প্রধান প্রতিবেদন
গণপরিবহনকে হুইলচেয়ার প্রবেশগম্য করতে মন্ত্রীর ঘোষণার দীর্ঘ তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এমন কোন বাস রাস্তায় নামে নি। এদিকে সহায়ক যাতায়াত ব্যবস্থা নেই বলেই আজ বিপুল সংখ্যক হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী মানুষ বন্দী হয়ে আছে চার দেয়ালের মাঝে। নিজেদের মেধা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগাতে পারছেন না শুধুমাত্র সহায়ক যাতায়াত ব্যবস্থার সংকটে।
উল্লেখ্য, গত ২ মার্চ ২০১২ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী ব্যক্তিদের এক র্যালী শেষে পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদের দেশের রাস্তায় র্যাম্পযুক্ত বাস নামানোর ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার পর ২০১৩ সালে গণপরিবহনে দেশীয় প্রেক্ষাপটে হুইলচেয়ার প্রবেশগম্যতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ডিজাইন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংগঠন বি-স্ক্যান। দেশের ১৭টি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী এতে অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতা শেষে বাছাইকৃত নয়টি ডিজাইন তৎকালীন বিআরটিসি চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দেয়া হয়। কিন্তু আজ অবধি র্যাম্পযুক্ত কোনো বাস নামে নি ঢাকা কিংবা বাংলাদেশের কোন রাস্তায়।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা। তাদের দাবী ঘর থেকে বের হয়ে হুইলচেয়ার নিয়ে চলার পথে নানান প্রতিবন্ধকতা কাটাতে র্যাম্পযুক্ত গণপরিবহনের আশ্বাসে উচ্ছ্বসিত প্রতিবন্ধী মানুষেরা হতাশ হতে বসেছে। আর সমাজ ও রাষ্ট্রও বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিবন্ধী মানুষের মেধা ও শ্রমের যথার্থ প্রয়োগের সুফল থেকে।
র্যাম্পযুক্ত বাসে ওঠার আশা নিয়ে অপেক্ষারত হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী চাকুরীজীবী আনারুল হক জানান, “দিন গুনতে গুনতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছি। আর কত দিন অপেক্ষা করলে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হবে আমরা জানি না! সত্যিই এখন মনে হয় সংশ্লিষ্টরা আমাদের প্রতি আন্তরিক নন।” অপর হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম অত্যান্ত হতাশা নিয়ে বলেন, একেকবারে সিএনজি ট্যাক্সিতে যাতায়াতে যে পরিমাণ খরচ হয়, বাস এলে সেটা অনেকাংশে কমে আসতো। আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য এভাবে যাতায়াত বিলাসিতারই নামান্তর। তাছাড়া সিএনজি বা রিকশাতে চেয়ার রাখলে বসতেও কষ্ট। আর গুরুতর মাত্রার প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য সিএনজি রিকশাতে চলাচল কষ্টসাধ্য। সরকারের কাছে অনুরোধ, দ্রুত আমাদের চলাচলের সুবিধার্থে কিছু গণপরিবহন চালু করতে।
এ বিষয়ে বিআরটিসি’র কারিগরি পরিচালক কর্নেল আব্দুল্লাহিল করিম এর দৃষ্টি গোচর করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, “প্রতিবন্ধী ভাই বোনদের হতাশার কিছু নেই, আমাদের তিনটা পরীক্ষামূলক কাজ প্রায় শেষের পথে। ঢাকার রাস্তায় এই বাসে র্যাম্প রাখব আমরা তাদের চলাচলের সুবিধার্থে।”
কবে এই বাস রাস্তায় নামবে এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল্লাহিল করিম বলেন, “আসলে কারিগরি বিভিন্ন সমস্যা ছিল, এখনও আছে। প্রসঙ্গক্রমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংগঠন বি-স্ক্যানকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এই বাসটির কাজ শুরু করার ব্যাপারে তারা আমাদের বিভিন্ন সময়ে তাগাদা দিয়েছে। তবে তাদের দেয়া ৯টা ডিজাইনে কারিগরি ত্র“টি থাকায় সেই ডিজাইনের ওপর নির্ভর করে কাজটি করা সম্ভব হয় নি। বিআরটিসি নিজস্ব নকশায় এই কাজটি করে। বি-স্ক্যান এর কাছে হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী ব্যক্তিদের চলাচলের রুট চেয়েছি আমরা, আশা করছি তারা তথ্য দিয়ে সহায়তা করলে আমরা দ্রুত ঢাকার বিভিন্ন রুটে পরীক্ষামূলক এই তিনটি বাস নামাতে পারবো। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান পরীক্ষামূলক এই বাসের কাজ চলাকালীন সময়ে প্রতিবন্ধী মানুষকে সম্পৃক্ত করা সম্ভব হয় নি তবে আশা করছি এই প্রক্রিয়া তাদের কাজে লাগবে।
এদিকে এ বিষয়ে বি-স্ক্যান এর সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব বলেন, “আমরা চিঠি দিয়ে দিয়েছি। কিন্তু সামান্য এ বিষয়টির জন্য এত সময় নিয়েছেন তারা, যতক্ষণ না বাস নামছে আমরা আসলে বিশ্বাসই করতে পারছি না যে আসলেই বাস নামছে এদেশের রাস্তায়।”