বাড়ি14th Issue, March 2016দুর্দশায় নীলফামারীর একমাত্র বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুদের স্কুল

দুর্দশায় নীলফামারীর একমাত্র বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুদের স্কুল

 

এস. এম. আবদুল্লাহ আল-মামুন, নীলফামারী প্রতিনিধি

শ্রেণিকক্ষ থেকে শুরু করে খাতা, কলমসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত নীলফামারী জেলার একমাত্র বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুদের স্কুলটি। নেই পর্যাপ্ত শিক্ষা উপকরণ, নেই ডিজিটাল ক্লাসরুম, নেই যাতায়াত সুবিধা। এক কথায় ভেঙে পড়েছে স্কুলটির শিক্ষা কার্যক্রম।

বর্তমানে প্রস্তুতিমূলক, প্রাক্-প্রাথমিক, প্রাথমিক, বৃত্তিমূলক ও গৃহভিত্তিক ১১৬ শিক্ষার্থী রয়েছে বিশেষায়িত এই প্রতিষ্ঠানটিতে। কিন্তু প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য এখানে নেই স্ট্যান্ড সাইকেল, নেই প্যারালাল বার। ভাঙাচোরা ঘরে দেয়া হচ্ছে পাঠদান। পর্যাপ্ত টেবিল-চেয়ার না থাকায় শিক্ষার্থীদের বসতে হয় গাদাগাদি করে।

 

নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামে ২০০১ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫ জন শিক্ষার্থী ও ১২ জন শিক্ষক নিয়ে এর কার্যক্রম শুরু হয়। জেলা সদর ছাড়াও কিশোরগঞ্জ উপজেলা এবং অন্যান্য স্থান থেকে প্রতিবন্ধী মানুষেরা নিয়মিত আসছে প্রতিষ্ঠানটিতে। ২০০৮ সালের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতনের দায়িত্ব নেয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এর আগে স্থানীয় ব্যক্তিদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছিল।

শিক্ষকরা বেতন পেলেও শিক্ষার্থীরা এখনো আসেনি উপবৃত্তি কিংবা স্কুল ফিডিং প্রকল্পের আওতায়। অভাব রয়েছে পরিবহনসুবিধা, স্থান ও আসবাবের। দূর থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহনসুবিধা না থাকায় নিয়মিত আসছে না অনেকে। একটি স্কুল ভ্যান থাকলেও অপর একটি শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ভটভটি দিয়ে আনা-নেয়া করা হচ্ছে এই শিক্ষার্থীদের। এতে ভীষণ ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে তারা। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একজন চালকের মাসিক বেতন পরিশোধ করা হয়। অপর চালকের বেতন আসে শিক্ষকদের বেতন কেটে।

 

অভিভাবক হামিদা বেগম ও শিল্পী বেগম জানান, ‘শিশুরা স্কুলে আগ্রহ পায় না। পড়াশোনার পাশাপাশি সঙ্গীতসহ বিনোদনের ব্যবস্থা থাকলে তারা সেখানে পুরো সময় কাটাতে পারত। প্রতিষ্ঠাতা ছফিদুল ইসলাম বলেন, ‘যে উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি শুরু করেছিলাম, সেটার সফলতা এখনো দেখতে পারিনি। নানা সংকটে প্রয়োজনীয় শিক্ষা কার্যক্রম দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। সরকার সুদৃষ্টি দিলে প্রতিষ্ঠানটির চেহারা বদলে যেতে পারে।’

প্রধান শিক্ষক মুকুল হোসাইন বলেন, ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে জেলা প্রশাসনের দেড় লাখ টাকা ব্যয়ে কিছু উন্নয়নকাজ করা হয়েছিল। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরও কিছু আর্থিক সহযোগিতা করেছিলেন।

 

স্কুলকে আধুনিক মানে উন্নীত করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, নানা সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত আসতে অনীহা প্রকাশ করে। তাদের স্কুলে আসা যাতে কোনোভাবে ব্যাহত না হয়, সে জন্য প্রয়োজন স্কুল ফিডিং আর উপবৃত্তির সুবিধা। এ ছাড়া ডিজিটাল পদ্ধতিতে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করা গেলে শিক্ষার্থীরা নতুনভাবে গড়ে উঠবে।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপযোগী শিক্ষা উপকরণ প্রদান, উপবৃত্তি ও স্কুল ফিডিংয়ের আওতায় আনার বিষয়টি নিয়ে চেষ্টা চলছে। আশা করি, শিগগিরই এ বিষয়ে কোনো সমাধান পাব।’

সর্বশেষ

চাকরি নামক সোনার হরিণ নিয়ে যখন তামাশা!

প্রতিবন্ধী মানুষের জব প্লেসমেন্ট সংক্রান্ত সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ বিজনেস এন্ড ডিজেবিলিটি নেটওয়ার্ক (বিবিডিএন) এর সাথে বি-স্ক্যান’র গত ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তিনমাসের একটি চুক্তি হয়।...

মাসিক আর্কাইভ

Translate | অনুবাদ