বাড়ি4th Issue, September 2013হাজারো প্রতিবন্ধকতার মাঝেও বাসযোগ্য একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন

হাজারো প্রতিবন্ধকতার মাঝেও বাসযোগ্য একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন

দেশের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রকৃত পরিসংখ্যান নিরূপনের দাবী তাদের দীর্ঘদিনের। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যাগত, প্রকারগত এবং পূর্ণাঙ্গ বিবরণ নিশ্চিত করা গেলেই ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার প্রতিবন্ধিতার ধরণ অনুযায়ী তাদের জন্যে সরকারের সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং সামাজিক ও নাগরিক এই বৈষম্য দূরীকরণে এই পরিসংখ্যান অত্যন্ত জরুরী। ভবিষ্যত প্রতিবন্ধী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর অবকাঠামোগত বা বাসযোগ্য বাংলাদেশ তৈরীতে আমাদের এই নিজস্ব জরীপটি সফল হলে একীভ’ত শিক্ষা ও সহায়ক যাতায়াত ব্যবস্থা, কর্মসংস্থানের পাশাপাশি স্পেশাল স্কুল, প্রশিক্ষণ ও পূনর্বাসন কেন্দ্র, রিসার্চ সেন্টার ইত্যাদি সুপরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতেও সরকারের সহায়ক হবে। তাই ২০১১ সালের জাতীয় আদমশুমারীতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিক সংখ্যা নিরূপনে সরকারের ব্যর্থতার পর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ বছরের পহেলা জুন হতে শুরু হওয়া প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরীপ কার্যক্রমের খবরে অনেক আশায় বুক বেঁধেছিল দেশের অবহেলিত এই জনগোষ্ঠী।

কিন্তু তাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্নকেই যেন ধুলিস্যাৎ করতে অনেকটা নীরবেই চলছে শনাক্তকরণ জরীপ কার্যক্রম। অভিযোগে প্রকাশ সরকার কর্তৃক মোটা অংকের অর্থ পেলেও দুর্বল প্রচারণা, নানা অব্যবস্থাপনা ও মাঠ কর্মীদের দুর্ব্যবহারের ফলে সচেতন প্রতিবন্ধী মানুষের ক্ষোভ উপচে পড়ছে।

মূলত দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যেমন নিজেদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন নন তেমনি উপরতলার অভিভাবকগণের মাঝেও অসচেতনতা কিংবা চক্ষুলজ্জা ভীতি বিদ্যমান। এদেশের বেশীরভাগ মানুষ তাঁর প্রতিবন্ধী সন্তানটিকে লুকিয়ে রাখতে চান। আর এ কারণেই প্রকৃত সংখ্যা বের করে আনার জন্য সরকার সংশ্লিষ্ট মহলের প্রয়োজনীয় কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী ছিলো। সকলের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণের নিমিত্তে রেডিও, টিভি ও সংবাদপত্রে ব্যাপক প্রচার প্রচারণার পাশাপাশি জরীপ কাজে নিয়োজিত মাঠ কর্মীদের সঠিক প্রশিক্ষণের অভাব এই ব্যর্থতার জন্য মূলত দায়ী। অনেকে মনে করছেন জরীপ ফর্মটিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমস্যা সংক্রান্ত প্রশ্ন আরো ব্যাপকভাবে তুলে আনা উচিৎ ছিলো।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩ এখন জাতীয় সংসদ কর্তৃক অনুমোদনের প্রতীক্ষায় দিন গুনছে। এতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত, ভোট প্রদান এবং নির্বাচনে অংশ নেয়া অর্থাৎ প্রার্থী হওয়ার সুযোগ ছাড়াও রয়েছে তাদের অধিকার ও মর্যাদার সুরক্ষা, শারীরিক-মানসিক উন্নয়ন, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ নিশ্চিতের বিষয়টি। সর্বজনীন প্রবেশগম্যতা বাস্তবায়নের বিষয়টি আরো দৃঢ়ভাবে উঠে এসেছে নতুন আইনে। রয়েছে আইন অমান্যকারীদের জন্য কঠিন শাস্তির বিধান। অপরদিকে গত তিন বছর ধরে লাল ফিতায় আবদ্ধ হয়ে আছে প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনকে আলাদা অধিদপ্তরে রূপান্তরের দাবীটিও। এছাড়াও জাতীয় ইমারত নির্মান বিধিমালা ২০১৩ খসড়া বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে নিয়োজিত সংস্থাগুলোকে অন্তর্ভুক্তকরণের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বিশেষত সরকার পরিচালিত নীতি নির্ধারণ সংশ্লিষ্ট মহলে তাদের দায়িত্বশীল পদে উপস্থিতির গুরুত্ব অপরিহার্য। এ কথা অনিস্বীকার্য যে অ-প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চেয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাই তাদের নিজ নিজ সমস্যা ও তা সমাধানের উপায় ভালো বুঝেন। কিন্তু শিক্ষা ও নানা ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকার দরুণ সর্বত্র নিশ্চিত হচ্ছে না তাদের অংশগ্রহণ। নিজেদের অধিকার আদায়ের এ লড়াইয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শুধু ঐক্যবদ্ধ হলেই চলবে না তাদের আরো অনেক বেশী সোচ্চার হতে হবে।

সর্বশেষ

চাকরি নামক সোনার হরিণ নিয়ে যখন তামাশা!

প্রতিবন্ধী মানুষের জব প্লেসমেন্ট সংক্রান্ত সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ বিজনেস এন্ড ডিজেবিলিটি নেটওয়ার্ক (বিবিডিএন) এর সাথে বি-স্ক্যান’র গত ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তিনমাসের একটি চুক্তি হয়।...

মাসিক আর্কাইভ

Translate | অনুবাদ