সচেতনতামূলক এবং প্রতিবন্ধকতা বিষয়ক তথ্য সারাদেশের আপামর জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ট্যাবলয়েড সাইজের ত্রৈমাসিক “অপরাজেয়” পত্রিকাটির প্রকাশনা ২০১২ এর ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে সাফল্যের সাথে ২য় বর্ষ শেষ করে ৩য় বর্ষে পদার্পন করলো। আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মীবৃন্দকে যারা অকুন্ঠ সমর্থন ও আপ্রাণ সহযোগিতা দিয়ে গেছেন নিয়মিত। বিশেষত পত্রিকা জগত সম্পর্কে অনভিজ্ঞ বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধী মানুষ যারা ঘরে বসেই লেখা সংগ্রহ, সম্পাদনা থেকে সমস্ত কার্যক্রমে অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন এই পত্রিকাটিকে সত্যিকার অর্থেই প্রতিবন্ধী মানুষের কন্ঠস্বর হিসেবে উপস্থাপন করাতে তারা অভিবাদনের দাবীদার।
সমাজের মূলধারায় সচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যম রাখতে পারে বিশাল ভূমিকা, যার অভাববোধ থেকেই এই ব্যতিক্রমধর্মী প্রকাশনাটির মাধ্যমে বি-স্ক্যান চেষ্টা করছে বাংলাদেশের অধিকার বঞ্চিত প্রতিবন্ধী মানুষের সমস্যাগুলোর সমন্বয় সাধন করে সেসবের সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে এবং তাদের বিশেষত প্রতিবন্ধী মানুষের দ্বারা পরিচালিত স্বাধীন স্বউদ্যোগী সংগঠনগুলোকে (ডিপিও) একত্রিত ও সুসংগঠিত করে সমন্বিতভাবে অধিকার অর্জনের আন্দোলন গড়ে তুলতে। প্রতিবন্ধী মানুষের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে।
“Sustainable Development: The Promise of Technology”
এই প্রতিপাদ্যে ৩ ডিসেম্বর সারা বিশ্বব্যাপী পালিত হলো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক দিবস। এদিকে আবারও একবার একীভূত সমাজ বিনির্মাণের অঙ্গীকার নিয়ে “টেকসই উন্নয়ন: প্রযুক্তি প্রসারণ” এই প্রতিপাদ্য সারাদেশ ব্যাপী পালিত হয়েছে দিবসটি।
সিআরপিডি সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইন্টারন্যাশনাল ডে অব পারসন উইথ ডিজেবিলিটি অর্থাৎ “প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক দিবস” যা বিগত কয়েক বছর ধরে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে। এদেশে “আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস” হিসেবেই পালিত হয় দিনটি। প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার বা মর্যাদা সুরক্ষায় তাদের দীর্ঘদিনের দাবী বাংলাদেশেও এই নামে দিবসটি পালন এর উদ্যোগ নেয়া হোক। যদিও এই দাবীর বাস্তবায়ন আজও হয় নি। প্রতিবন্ধী মানুষের বেশিরভাগ চাহিদাগুলো ধূলোয় গড়ায়। এদের বেশিরভাগই শিক্ষা, চাকুরি, বিনোদন, যাতায়াত ও সর্বত্র প্রবেশাধিকার বঞ্চিত হয়েও সমাজের মূলধারায় অংশ নেয়ার তীব্র আগ্রহে দিন কাটাচ্ছেন যারা তাদের অনেকের মাঝেও নিজেদের অধিকার সম্পর্কে রয়েছে অসচেতনতা-কুন্ঠাবোধ, যেমনটা সমাজে তাদের যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ বিদ্যমান আজও। এই সন্দেহ দূর করতে প্রতিবন্ধী মানুষের নিজেদেরই এগিয়ে আসা উচিৎ। কিন্তু প্রতিবন্ধী মানুষ কি ভাবতে শিখেছে তাদের জীবন ও মান উন্নয়নমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণে আজও অ-প্রতিবন্ধী মানুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত তারা এবং এই অবস্থার আশু পরিবর্তন প্রয়োজন। দীর্ঘ সময় ধরে নারীরা নিজেদের জন্য আন্দোলন করে প্রমাণ করেছিল তারা পুরুষ শাষিত সমাজ থেকে মুক্তি চায় এবং আজ তারা সফল। নিজেদের সিদ্ধান্ত আজ তারা নিতে সক্ষম এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থাতেও তারা ক্ষমতায়নের স্বাদ ভোগ করছে। কিন্তু প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় প্রতিনিধিত্বের চর্চা বা সংস্কৃতি এদেশে শুরু হয়নি তাতে কি তাদের নিজেরও কিছুটা দায় থেকে যায় না? নিজেদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার ও সমাজের সর্বস্তরে, বিশেষত রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের অধিকার তাদের রয়েছে এটা তাদের বিশ্বাস করে এগুতে হবে। নারী সংগঠনগুলোর জন্যে স্বতন্ত্র নারী অধিদফতর নারীর চাহিদা নিশ্চিতের আন্দোলনে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেছে। তারা নিজেদের ক্ষমতায়নে কার্যকরি ভূমিকা রাখতে পেরেছে। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সামাজিক উন্নয়ন ও অধিকারের বিষয়গুলো সুনিশ্চিত এর লক্ষ্যে মাথা ঘামাতেও নিজেদেরই সোচ্চার হতে হবে।
সরকারের আন্তরিক সহযোগিতায় প্রতিবন্ধী মানুষেরা তাদের স্বপ্ন পূরণের যাত্রায় দ্রুত এগিয়ে যাবে এটাই প্রত্যাশা।