বাড়ি4th Issue, September 2013বরিশালের প্রতিবন্ধী শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে পিছিয়ে

বরিশালের প্রতিবন্ধী শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে পিছিয়ে

গোলাম কবির মজুমদার (বরিশাল সংবাদদাতা): প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর এর প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচী প্রকল্পে সকল শিশুর সম অংশগ্রহণের লক্ষ্যে একীভূত শিক্ষা, উপবৃত্তি বিশেষত অবকাঠামোগত উন্নয়নকে পরিকল্পনার আওতাভুক্ত করা হলেও সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই চলছে বরিশালের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। বাকেরগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম টরাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি র‌্যাম্প নির্মিত হলেও বরিশালের কোন বিদ্যালয়েই প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর দেখা মেলে নি।

স্থানীয় বিদ্যালয়গুলো সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গিয়েছে, চাহিদাভিত্তিক অবকাঠামোগত ব্যবস্থা না রাখার ফলে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা এসব বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হতে পারছে না । সেই সব বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকারের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ভর্তির নির্দেশ, একীভূত শিক্ষা ব্যবস্থা এবং প্রতিবন্ধিতা বিষয়েও তেমন কোন ধারণা নেই তাদের। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ, স্কুল ম্যানেজিং কমিটি সদস্যদের কোনো রকম মাথাব্যথাও নেই। বছরের প্রথমদিকে শিশুরা স্কুলে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রদর্শন করলেও প্রতিবন্ধিতার অজুহাতে কর্তৃপক্ষের অনিচ্ছাই প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায় তাদের শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটাতে।

গ্রামাঞ্চলের দিকে বেশ কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো যেগুলো মাত্র কয়েক বছর আগে নির্মিত হয়েছে সেসবের কোনটিই প্রতিবন্ধীবান্ধব নয়। এদিকে পূর্ব সাগরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবুল বাশার বলেন, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের প্রবেশগম্যতা সম্পর্কে তাদের কিছু জানানো হয় নি। নতুন নির্মিত কিছু বিদ্যালয়ে হয়ত থাকতে পারে। তবে বরিশালের শুধুমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে প্রতিবন্ধীবান্ধব করতে ইউএনডিপি কর্তৃক একটি প্রকল্প হাতে নেয়ার কথা জেনেছেন তিনি। সেটির বাস্তবায়ন হলে হয়ত এই বিদ্যালয়গুলোতে টয়লেট ও র‌্যাম্প স্থাপন সম্ভব হবে।

সচেতন অভিভাবকগণ উদ্বিগ্ন হয়ে দিন কাটাচ্ছেন দেখে এমন অবস্থার অবসান ঘটাতে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মধ্যে প্রতিবন্ধী শিশুদের চিহ্নিত করতে বরিশাল এ্যাসোসিয়েশন ফর রিসার্চ ডেভলাপমেন্ট এ্যান্ড রাইটস ইমপ্লিমেন্টেশন ফর ডিজেবিলিটিস (আদ্রিদ) নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক কাজ করেছেন। শিশুর অভিভাবকদের সচেতন করা এবং একত্রিত করে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে শিক্ষা, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে সমাজের মূল ধারায় নিয়ে আসাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। এ ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা দিয়েছেন বরিশাল ইউনিসেফ । প্রায় সাড়ে তিনশো প্রতিবন্ধী শিশুকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন তারা এবং “অপরাজেয় বাংলাদেশ” নামের অপর একটি প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই শিশুদের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেছে। এদিকে এই বিদ্যালয়টির ১৫ থেকে ২০ জন বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে বাছাই করে ২০১৫ সালের জানুয়ারী মাসে মূলধারার বিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর জন্য ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছেন। বরিশাল ইউনিসেফের চাইল্ড প্রোটেকশন অফিসার মমিনুন্নেছা শিখা এ প্রতিবেদককে জানান, ইউনিসেফের আর্থিক সহযোগিতায় “অপরাজেয় বাংলাদেশ” উপজেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে এ বিষয়ে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। তিনি আরও বলেন, উক্ত বৈঠকগুলোতে উপজেলা শিক্ষা অফিসের বক্তব্য মতে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সরকারি বিদ্যালয়ের ভর্তি করানোসহ অন্যান্য ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, কিন্তু বিদ্যালয়গুলো পরিদর্শনে গিয়ে আমরা কোন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর দেখা পাই নি। তিনি মনে করেন, বরিশাল প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সুদৃষ্টি দিলে ২০১৫ সালের মধ্যে অনেক প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো সম্ভব।

এদিকে চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সকল জেলায় প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র স্থাপন বরাদ্দ ছিল ১২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। এছাড়াও বিগত বছরগুলোর বাজেটে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাহিদা ও বিশেষ চাহিদা পূরণার্থে কিছু বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে এবং বরাদ্দও বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু তুলনামূলকভাবে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি এবং স্কুলের জন্য মঞ্জুরীর ক্ষেত্রে বরাদ্দ বৃদ্ধি পায়নি। প্রতিবন্ধী মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, চলাচল, সামাজিক মর্যাদা ও দুর্যোগকালীন সময়ে তার নিরাপদ আশ্রয় ইত্যাদি বিষয় নিশ্চিত করতে হলে প্রতিবন্ধিতার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়গুলোর বাজেটে যথাযথ প্রতিফলন থাকা প্রয়োজন। তা না হলে কখনোই মূলধারায় প্রতিবন্ধী মানুষের উন্নয়ন সম্ভব নয় এমনটি মনে করছেন অভিভাবকগণ।

সর্বশেষ

চাকরি নামক সোনার হরিণ নিয়ে যখন তামাশা!

প্রতিবন্ধী মানুষের জব প্লেসমেন্ট সংক্রান্ত সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ বিজনেস এন্ড ডিজেবিলিটি নেটওয়ার্ক (বিবিডিএন) এর সাথে বি-স্ক্যান’র গত ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তিনমাসের একটি চুক্তি হয়।...

মাসিক আর্কাইভ

Translate | অনুবাদ