবল কার ও এ্যাম্বুলেন্স রাস্তায় নামাতে হবে। এ কাজে সরকারকেই প্রথম উদ্যোগ নিতে হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রধান প্রধান রুটগুলোতে স্বল্পসংখ্যক বাস মডিফাই করে এখনই পথে নামাতে হবে। সেই সংগে পাবলিক পুলে যখনই কোন নতুন বাস সংযোজিত হবে তাতে হুইলচেয়ার এ্যক্সেসিবিলিটি নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এবং ব্যক্তিগনকে সুযোগ দিতে হবে প্রয়োজনে প্রণোদনা দিতে হবে যাতে তারা এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে এগিয়ে আসতেই পারেন তারা। উল্লেখ্য, হুইলচেয়ার এ্যক্সেসিবল কার বা এ্যম্বুলেন্স (যা অবশ্যই একটা স্বপ্ন) যেটার কথাই বলি না কেন সবকিছুই নির্ভর করবে মূলত ভাড়ার ঊপর এবং সেটা সিএনজি’র কাছাকাছি থাকতে হবে। অন্যথায় সেটা কর্পোরেট ব্যক্তিগনের ক্লিনিকে যাওয়া আসার বাহন হবে, সর্বসাধারনের নয়। বিষয়টা আরও নির্ভর করবে প্রাপ্যতার উপর। মূলকথা, স্বল্প সময়ের নোটিশে কম ভাড়ায় কার বা এ্যম্বুলেন্স পাওয়া না গেলে তা হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের কোনই কাজে আসবে না।

 

উন্নত বিশ্বে ব্যবহৃত এ্যাক্সেসিবল ট্যাক্সি ক্যাব ও বাস

এ দুটি ক্ষেত্রেই এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। সরকারের নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে একটি আন্তঃখাত ও সামগ্রিক কৌশল গ্রহণ করতে হবে, যাতে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে সরকারী সংস্থা, এনজিও ও সুশীল সমাজের অংশগ্রহণে একটা সফল প্রতিবন্ধীবান্ধব যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়।

প্রতিবন্ধী তথা ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিরা সমাজেরই একটি অংশ, তাদের রয়েছে নিজেস্ব ব্যক্তিত্ব, নিজেস্ব স্বকীয়তা। সমাজের অন্যান্য সকলের মতো তারাও সমাজ ও দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। এজন্য প্রয়োজন তাদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে যোগ্য করে গড়ে তোলার পাশাপাশি দক্ষতা প্রমাণের সুযোগ করে দেওয়া। আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার, জাতীয় আইন, সংবিধানিক অধিকার সবখানেই প্রতিবন্ধীদের জায়গা বাড়াতে সবাইকে আন্তরিক ও সচেষ্ট ভূমিকা রাখতে হবে, তবেই সেদিন বেশী দূরে নয় যেদিন বাংলাদেশ হয়ে উঠবে ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের জন্য বাসযোগ্য যা দক্ষিণ এশিয়া তথা বিশ্বের জন্য হবে এক অনুকরণীয় দৃস্টান্ত।

লেখক পরিচিতিঃ মেজর মোঃ জহিরুল ইসলাম। ১৯৯৮ সালে জাতিসংঘের অধীন অবজারভার মিশন জর্জিয়ায় (UNOMIG)  চীপ মিলিটারি অবজারভারের এডিসি হিসাবে কর্তব্যরত থাকা অবস্থায় অজ্ঞাত বন্দুকধারী কর্তৃক উপর্যপুরি গুলি বর্ষন ও গ্রেনেড হামলায় মেরুদণ্ডের স্পাইনাল কর্ডে এবং ডান হাতে গুলিবিদ্ধ হন এবং সেই সময় থেকে তিনি হুইলচেয়ার নির্ভরশীল জীবন যাপন করছেন। তিনি SIAB এর সাধারণ সদস্য এবং B-SCAN এর একজন একনিষ্ঠ শুভাকাক্ষী।

 

অটিস্টিক শিশুদের জন্য রোবট প্রযুক্তি

রোবট বলতে সাধারনত আমরা অনুভূতিহীন একটি যন্ত্র বলেই ধারণা করি। যেমন, তাদেরকে ব্যবহার করা হয় গাড়ি তৈরি করা, বোমা নিষ্ক্রিয়করন, কারখানায় পণ্য উৎপাদন ইত্যাদি নানারকম সুনির্দিষ্ট কিছু কাজে। কিন্তু বর্তমানে একদল গবেষক কাজ করছেন এই রোবট কে একটি ভিন্ন ধরনের কাজে ব্যবহার করার জন্য, আর তা হচ্ছে শিশুদের অটিজম চিকিৎসায় একে ব্যবহার উপযোগী করে তোলা। অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, এই ধরনের শিশুরা মানুষের সাথে সঠিকভাবে তাদের অভিব্যাক্তি ও অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে না। এরা সাধারন মানুষের চেহারার অভিব্যাক্তিও বোঝতে অক্ষম হয়ে থাকে, এমনকি কখনো কখনো তারা পরিচিত মানুষের চেহারাও চিনতে পারে না। যার ফলে মানুষের সাথে মেলামেশায় তারা আগ্রহী হয়ে উঠে না। “আই ট্র্যাকিং” বা অটিস্টিক শিশুদের চোখের অভিব্যাক্তি নিয়ে একধরনের গবেষণায় দেখা গেছে, এইধরনের শিশুরা মানুষের মুখের দিকে তাকাতে পছন্দ করে না বরং কোন বস্তুর দিকে তাকাতেই তারা বেশি সাচ্ছ্বন্দবোধ করে। আর এই চিন্তা থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা” প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরী করেছেন “ব্যান্ডিট” ও “জেনো” নামক এক ধরনের বিশেষ রোবট। গবেষকেরা দেখতে পেয়েছেন যে, অটিস্টিক শিশুরা খুব সহজেই এই ধরনের রোবট দ্বারা আকর্ষিত হয়। অটিস্টিক শিশুরা রোবটের সাথে যেইভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করতে পারে, সাধারন মানুষের সাথে তারা তা করতে পারে না।

অটিজম চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, অটিস্টিক শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার জন্য তাদেরকে খেলার সাথী দেয়া এবং সাধারন মানুষের সাথে মেলামেশায় আগ্রহী করে তোলা। সেই উদ্দেশ্যে গবেষকেরা “ব্যান্ডিট” রোবটে যোগ করেছেন নড়নচড়ন ও বিভিন্ন মানবীয় অভিব্যাক্তি প্রকাশে সক্ষম এমন মুখ যা সহজেই শিশুদেরকে আকর্ষণ করে, ক্যামেরাযুক্ত চোখ ও সেন্সরযুক্ত সংবেদনশীল হাত। রোবটের ক্যামেরাযুক্ত চোখ অটিস্টিক শিশুর সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে আর এর বিশেষ সেন্সরটি ব্যবহৃত হয় শিশুর সাথে খেলার সুবিধার জন্য। অর্থাৎ শিশুটি যদি রোবটটি হতে দূরে চলে যায়, তাহলে যাতে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে এর কাছাকাছি চলে আসতে পারে। “ব্যান্ডিট” রোবট খুব সহজেই অটিস্টিক শিশুর অভিব্যাক্তি অনুকরণ ও খেলা করতে পারে। রোবটটি যেমন তার চেহারায় সুখ-দুঃখের অভিব্যাক্তি ফুটিয়ে তুলতে পারে সেই সাথে শিশুকে গান শোনানো, মুখে বাবল তৈরি করা ইত্যাদি কাজ আনায়েসেই করতে পারে। এই রোবটটির বাহ্যিক গঠন এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে একে খুব বেশি যান্ত্রিক বলে মনে না হয়, আবার একদম মানুষের মতও মনে না হয়। অর্থাৎ অটিস্টিক শিশুটি যাতে রোবটটিকে একটি বন্ধুবৎসল কৃত্রিম খেলার সাথী মনে করতে পারে।

আরেক ধরনের রোবট হচ্ছে “জেনো”। এর বাহ্যিক গঠনে যুক্ত হয়েছে “ফ্লাবার” নামক এক বিশেষ ধরনের পলিমার, যার ফলে একে স্পর্শ করলে মানুষের চামড়ার মতই অনুভূতি পাওয়া যায়। মোটরের সাহায্যে এর মুখাবয়ব এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে এটি প্রায় দশ রকমের মানবীয় অভিব্যাক্তি ফুটিয়ে তুলতে পারে। গবেষকেরা এই ধরনের রোবটকে এমন এক ধরনের সফটওয়্যারের নিয়ন্ত্রণে এনেছেন, যা কিনা অটিস্টিক শিশুদের আচার-আচরণ ও অভিব্যাক্তির ভাল ও খারাপ দিকগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ণয় করতে সাহায্য করে, যা শিশুদের অটিজম চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।

গবেষকেরা দেখতে পেয়েছেন যে, এই ধরনের রোবটের সহায়তায় অটিস্টিক শিশুরা ধীরে ধীরে খেলতে ও কথা বলতে শিখছে। এমনকি তারা সাধারন মানুষের সাথেও মিশতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। এই ধরনের প্রযুক্তি ভিত্তিক চিকিৎসায় সহজেই অটিস্টিক শিশুরা নিয়মিতভাবে তাদের অনুভূতিগুলো আদান-প্রদান করতে শিখে আর সেই সাথে সামাজিক আচরণগুলোর প্রতিও সক্রিয় হয়ে উঠে।

প্রকৃতপক্ষে, অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসায় ব্যাবহৃত এই ধরনের রোবট তাদের মানসিক উন্নয়নে একধরনের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। কারন এই ধরনের রোবট কখনো তাদের প্রতি বিরূপ আচরণ করে না বরং এটি অক্লান্তভাবে অটিস্টিক শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য কাজ করে যায়।

(ওয়েবসাইটের তথ্য অবলম্বনে)

সাইদুর রহমান সুজন

যন্ত্রকৌশল বিভাগ

৪র্থ বর্ষ, চুয়েট

sujan1380@gmail.com

 

দিনাজপুরে বাংলা ইশারা ভাষা দিবস-২০১৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা

সর্বক্ষেত্রে বাংলা ইশারা ভাষার ব্যবহার-নিশ্চিত করবে শ্রবণ প্রতিবন্ধী মানুষের প্রবেশাধিকার উপপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে দিনাজপুর বধির ইনিস্টিটিউট মিলনায়তনে ৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৪ রোজ শুক্রবার সকাল ১০.০০ টায় জেলা সমাজসেবা কার্যালয়, দিনাজপুর, দিনাজপুর বধির ইনিস্টিটিউট, কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (সিডিসি), দিনাজপুর-এর যৌথ আয়োজনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন নাজনীন আকতার, প্রধান শিক্ষক, দিনাজপুর বধির ইনিস্টিটিউট। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জনাব মো: আহাসানুল হক চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর বধির ইনিস্টিটিউট-এর সহকারী শিক্ষক মো: সুজাউদ্দৌলা, আনন্দ কুমার বিশ্বাস, মোজাহারুল ইসলাম, রাবেয়া বেগম এবং কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (সিডিসি), দিনাজপুর-এর ডিজএ্যাবিলিটি ইনক্লুশন ফ্যাসিলিটেটর (ডিআইআরএফ) শৈলেন চন্দ্র রায়। আলোচনা সভায় বক্তাগণ বাংলা ইশারা ভাষা দিবস এর তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন যে, আমাদের মোট জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশ বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। তাদের সাথে স্বাভাবিক যোগাযোগ করতে ইশারা ভাষা অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ উপর্যুক্ত করার জন্য বাংলা ইশারা ভাষা পরিবার থেকে সমাজ, সমাজ থেকে রাষ্ট্রের সকল মানুষকে আয়ত্ত করার মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাষাগত অধিকার প্রতিষ্ঠা করা আজ সময়ের দাবি। তাই আসুন সকলেই সংশ্লিষ্ট প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় একাত্ব হয়ে কাজ করি। আলোচনা সভায় শতাধিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

 

প্রতিবেদক-

যাদব চন্দ্র রায়

নির্বাহী পরিচালক

কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (সিডিসি),

দিনাজপুর ও জেলা স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য,

প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র, দিনাজপুর

মোবাইল: ০১৭১৬৮৭৮৮৪৪

ইমেইল: cdcjadabroy@yahoo.com

 

স্টিফেন হকিং

স্টিফেন হকিং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এর গণিতবিদ্যার লুকাসিয়ান অধ্যাপক।সেই সাথে তিনি আন্তর্জাতিক বেষ্ট সেলার “কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস” এর লেখক। বর্তমানে তিনি ক্যামব্রিজে অবস্থিত Centre for Theoretical Cosmology এর গবেষণার মহাপরিচালক। তার রচিত অন্যান্য উল্লেখ্য বই হল Brief History of Time(কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস), the essay collection Black Holes and Baby Universe এবংThe Universe in a Nutshell  ইত্যাদি।

১৯৬৩ সালে হকিং মোটর নিউরন নামক জটিল রোগে আক্রান্ত হন এবং তার হাতে মাত্র দুই বছর ছিল।তা সত্তেও তিনি ক্যামব্রিজে পাড়ি জমান এবং প্রফেসরিয়াল ফেলো হন Gonville College Ges Caius College এ।সেই সাথে তিনি মেধাবী গবেষক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।১৯৭৯ সাল থেকে তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এর গণিতবিদ্যার লুকাসিয়ান অধ্যাপক যে পদে ১৬৬৩ সালে ছিলেন স্যার আইজাক নিউটন।হকিং এর এক ডজন এর ও বেশি সম্মাননা ডিগ্রি আছে এবং ১৯৮২ সালে তিনি ব্রিটিশ সম্মাননা সি বি ই অর্জন করেন।তিনি এখানকার একজন ফেলো এবং US National Academy of Science এর একজন  সদস্য। স্যার আলবার্ট আইনস্টাইন এর পর স্টিফেন হকিং কেই অন্যতম শ্রেষ্ঠ তাত্ত্বিক পদার্থবিদ হিসেবে গণ্য করা হয়।

বিয়ের প্রস্তাব

ইসমাত জাহান অন্তরা

 

খুব আকর্ষণীয় সুন্দর মুখ দেখে ছেলেটি ফেসবুকে তাকে অ্যাড রিকোয়েস্ট পাঠাল।

একদিন পর……

হ্যালো।

মেয়েটি প্রায় ১৫ মিনিট পর উত্তর দিল- আসসালামুয়ালাইকুম।

আপনি কি করেন?

কিছু না সারাদিন বসে থাকি অনলাইনে।

ও.. কেন?

কারণ আমার অন্য কোন কাজ নেই।

আমি কি আপনার ফোন নাম্বারটা পেতে পারি?

মেয়েটি নাম্বার দিল……

 

কিছুক্ষণ পর ছেলেটি ফোন করল…

আপনাকে আমি সরাসরি একটা কথা বলতে চাই।

মেয়েটি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, আমি তো আপনাকে চিনতে পারলাম না।

ছেলেটি বলল আমি আবির। আপনি পলা তো?

জী, আমিই পলা। আপনি?

ঐ যে কিছুক্ষণ আগে যে নাম্বার দিলেন……

ও আচ্ছা বলুন কি বলতে চান…

আমি আপনাকে অনেক পছন্দ করি, আমি আপনাকে ভালবাসি।

কতটুকু জানেন আপনি আমার সম্পর্কে?

কিছুই না, আর আমি কিছু জানতেও চাই না।

তবে…

পলা আমি আপনাকে অনেক দিন ধরেই…

কি ছবি দেখে?

হু…

পলা হাসল।

 

 

প্লিজ পলা হাসবেন না আচ্ছা আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই (ব্যাকুল হয়ে)।

আপনি সত্যিই ভালবাসেন তো আমাকে?

বললাম তো আমার কিছুই জানার নেই, আপনি যেমন মেয়ে আমি তেমনই ……

আচ্ছা আমাকে দেখে আপনি ভয় পাবেন, আপনাদের ভাষায় আমি পঙ্গু মেয়ে।

আমি আপনার সাথে দেখা করবো। বলুন কোথায় আসতে হবে?

নিন, ঠিকানা লিখুন। আপনি আমার বাসায় আসবেন? পারবেন না সরাসরি আমার বাবাকে প্রস্তাব দিতে?

ওকে আমি আসবো আগামী পরশুদিন বিকেল ৪টা বাজে।

এখন তাহলে আমি রাখি।

কেন, প্লিজ আর একটু কথা বলুন, প্লিজ!!

আমি এখন অনলাইন এ কিছু কাজ করবো…

আপনার কাজ টা কি ?

আমি আমার ভাই এর বইগুলো সব টাইপ করি আর মাঝে মাঝে মন শান্তির জন্য অনলাইন এ বসি।

ও আচ্ছা…

ঠিক আছে তাহলে দেখা হবে আমি কি আপনাকে তুমি করে বলতে পারি পলা?

জী, পারেন আমার তাতে কোনো সমস্যা নাই……

 

 

তোমার কি আমার সম্পর্কে কিছু জানার আছে?

আপনি আমাকে খুব ভালবাসেন?

আমার তো নিজের ওপর এ নিয়ে সন্দেহ নেই, আমি তোমাকে আমার থেকেও বেশি ভালবাসি।

তাহলে দেখা হলেই আমি আপনার সব জানবো।

তুমিও আমাকে তুমি করে বল।

পলা বলল, আগে দেখা করি তারপর সব হবে। কিন্তু আমি আপনাকে আমার সম্পর্কে সব সত্যি বলেছি।

আচ্ছা আমি আসবো।

আচ্ছা আমি রাখি…

 

 

আবির তো পুরাই অস্থির…

চট জলদি ফোন দিল বন্ধু কে,

হ্যালো !!! বৃষ্টি কই তুই?

এই তো বাসায় কেন?

পলা আমাকে ওর বাসায় যেতে বলেছে।

কি বলছিস?!! কোন পলা, এটা আবার কোথা থেকে এল?

ঐ যে মেয়ে টা ফেসবুকে……

উফফফ!!!! আবির!!! আজকাল কত ফেক আইডি থাকে তুই কি গাধা?! (বিরক্ত হয়ে)।

নারে দোস্ত্ আমি ওকে আমার চাইতেও ভালবাসি।

আচ্ছা ঠিক আছে। কি করতে চাস এখন?

আমি ওর জন্য কিছু কিনতে চাই। প্লিজ তুই আমার সাথে শপিং এ যাবি?

ওকে বল কখন?

কাল সকালে…

আচ্ছা যাব। এখন রাখি?

পরদিন সারাদিন ইচ্ছে মত শপিং করতে বের হল বৃষ্টি আর আবির।

বৃষ্টিঃ দোস্ত পলার হাইট কত রে?

আবিরঃ জানি না রে জিগেস করা হয়নি।

বৃষ্টিঃ আজিব তুই না ওকে এত ভালবাসিস! আর হাইট জানিস না?

আবিরঃ না।

বৃষ্টিঃ কেমন প্রেম করিস?

আবির বিরক্ত মুখে বলল ওহ আগে আমি ওকে দেখি নি তো। কালই ওর বাবাকে বিয়ের প্রস্তাব দেবো।

বৃষ্টিঃ (অবাক হয়ে) বলিস কি ? এত বড় মজনু কবে হলি তুই? বাসায় বলেছিস?

আবিরঃ না। জানাবো পরে।

বৃষ্টিঃ তুই শুধু মুখ দেখেই পাগল হয়ে গেলি?

আবিরঃ বেহেশতের হুরও ফেইল। এত্ত সুন্দর!!!

বৃষ্টিঃ ওকে এখন যাইরে, অনেক দেরী হল চল উঠি।

 

 

পরদিন……

আজ সেই আকাঙ্ক্ষিত দিন…

 

আবির একটার পর একটা শার্ট বের করে আয়নাতে দেখছে নিজেকে কি পড়লে তাকে ভাল লাগবে……

উত্তেজনায় নিজেকে সামলাতেও পারছে না আবার ভয়ও লাগছে কারণ বিয়ের কথা বলবে তাও আবার কন্যার বাবার সাথে……

আবির খুব ভেবে মাথা ঠাণ্ডা করে অনেক উপহার আর মিষ্টি নিয়ে গেল পলাদের বাড়িতে।

দরজায় বেল বাজতেই মাঝারি বয়সের এক মহিলা এসে দরজা খুলে দিল।

আবিরঃ জী… আমি আবির। পলা……

ভাবীঃ ও আচ্ছা… পলা আমাকে বলে রেখেছে, আমি ওর ভাবী। আপনি একটু বসুন, আমি ওকে ডাকছি।

কিছুক্ষন পর তিনি অনেক খাবার নিয়ে এলেন সামনে……

প্লিজ নিন……

আবির বলল, পলা…

ও আসছে……

 

 

আবির খুব উত্তেজনা অনুভব করছে। মনে হয় পলা সাজগোজ করছে। একদিকে ভালই হয়েছে ও বাসার সবাইকে বলে রেখেছে। আচ্ছা পলা কি শাড়ি পড়বে? ওকে কি অনেক সুন্দর লাগছে……উফফ!!! কি ভাবছি এই সব! আমি তো সত্যিই পাগল হয়ে গিয়েছি…

ভাবীঃ কি হল তুমি তো কিছুই খাচ্ছ না। খাও, এগুলো পলাই রেঁধেছে।

আবিরঃ ও রাঁধতে জানে?

ভাবীঃ হ্যাঁ, ওর হাতের রান্নার স্বাদ ই আলাদা, খাও ভাই। আমি যাই ওকে আসতে বলি।

আবির দেখল সত্যি পায়েসটা অসাধারণ…

কিন্তু অতিরক্ত উত্তেজনায় কিছুই খেতে পারল না।

কিছুক্ষণ পর…

আবির এতটাই হতভম্ব নিজের অজান্তে কখন যে দাঁড়িয়ে গেল নিজেই টের পেলো না…

 

পলাঃ কি হল আপনি বসুন, দাঁড়ালেন যে!!

আবির বসতে বসতে বলল, না মানে…

আমি আপনাকে বলেছিলাম আমি আপনাদের সমাজে যাকে বলে পঙ্গু, আপনি বিশ্বাস করেন নি। আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী। জন্মের পর শিশুরা যখন হাঁটতে শেখে আমি তখন থেকে হুইলচেয়ার ব্যবহার করি।

আবির দেখছে পরীর মত সুন্দর, যেন বেহেশত এর হুর। এমন একটা মেয়ে কি করে..!!!

আবির এর মুখে একটাও কথা নেই।

আমি জানি। আপনার অবস্থা আমি বুঝি… আমাকে দেখে সবাই… কিন্তু সত্যিটা আমার কেউ মানতে চায়ও না, আর বিশ্বাসও করে না তাই আমি আপনাকে বাড়িতে ডেকেছি।

আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন।

আমার বিয়েও ঠিক হয়েছিল, বর যাত্রী এসে ফেরত যায়। আসলে আমার নিত্য সঙ্গী এই হুইলচেয়ারটিসহ সবাই আমাকে মেনে নিতে পারে না…

আবির মাথা নিচু করে কাঁদছে…

আবির আপনি কাঁদবেন না। আমরা খুব ভাল বন্ধু হয়ে থাকবো। আপনার জীবনে অনেক কেউ একজন আসবে নিশ্চয়!

আবির চুপ করেই আছে।

পলা আধো কাঁপা চাপা কান্না গলায় বলল জন্ম থেকেই আমি ভাই আর ভাবীর কাছেই মানুষ। তারা আমাকে অনেক বেশী ভালবাসেন।

আবির আপনি আমার অনেক ভাল বন্ধু হয়ে থাকবেন। নিজেকে আমার জন্য দয়া করে কষ্ট দেবেন না।

আবির কোনও কথা না বলে চলে গেল…

পলা নীরবে দেখল।

খুব আলতো করে ওর এক চোখ দিয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল।

 

Translate | অনুবাদ