বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে লেখা।
আমি ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাষ্টার্স এর শিক্ষার্থী। প্রতি বৃহষ্পতিবার ঢাকায় এসে শুক্রবার সারাদিন ক্লাস শেষে আবার রাতের ট্রেনে বাড়ি ফিরি। বৃহষ্পতিবার বিমান বন্দর স্টেশনে পৌঁছেই পরের দিনের টিকেট কেটে ফেলি।
আমার মৃদু শারীরিক প্রতিবন্ধিতার দরুন প্রায়শই বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। বেশিক্ষণ হাঁটতে বা দাঁড়িয়ে থাকতে সমস্যা, তাই টিকেট কাউন্টারে লম্বা লাইন দেখলে সাধারণত প্রতিবন্ধী সনদটা ব্যবহার করি আমি। সেদিনও লম্বা লাইন দেখে সামনে এগিয়ে টিকেট চাইলে কাউন্টারে কর্মরত ব্যক্তি আমাকে লাইনে দাঁড়াতে বলেন। আমি সমস্যার কথা বুঝিয়ে বলার পরে লাইনে দাঁড়ানো অন্যান্যরাও আমার পক্ষ নিলেন।
কিন্তু প্রতিবন্ধী সনদটি দেখে তিনি কিছুই বুঝতে পারলেন না। সম্ভবত তার কোন ধারনাই নেই প্রতিবন্ধী সনদ বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কোটা ব্যবস্থা সম্পর্কে। আমি তাকে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করি, “সরকার প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য রেলওয়েতে আলাদা কিছু ব্যবস্থা রেখেছে। যেমন স্টেশনে প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য আলাদা কাউন্টার থাকে, প্রতিবন্ধী কোটায় ২০টা করে সিট রিজার্ভ থাকে যা ২৪ ঘন্টা আগেও টিকেট করা যায়। বিমানবন্দর ছোট স্টেশন তাই হয়ত আলাদা কাউন্টার নেই কিন্তু কোটা ব্যবস্থায় টিকেট তো পেতে পারি আমি। আংকেল প্লিজ দেখেন একটু!”
প্রতি উত্তরে তিনি যা বললেন তাতে আমি হতভম্ব। বললেন, “ফাইজলামি করার জায়গা পান না! এইসব ভন্ডামি কই শিখছেন!! এতই যদি আইন জানেন, তাহলে যান আপনার সরকারকে আইসা টিকেট দিতে বলেন।”
আমি আর কিছুই বলতে পারিনি। লাইনে দাঁড়ানো কেউ এই কথায় বিদ্রুপের হাসি হাসে। অনেকে আবার আমার পক্ষে প্রতিবাদ করে। সেদিন অনেক বুঝিয়েও কোন লাভ হয় নি। মাথা নিচু করে সেখান থেকে এসে পড়ি। ভাবি, প্রতিবন্ধিতা নিয়ে জন্মেছি বলেই আজ এত উপহাস!
অপরাধটা কি আমার! নাকি বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তার, যিনি তার দায়িত্ব পালনে ব্যার্থ হয়েছেন !?
এ.এইচ.এম নাহিদ কবীর,
৩৬৮ কসবা কুটির, তৃতীয় তলা, কান্দপাড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।