আল আমিন
মনে পড়ে ঠিক বছর তেরো আগের কথা
আমার বয়স সাত কি আট বছর হবে
বয়সের দাবী থাকলেও হাঁটতে ভাল লাগে না – নয় পারতাম না।
মায়ের কোল থেকে স্বজনদের – আবার মায়ের কোলে
যখন কোন কোল-ই ব্যস্ততাকে ফেলে আসতে পারতো না
আমার বসবাস ঘরে অথবা উঠোনের মাটিতে।
বেড়ে উঠতে লাগল আমার দেহ – সেই সাথে আমার চিন্তা শক্তি
ভাবলাম এভাবে কোল থেকে মাটিতে গড়াগড়ি আর না
আমাকে দাঁড়াতে হবে, জয় করতে হবে পৃথিবী
আলোকবর্তিকা নিয়ে যেতে হবে তাদের কাছে …
যারা আমার দলের অন্তর্ভূক্ত – যাদের কোল নেই, আছে মাটি
পৃথিবী সুন্দর কিন্তু আলোর ঝলকানি দেখেনি।
ভাল লাগা – মন্দ লাগার কথা বলতে পারে না প্রিয়তমার কাছে
একটি ফুল ছুঁয়ে দেখেনি নিজ হাত দিয়ে।
ধরণীর কোন চিন্তায় যারা চিন্তিত নয়
গাঁয়ের পথ ধরে হাঁটে নি নকশি কাঁথার মাঠে
যাদের বসবাস রাস্তা-বাজার-লঞ্চ ঘাটে।
বিছানায় শুয়ে একটা কথা শোনার অপেক্ষায়
পৃথিবীর স-ব মানুষ সমান, স-বা-ই আপন
তাদের কাছে যেতে চাই, কেননা আমি তাদের দলে।
বাছাই করা কিছু কাঠের টুকরা এনে নিজের মত করে
গড়ে তুললাম আমৃত্যু বন্ধু দু’জনকে
যাদের উপর ভর করে কুঁড়ি বছরে পৌঁছেছি
মুছে দিতে চাইছি ভিন্ন মানুষের নয়নের জল।
বন্ধু দু’জনের প্রাণ নেই, কথা বলে না, শুধু চেয়ে থাকে
আমি ওদের আদর করে বগল তলায় রাখি
কখনো দূরে রাখি না মনের খেয়ালে।
দু’জনের সাথে সম্পর্ক চামড়া ও মাংসের মত
আমি বিশ্বাস করি যদি এদের প্রাণ থাকতো
দাবী করতো এমন সব – যা মিটাতে পারতাম না।
হয়তো মাটিতে ফেলে অভিমানে চলে যেতো সবার মত করে
কেউ বন্ধু দু’জনের গায়ে হাত দিলে খুব রাগ হয়
যদি এদের বলে দেয় – এভাবে অন্যের ভার বইবি না
কেননা প্রাণ আর অপ্রাণের মধ্যে এইটুকু তফাত।
বন্ধু ছাড়া আমার চলে না, চলবে না
আমৃত্যু ওদের উপর ভর করে চলতে চাই পৃথিবীর পথে
ওদের দাবী একটাই – আমাদের দেহে প্রাণ দিওনা
যদি তোমাকে ছেড়ে চলে যাই !
শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে ওদের আঁকড়ে ধরে
চিৎকার করে বলে ওঠি – তোমরা আমার ভাই-বন্ধু-স্বজন
এরাও আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে – শপথ নিলাম
আমরা আমৃত্যু তোমার সঙ্গে আছি।।