বৃষ্টি চৌধুরী
যেখানে-সেখানে প্রবেশাধিকারের অভাবে চার দেয়ালের নিভৃতে গুমরে ওঠে দুঃখবোধ, তাই বুঝি তুমি ‘সুবর্ণ নাগরিক’?!
আচ্ছা! ক্রাচ বগলে দাবিয়ে, হুইলচেয়ারের চাকায় গড়িয়ে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে বেড়াও বলেই কি তুমি ‘সুবর্ণ নাগরিক’?!!
মৌলিক অধিকারগুলো অর্জনের তীব্র লড়াইয়ে হাঁটুতে গড়িয়ে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষালয়েও যেতে হয়! দৃষ্টিশক্তি নেই, তবু ধাক্কা খেয়ে গণপরিবহনে উঠতে হয়?! শারীরিক সীমাবদ্ধতা, সমাজের চোখে অবজ্ঞা! তুমি পারবে না কিছুই!!
তবু তোমার পরিচয়পত্রে ‘সুবর্ণ নাগরিক’ নামের সিলমোহর লাগানোই উচিত!
উম্… হুম্, ঠিকই তো! স্কুলে স্কুলে নেই বাংলা ইশারা ভাষা, ব্রেইল বই পৌঁছায় না। তাতে কী, হয়তো শুনতে পাও না, মনের ভাব প্রকাশে অক্ষম। তাই তুমি যদিও সমাজবিচ্ছিন্ন, তাতেও কিচ্ছুটি নয়। তুমি ‘সুবর্ণ নাগরিক’ বটে!
তোমার শিক্ষা দরকার নেই। চাকরি করে তুমি করবেটা কী!! ঘর থেকে বের হওয়া ঝামেলা। মানুষের সামনে তুমি যেয়ো না। রোজ এত বন্ধুর আনাগোনা কিসের গন্ধে? বিয়ে! প্রেম! ওসব তোমার নয়।
তুমি ‘সুবর্ণ নাগরিক’-ই!! দয়া-দাক্ষিণ্যে মাথা পেতে নেওয়া ছাড়া কী কোনো গতি আছে এই রূঢ় বাস্তবতার যুগে। সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত হবার ভয়টাই যে বেশি। তোমাদের আসলে অপমান-আত্মসম্মানবোধ এসব থাকতে নেই। আর এ জন্যই তোমরা ‘সুবর্ণ নাগরিক’ নামের সিলমোহরওয়ালা পরিচয়পত্র গলায় ঝোলাতে বাধ্য!