বাড়ি19th Issue, March 2019প্রতিবন্ধী মানুষের ঐক্য বাধা দরকার - মানিকগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা

প্রতিবন্ধী মানুষের ঐক্য বাধা দরকার – মানিকগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা

অপরাজেয় প্রতিবেদক

চিকিৎসকের একটুখানি অবহেলায় সানজিদার আলো-ঝলমলে পৃথিবীটা হয়ে গেল আঁধারে ভরা। তাই বলে থেমে যাওয়ায় বিশ্বাসী ছিলেন না সানজিদা আলম নিজের আলোয় নিজেকে চিনিয়েছেন তিনি। বর্তমানে মানিকগঞ্জ জেলা শিক্ষা কার্যালয়ে সহকারী পরিদর্শক পদে ব্যস্ত জীবন কাটাচ্ছেন।

চার ভাইয়ের একমাত্র বোন সানজিদা। বাবার সেনাবাহিনীতে চাকরির সুবাদে বেড়ে ওঠেন দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে। জীবনে এগিয়ে যাওয়ার পথে পরিবারের বিশেষ কোনো সহযোগিতা পাননি তিনি। তবে যা করতে চেয়েছেন বাধাও পাননি তাতে। পথ সুগম করার দায়িত্বটা নিজের ঘাড়েই পড়েছিল। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় ভুল চিকিৎসায় দৃষ্টি হারান তিনি। দৃষ্টিশক্তিহীন মেয়েকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে চাইতেন না বাবা। পরবর্তীতে সানজিদার দৃঢ় উদ্যম এবং আশপাশের পরিচিত মানুষের সহযোগিতায় ভর্তি হন মিরপুর গার্লস আইডিয়াল বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়ে বদরুন্নেসা গার্লস কলেজে তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক এবং শিক্ষা বিষয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। চাকরির জন্য চেষ্টা করছিলেন। এর মধ্যেই একদিন জানতে পেলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী পরিদর্শক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কথা। আবেদন করেন এবং নির্বাচিত হয়ে যান।

সানজিদা তার এই সফলতার জন্য বন্ধুদের এবং প্রতিবন্ধী মানুষের সংগঠন অনেকখানি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছে বলে জানালেন। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য কর্মরত বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে তিনি চাকরি করেছেন। এ ছাড়া ভিজ্যুয়ালি ইম্পেয়র্ড পিপলস্ সোসাইটি (ভিপস)-এর সঙ্গে যুক্ত আছেন ২০১২ সাল থেকে।

সানজিদার মতে এদেশের রাস্তা, হাসপাতাল, বিদ্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব করতে সরকার যেটুকু পদক্ষেপ নিচ্ছে, তাতে আমূল কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। সরকারি চাকরি পেতে প্রতিবন্ধী মানুষেরা ভুক্তভোগী হচ্ছে। তিনি নিজের উদাহরণ দিয়ে বলেন, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় ভালো ফল করলেও নিয়োগ নিয়ে পোহাতে হয় নানান ঝামেলা। প্রতিবন্ধিতা কোটায় নিয়োগের জন্য তাকেও মাস তিনেক ছোটাছুটি করতে হয়েছিল সমাজসেবা অধিদফতর এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এছাড়াও তিনি বললেন, তার কর্মস্থল প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য সম্পূর্ণ প্রবেশগম্য নয়। ইমারত বিধিমালা মেনে কেউ ভবন তৈরি করে না। সরকারের এ বিষয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। পরিবহন ব্যবস্থাও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব নয়। যানবাহনগুলোতে নেই র‌্যাম্প, হুইলচেয়ার রাখার জায়গা, আবার যে কয়েকটা আসন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ থাকে, সেগুলো সম্পর্কেও কেউ সচেতন নন। চাকরির সুবাদে সানজিদাকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে যেতে হয়। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে খানিকটা ইতিবাচক পরিবর্তন থাকলেও অবকাঠামোগত সমস্যা এবং শ্রæতিলেখকসহ কিছু ভোগান্তি রয়েছে যা শিক্ষা অর্জনে বড় বাধা বলে তিনি মনে করেন। প্রতিটি জেলায় ন্যূনতম একটি বিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বড় পরিসরে আবাসিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কাজ করা দরকার বললেন সানজিদা। এছাড়াও প্রতিবন্ধী শিশুর মানসিক দৃঢ়তা বৃদ্ধিতে পরিবারকে আরও বেশি দায়িত্বশীল হওয়ার তাগিদ দেন তিনি বলেন এতে শিশুটি আত্মবিশ্বাস নিয়ে বেড়ে উঠবে। ঘরের বাইরে বের হবে। সমস্যার মুখোমুখি দাঁড়াবে। তবে আমলাতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় সরকারের উচ্চপদস্থ ক্ষমতাসীনদের নেতিবাচক ধারণা ভাঙতে এবং কঠোর চাপ প্রয়োগ করতেই প্রতিবন্ধী মানুষদের ঐক্যবাধার আহবান করেন সানজিদা।

সর্বশেষ

চাকরি নামক সোনার হরিণ নিয়ে যখন তামাশা!

প্রতিবন্ধী মানুষের জব প্লেসমেন্ট সংক্রান্ত সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ বিজনেস এন্ড ডিজেবিলিটি নেটওয়ার্ক (বিবিডিএন) এর সাথে বি-স্ক্যান’র গত ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তিনমাসের একটি চুক্তি হয়।...

মাসিক আর্কাইভ

Translate | অনুবাদ