বাড়িঅদম্যপ্রতিবন্ধী মানুষকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর কত ভর্তির লড়াই করতে হবে?

প্রতিবন্ধী মানুষকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর কত ভর্তির লড়াই করতে হবে?

স্টাফ রিপোর্টার – খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। হৃদয় সরকার নামের এক শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর এবং তার মায়ের অদম্য যুদ্ধের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই? আমরা ভেবেছিলাম হয়তো  এখানেই অবসান হবে অদম্য প্রতিবন্ধী মানুষের উচ্চশিক্ষা নেয়ার ক্ষেত্রের লড়াই। কিন্তু আবার যেন একি কাহিনীর পূনারাবৃত্তি ঘটতে চলেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। শারীরিক প্রতিবন্ধী (হুইলচেয়ার ব্যবহারকারি) মেয়েটি তার অদম্য ইচ্ছে আর মনোবলের জোরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মত উচ্চ পর্যায়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েও ভর্তি হতে পারছে না প্রবেশগম্যতা, সংগতিপূর্ণ বন্দোবস্তের অভাব এবং কর্তৃপক্ষের অসহযোগী মনোভাবের কারণে।

 

শারীরিক প্রতিবন্ধী রাজিয়া সুলতানা রুমকি, জন্মগতভাবেই হাঁটতে পারেন না। রাজশাহী নগরীর পাঠানপাড়া এলাকার পিকআপ ভ্যান চালক বাবা খন্দকার হাফিজুর রহমান এবং মা গৃহিণী নাজনীন বেগমের একমাত্র মেয়ে রুমকি । রাজশাহী বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৬ তে  বিজ্ঞান বিভাগে ৪.৩৯ নম্বর পেয়ে এসএসসি এবং সরকারি মহিলা কলেজ থেকে ২০১৮ তে মানবিক বিভাগ থেকে ৪.০৮ পেয়ে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হন। বেঞ্চে বসে লিখতে পারতেন না বলে মাটিতে শুয়ে পরীক্ষা দিতেন। পরীক্ষার স্থান নীচতলায় নামিয়ে আনার যুদ্ধ তো ছিলই তারপরও মায়ের কোলে চড়ে স্কুল কলেজের গন্ডি পেরিয়েছেন।

 

এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এ ২০১৮-১৯ সেশনে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন উর্দু বিভাগে। পরে আরবি বিভাগে অটো মাইগ্রেশন হয়। যে বিভাগের সব ক্লাসই হয় শহীদুল্লাহ ভবনের তিন – চার তলায়। অথচ রুমকি ভাইভাতে সর্বোচ্চ ৭৫% নম্বরই পেয়েছিল। রেজাল্ট অনুযায়ী তার বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস বিভাগই পাওয়ার কথা। আরবি বিভাগে প্রতিদিন ক্লাস না করে পাশ করা সম্ভব নয় আবার তার মায়ের বয়স হওয়ায় তার পক্ষেও প্রতিদিন মেয়েকে কোলে করে তিন/চারতলা উঠানামা করা আর হবে না।

 

রুমকি চাইছে যেন তাকে নীচতলার কোন একটি বিভাগ যেমন বাংলা অথবা ইতিহাস বিভাগে পড়ার সুযোগ করে দেয়া হয় । সেখানকার ক্লাসগুলো উপর নীচ মিলিয়ে হলেও সে কিছু ক্লাস অন্তত করতে পারবে আবার কর্তৃপক্ষ যদি বিবেচনা করে তবে প্রতিদিন ক্লাস না করলেও তার পড়া চালিয়ে যেতে অসুবিধা হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে সে এ বিষয়ে আবেদন জানিয়েছে কিন্তু সেখান থেকে তাকে অন্য বিভাগে ভর্তি করানো যাবেনা বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তাহলে কি রুমকির বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হবে না?

 

প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ অনুযায়ি শিক্ষার সকল স্তরে অংশগ্রহণ, শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রসহ প্রযোজ্য সকল ক্ষেত্রে ‘প্রয়োজনীয় স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য উপযোগী পরিবেশ ও ন্যায্য সুযোগ সুবিধা’ (reasonable accommodation) প্রাপ্তি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ভর্তি সংক্রান্ত বৈষম্যের প্রতিকারের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। তারপরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এসব ক্ষেত্রে এখনো কেন অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে না?

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য জানিয়ে দিয়েছেন অন্য কোথাও ভর্তি হতে, এখানে আর কোন ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। নিয়মের বাইরে গিয়ে অন্য কোন বিভাগ দেয়া যাবে না। সেটা একমাত্র উপাচার্য মহোদয় বিশেষ বিবেচনায় করতে পারেন, তবে উনি এই মূহুর্তে রাজশাহীতে নেই। এদিকে ভর্তির শেষ সময় ফুরিয়ে আসছে।

 

কিন্তু রুমকির ভাষ্য অনুযায়ি, আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান বলেছেন, চাইলেই আর্টস ফ্যাকাল্টির অন্য কোন বিভাগে তাকে দেয়া সম্ভব।

 

রুমকির উচ্চশিক্ষা নিশ্চিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

 

সর্বশেষ

চাকরি নামক সোনার হরিণ নিয়ে যখন তামাশা!

প্রতিবন্ধী মানুষের জব প্লেসমেন্ট সংক্রান্ত সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ বিজনেস এন্ড ডিজেবিলিটি নেটওয়ার্ক (বিবিডিএন) এর সাথে বি-স্ক্যান’র গত ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তিনমাসের একটি চুক্তি হয়।...

মাসিক আর্কাইভ

Translate | অনুবাদ