বাড়ি11th Issue, June 2015আলোকিত অঝোরা

আলোকিত অঝোরা

 

তান্নি চৌধুরী

 

মেয়েটার ভারী শখ ছিল সে প্রজাপতির সাথে ভাব জমাবে। রঙিন ডানায় আদর বুলিয়ে দেবে। মধ্যরাতে জেগে থাকা ঝিঁঝিঁদের শব্দে রূপকথার গল্প বুনবে। ফুটফুটে জোছনার ঢল নেমেছে বাইরে। পুরনো ইচ্ছেগুলো আবার জীবন্ত হয়ে উঠেছে আজ ওর। ভীষণ ইচ্ছে করছে নক্ষত্রের মিলন মেলায় শামিল হতে।

 

কিন্তু একচিলতে সামর্থ্যটুকু সাধ্যের কাছে একেবারেই ক্ষুদ্র। তবুও অনেক কষ্টে জানালার পাশে চলে আসে সে। খোলা জানালার ওপাশটাও রংহীন ফিকে; শুধু নিকষ আঁধারটাই চোখে পড়ে। এই শহরটাতে বুঝি কোনোদিন জোছনা হয় না! পাখির কূজনে ভোর হয়না! জানালা খুলে একটি বার রাতের বেলা বাইরে তাকালে দুচোখ কেবল অন্ধকারেই মিশে যায়। আর দিনের বেলা আলোতে চোখে পড়ে অসভ্যের মতো দাড়িয়ে থাকা অসহনীয় দালানগুলো। মাঝে মাঝে যান্ত্রিকতা ছেড়ে প্রকৃতির সান্নিধ্যে যাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠত সে। ধুলোমাখা মেঠো পথে হেঁটে বেড়ানোর স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকতো। যেখানে পথের দুধারে বৃক্ষের সবুজ পাতা চোখ জুড়িয়ে যায়। উড়ে আসা বালুকণা সারা শরীরে পুলক জাগায়। মাথার উপর উড়ে যাওয়া শ্বেত-বলাকা পালক রেখে যায় পায়ের কাছে। আর উদাস হাওয়ার বেপরোয়া দুষ্টুমী অনুভূতিকে রাঙিয়ে দেয়। সেই ভাবনারা আবারো বাসা বাঁধে ওর মনে। সব ইচ্ছেগুলোই যেন আজ বাঁধনহারা হয়ে উঠেছে। ত্রয়োদশীর চাঁদ বীরদর্পে আলো ছড়াচ্ছে রাতের বুকে। অথচ ওর উঠোনে এক টুকরো জোছনা নেই! ইট কাঠের খাঁচা ভেঙ্গে বাইরে আসার সাধ্য নেই এতটুকু। যেখানে ইচ্ছের নানা রং, নানা ঢং, আকাক্সক্ষার প্রশস্ত সীমানা সেখানে সাধ্যের পরিসর এতো অল্প কেন?

 

সেই কবে এক বর্ষায় পড়ন্ত বিকেলে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজেছিল সে। অন্যরকম এক ভালোবাসা ছুঁয়ে গিয়েছিল সেদিন। সেই সাথে আবেগী কিছু স্বপ্ন, নির্মল আনন্দ আর অকৃত্রিম প্রেম। সেদিনই বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে অজান্তে নিজের নাম দিয়েছিল ‘অঝোরা’। উচ্ছ্বাসে ভরপুর চঞ্চল কিশোরী অঝোরা। সেও অনেক পুরনো কথা। সেই থেকে আজ অবধি বৃষ্টির আলিঙ্গনে যাওয়া হয় নি তার। না পারার মাঝেই হারিয়ে গেল কৈশোর। চপলতাও অনেকটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। তারুণ্যের নেশা এখন শুধু প্রতিবাদী করে তোলে। না পারার সাথে ব্যর্থ তর্কে লিপ্ত হয়। যৌবনের উচ্ছ্বাস বুঝি কৈশোরের অপর পীঠ। কৈশোরে শুধু আবেগ আর স্বপ্ন। আর যৌবনে সেই আবেগ ও স্বপ্নের কারণ সন্ধান করা, সেই সাথে সফল করার প্রাণান্ত চেষ্টা। ভাবনার ঘুড়িগুলো আজ বড্ড ওড়াওড়ি শুরু করেছে অঝোরার মনে।

 

এবার জানালা থেকে একটু সরে আসে সে। টেবিলের ওপর রাখা রং তুলির বাক্সটা হাতে নেয়। ধীরে ধীরে জলরং মিশিয়ে ঝকঝকে আর্ট পেপারটায় তুলি চালায় অপটু হাতে। ভাবনার আকাশে আচমকা কিছু কালো মেঘ ভিড় করেছে। ভুবনটা সংকীর্ণ থেকে আরো সংকীর্ণতর হয়ে আসতে চাচ্ছে। এসব না পাওয়ার হিসেব সংক্রান্ত ভাবনাগুলো সত্যিই খুব খারাপ। মনটাকে কেবল ভারাক্রান্তই করতে জানে। ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি ঝুলিয়ে রেখে আনমনে তুলির আঁচড় কাটে সে। মেয়েটা বসে আছে হুইলচেয়ারে। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্য তাকে ঘিরে রেখেছে। হাতের মুঠোয় সূর্যটাকে আঁকড়ে ধরেছে সে। অভূতপূর্ব এই ছবিটা অঝোরা নিজেই এঁকেছে।

 

হতবাক হয়ে নিজের আঁকা ছবিটার দিকে তাকিয়ে রয় অঝোরা। আর্ট পেপারের ছবিটা যেন একেবারেই জীবন্ত। কি নিপুণভাবে এঁকেছে সে! তার পোশাকে প্রজাপতিরা আল্পনা এঁকেছে। ঘাস ফড়িংয়ের দল খেলা করছে তার পায়ের কাছে। প্রকৃতির সব রূপ, গন্ধ তারই চারপাশে। আর সে! আপন তেজে সূর্যটাকে মুঠোবন্দী করে আরো বেশি তেজী হয়ে উঠেছে। ছবিটার দিক হতে চোখ সরিয়ে নেয় সে। অন্যরকম আশার আলোতে হতাশা নামের বস্তুটা যেন বিলীন হয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। না পারাটাকে অন্যভাবে পারা সম্ভব করে তোলার দৃঢ় শপথ পেয়ে বসে তাকে। কখন রাত পেরিয়ে গেছে জানা নেই। ফজরের আযান শোনা যাচ্ছে। একটু পরেই রাঙ্গা হয়ে উঠবে নতুন সূর্য।

 

সে অপেক্ষায় জানালার দিকে তাকিয়ে থাকে অঝোরা।

 

সর্বশেষ

চাকরি নামক সোনার হরিণ নিয়ে যখন তামাশা!

প্রতিবন্ধী মানুষের জব প্লেসমেন্ট সংক্রান্ত সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ বিজনেস এন্ড ডিজেবিলিটি নেটওয়ার্ক (বিবিডিএন) এর সাথে বি-স্ক্যান’র গত ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তিনমাসের একটি চুক্তি হয়।...

মাসিক আর্কাইভ

Translate | অনুবাদ