বাড়ি10th Issue, March 2015দয়া নয় সম্মান চাই যা আমার অধিকার

দয়া নয় সম্মান চাই যা আমার অধিকার

-আল-আমিন

 

খোদার দানে যদি থাকে সুখের কল্যাণ এটাই আমাদের খুশির বিষয়, তাতে আমরা মহিয়ান। তোমরা কি আমাদের হীন মনে কর? আমরা কভু হীন নয়। বঞ্চনা আর বৈষম্য বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধী মানুষের ঐতিহাসিক সংগ্রাম শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর দেশে দেশে নিজেদের অধিকার আদায়ে প্রতিবন্ধী মানুষেরা নানাভাবে সংঘটিত হবার চেষ্টা করেছে এবং করে যাচ্ছে।

 

পৃথিবী ব্যাপী প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার বিষয়ক আন্দোলনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সনদ সিআরপিডি। যা ২০০৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহিত হয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন হিসেবে এটি সারা বিশ্বে কার্যকর হয়। বাংলাদেশ ২০০৭ সালের ৩০ নভেম্বর জাতিসংঘের অষ্টম সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে সনদটি অনুসমর্থন করে। ১২ মে, ২০০৮ সালে বাংলাদেশ এতে স্বাক্ষর করে। পৃথিবীর মোট জনগোষ্ঠীর বিপরীতে প্রতিবন্ধী মানুষ তার দশ ভাগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এই সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সংখ্যা বৃদ্ধির অনেক কারণ আছে। চিকিৎসার উন্নতি হওয়ার ফলে মৃত্যুর হার কমে যাচ্ছে। মানুষের আয়ু বেড়েছে। তাছাড়া দারিদ্রতা, অপুষ্টি, অসুখ-বিসুখ, যুদ্ধ- বিগ্রহ, দুর্ঘটনা, দুর্যোগ এমন বিভিন্ন কারণে প্রতিবন্ধী মানুষের পাল্লা দিনকে দিন ভারি হয়ে চলছে। প্রতিবন্ধী মানুষেরা ভিনগ্রহ থেকে হঠাৎ করে এসে হাজির হয়নি। সমাজ বিজ্ঞানীরা বলেছেন, মানুষের সভ্যতার বয়স যত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও ততদিন ধরেই আছেন পৃথিবীতে এবং সবসময় ছিলেন। সব সমাজেই আছেন। তাদের অধিকার লেখা ছিল না, তাদের অধিকার স্বীকার করাও হত না।

 

 

শারীরিক সীমাবদ্ধতা বা নানা ধরণের প্রতিবন্ধিতার সম্মুখীন হবার কারণে কোন দেশ তাদেরকে ভিন্ন চোখে দেখতে পারবে না। তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করতে পারবে না। পরিবার থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত তাদের অধিকার সবার মত সমান। আছে স্বাভাবিক ভাবে সমাজে জীবন যাপন করার অধিকার, নিজেদের প্রতিভা বিকাশের অধিকার, স্বাস্থ্যের অধিকার। তারা বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা পাবে, রাষ্ট্রীয় ভাতা পাবে। সরকারি চাকরিতে কোন রূপ বৈষম্যমূলক আচরণ করা যাবে না। সর্বাগ্রে প্রয়োজন প্রতিবন্ধী মানুষের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা প্রদানে আন্তরিক হওয়া। শ্রম বাজারে কাজের অভিজ্ঞতা পাওয়ার অধিকার প্রতিবন্ধী মানুষকে দাসত্বের শৃঙ্খলে বন্দি করা যাবে না। তাদের অন্যায়ভাবে জুলুম বা হয়রানি করলে তা হবে মানবতা বিরোধী এবং দেশের প্রণীত আইনের বিধানে শাস্তি ও জরিমানা। উন্নত ধনী দেশ যেমন; আমেরিকা, যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি সব দেশে প্রতিবন্ধী মানুষের পক্ষে শক্ত আইন আছে। সেখানে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সকলেই কারণ প্রতিবন্ধী মানুষেরাও দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারেন এটি তারা অনুভব করেন। তাদের সক্ষমতা নিয়ে তাদের সন্দেহ নেই। কিন্তু আমাদের দেশে রাস্তা-ঘাট, যানবাহন থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস-আদালত কোন কিছুই প্রতিবন্ধীবান্ধব নয়। তার ওপর পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সকলের আচরণও প্রতিবন্ধী মানুষকে নিরুৎসাহিত করে নিজেকে সক্ষম প্রমাণের যুদ্ধে লিপ্ত হতে। দুঃখ হয় যা আমার অধিকার তাই আমার চেয়ে নিতে গিয়ে এক অসম্ভবের যুদ্ধে নেমে পড়তে হয়।

 

এদেশে প্রতিবন্ধী মানুষের বিষয়ে সবার ধারণা পরিবর্তনের দরকার আছে। যেমন মীর নেসার আলী তিতুমিরের বাঁশের কেল্লার মধ্যে বৃটিশ স্বৈরশাসকের কামানের গোলা আটকে ছিল। তাই বলে কি বাঁশকে অবহেলা করা যায়! তেমনি প্রতিবন্ধী মানুষেরা সমাজের নানা প্রতিবন্ধকতা ও মানসিকতার কাছে আটকে আছে তাই তাদেরও অবহেলা করা ঠিক নয়।

 

লেখকঃ চেয়ারম্যান- প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থা (প্রকস), জকিগঞ্জ।

সর্বশেষ

চাকরি নামক সোনার হরিণ নিয়ে যখন তামাশা!

প্রতিবন্ধী মানুষের জব প্লেসমেন্ট সংক্রান্ত সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ বিজনেস এন্ড ডিজেবিলিটি নেটওয়ার্ক (বিবিডিএন) এর সাথে বি-স্ক্যান’র গত ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তিনমাসের একটি চুক্তি হয়।...

মাসিক আর্কাইভ

Translate | অনুবাদ