বাড়ি11th Issue, June 2015সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা ও বিজ্ঞপ্তি প্রসঙ্গে

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা ও বিজ্ঞপ্তি প্রসঙ্গে

 

এস এম আবদুল্লাহ আল মামুন

 

আমাদের দেশের অধিকাংশ নিবন্ধন, বিসিএস ইত্যাদি নিয়োগ পরীক্ষাগুলোতে প্রতিবন্ধী মানুষের সমস্যা বিবেচনা করা হয় না। তাদের সুবিধা অনুযায়ী পরিবেশও সৃষ্টি হয় না সব জায়গায়। বেশির ভাগ পরীক্ষা কেন্দ্র ঢাকা জেলা বা বিভাগ ভিত্তিক হয়ে থাকে ফলে প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের পক্ষে ঢাকা বা জেলা শহরগুলোতে গিয়ে সেখানে থেকে নিয়োগ পরীক্ষা দেয়াও সম্ভবপর হয়ে ওঠে না।

প্রতিবন্ধী মানুষের একা চলাচল এদেশে কি ভয়াবহ পরিমাণ সমস্যা তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। আর সেখানে আত্নীয় পরিচিত বা স্বজন না থাকলে দূর প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে গিয়ে নিয়োগ পরীক্ষা দেয়ার সময়কার অবস্থা নিশ্চয় সহজেই অনুমেয়।

 

প্রথমত যানবাহনে প্রবেশের অসুবিধা, তার ওপর সেখানে তাদের বসার ব্যবস্থা নেই আবার থাকলেও যানবাহনের কর্মচারীরা অনেক সময় বসতে দিতে চায় না। কোন কোন ক্ষেত্রে দীর্ঘপথ অতিক্রম করে ঢাকায় পৌঁছে পরীক্ষা দিয়ে ঐদিনই নিজ গন্তব্যে ফিরে আসাও অসম্ভব। সেক্ষেত্রে উদাহরণ স্বরূপ; প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ শিক্ষার্থী এবং প্রতিবন্ধী মানুষ যাদের বড় শহরে যাওয়ার পুর্ব অভিজ্ঞতা নেই। সেখানে নেই কোনো আত্মীয় বা পরিচিতজন। হোটেলে রাত কাটানোরও অনেকের সামর্থ্য নেই এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধী মানুষ যারা একা ঠিকমত চলাফেরা করতে পারেন না তাদের সাথে সহযোগি হিসেবে আরও দু’একজন মানুষ এলে থাকা খাওয়ার খরচও বেড়ে যায়। আবার অনেক অভিভাবক সন্তানদের একা দূরে বিশেষত ঢাকার মতো জনবহুল শহরে পাঠাতে সাহস পান না। এমনিতেই পরীক্ষার্থীদের মধ্যে এই যে অনিশ্চয়তা, অচেনা-অজানা, আশঙ্কা আর মানসিক অস্থিরতাকে বাড়িয়ে তোলে। এভাবে ছোটাছুটি করায় মানসিকভাবে স্থির থেকে চাকরি পরীক্ষাটিও ভালোভাবে দেয়া সম্ভবপর হয় না। সেক্ষেত্রে তারা ঢাকায় বা বিভাগীয় শহরগুলোতে গিয়ে চাকরির পরীক্ষা দেবেন কিভাবে?

 

আমি রংপুর কারমাইকেল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাস্টার্স করা বেকার শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। আমার প্রতিবন্ধিতা নয় সামাজিক প্রতিবন্ধকতাই আমাকে বেকার করে রেখেছে এবং এমন আরও কোটি যুবক যারা মাস্টার্স পাস করেও বেকার বসে আছে। আমার কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা লিখতে বসেছি আজ পাঠকদের উদ্দেশ্যে।

 

গত ১২ অক্টোবর, ২০১২ নীলফামারী জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষক পদের জন্য অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৮৮ জনের তালিকায় আমিসহ তিনজন শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রার্থী উত্তীর্ণ হই। পরবর্তীতে ২৭ মার্চ, ২০১৩ তারিখের মৌখিক পরীক্ষায় আমরা অংশগ্রহণ করি। উক্ত পরীক্ষায় আমাকে (আমার রোলঃ ২৯৫০) প্রশ্ন করা হয়, আমি ব্ল্যাকবোর্ডে লিখতে পারব কিনা, যা সত্যি একজন প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য বিব্রতকর। ভাইভা বোর্ডে এ ধরনের প্রশ্নের অর্থ হলো তাদের মানসিকভাবে আঘাত করা। তবুও আশা ছিল রাষ্ট্রের সংবিধান অনুসারে সকল যোগ্য প্রার্থীর মত আমারও চাকরি হবে। কারণ আমার বাবা সৈয়দপুর উপজেলার প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। সে অনুযায়ী প্রতিবন্ধী ও পোষ্য কোটা প্রযোজ্য হলেও আমার ক্ষেত্রে তা মানা হয় নি। ০৩ জুন, ২০১৩ তারিখে প্রকাশিত নিয়োগপ্রাপ্ত ২৭ জনের নামের তালিকায় আমার নামসহ কোনো প্রতিবন্ধী মানুষের নাম আসে নি। শারীরিক প্রতিবন্ধিতা আমার অক্ষমতা বা অযোগ্যতা তো হতে পারে না তবুও সব দিকে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আমি চাকরি থেকে বঞ্চিত হলাম। এদিকে আমাদের দেশের সংবিধানে সকল নাগরিকের যোগ্যতা অনুয়ায়ী চাকরি পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করেছে!

 

এদের দেশে অধিকাংশ জনগোষ্ঠী দরিদ্র। বেকারত্ব আমাদের প্রধান সমস্যা। একজন বেকার যার কোনো উপার্জন নেই; তাকে ১০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক ড্রাফট পে-অর্ডার ইত্যাদির মাধ্যমে চাকরির জন্য মেধা মূল্যায়ন ফি দিতে হয়। আবার সেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দুই-তিন হাজার টাকা খরচ করে পরীক্ষা দেয়ার জন্য রাজধানী বা বড় বড় শহরে যেতে হয়। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত অভিভাবকদের পক্ষে বারেবারে এভাবে অর্থের শ্রাদ্ধ করা তাদের প্রতিবন্ধী সন্তানদের জন্য সেও কি সম্ভব?

 

পরীক্ষা দেয়ার পর চাকরি পাওয়ার বিষয়টি কিছুটা সহজ হলে হয়তো ভোগান্তিটা এতটা সমস্যা হত না। এছাড়া সরকারিভাবে বেকারত্ব দূরীকরণে চাকরির নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনে পে-অর্ডার ও ব্যাংক ড্রাফট ফি কমানোর পাশাপাশি শুধু রাজধানীতে মূল্যায়ন পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন না করে বরং দেশের বিভাগীয় শহরে বা পার্শ্ববর্তী কয়েকটি জেলার সমন্বয়ে একটি পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা গ্রহণের সুযোগদানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

 

বর্তমান সরকার দেশের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রদানের বিষয়ে খুবই সচেতন ও অঙ্গীকারাবদ্ধ। অতএব সার্বিক দিক বিবেচনা করে প্রতিবন্ধী ও সকল নিয়োগ প্রার্থীদের সুবিধার্থে কয়েকটি জেলার সমন্বয়ে চাকরির নিয়োগ পরীক্ষাগুলোর কেন্দ্র স্থাপন করার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণ করছি এবং স্থানীয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলোতে প্রতিবন্ধী মানুষের কথা বিবেচনা করতে অনুরোধ জানাচ্ছি।

 

লেখকঃ দিশারী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্ব-সংগঠন (ল্যাম দল) পৌর দল,

সৈয়দপুর, নীলফামারী।

সর্বশেষ

চাকরি নামক সোনার হরিণ নিয়ে যখন তামাশা!

প্রতিবন্ধী মানুষের জব প্লেসমেন্ট সংক্রান্ত সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ বিজনেস এন্ড ডিজেবিলিটি নেটওয়ার্ক (বিবিডিএন) এর সাথে বি-স্ক্যান’র গত ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তিনমাসের একটি চুক্তি হয়।...

মাসিক আর্কাইভ

Translate | অনুবাদ