ছবিটি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এর ওয়েবসাইট থেকে নেয়া
তানজিদ শুভ
প্রতিবন্ধী মানুষের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ ছাড়াই সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রদানকৃত পরিচয় পত্রে তাদের সুবর্ণ নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করায় এর বিরোধিতা করেছেন বেশ কিছু প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংগঠন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেখা যায় প্রতিবন্ধী মানুষদের এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে। জানা যায় পরিচয় পত্রে আলাদা বিশেষণ ব্যবহারে পক্ষপাতী নন তারা কারণ দেশের ৮০ শতাংশই যেখানে দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে এবং বেশিরভাগই যখন নিয়োজিত ভিক্ষাবৃত্তিতে, তাদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান সর্বোপরি সামাজিক মর্যাদাসম্পন্ন জীবনধারণের নাগরিক অধিকার যেখানে বঞ্চিত সেখানে পরিচয় পত্রে সুবর্ণ নাগরিক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়াটা পরিহাসেরই নামান্তর। নাগরিক অধিকার বঞ্চিতদের কখনোই সুবর্ণ নাগরিক বলা যায় না এমন মন্তব্য করেন অনেকে।
বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্যা চেঞ্জ এ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাস (বি-স্ক্যান) এর সাধারণ সদস্য শর্মী রায় বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষায় আইন প্রণীত করেছে সরকার, সেই আইনের ৩৬ নং ধারায় সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে আমাদের অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, কর্তৃপক্ষ বা সংস্থা কোন প্রকার বৈষম্য প্রদর্শন বা বৈষম্যমূলক আচরণ করতে পারবে না। তাই সরকারের কাছেই আমার প্রশ্ন, আমাদের পরিচয় পত্রে সুবর্ণ নাগরিক নামকরণের মাধ্যমে বৈষম্য প্রদর্শন কেন? তিনি আরও বলেন, সুবর্ণ নাগরিক হিসেবে আলাদা কোন সুবিধা পাওয়ারও দাবি করছি না আমরা। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হিসেবে যতটুকু সুবিধার নিশ্চয়তা আছে তার প্রাপ্যটুকু বাস্তবায়নের দাবি আমাদের। এবং দ্রুত এই নামকরণ সরিয়ে নেয়ার অনুরোধের দাবী জানিয়ে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে মাননীয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রীকে আমরা ইতিমধ্যেই লিখিত চিঠি দিয়েছি। জানা যায়, আরও বেশ কিছু সংগঠন মাননীয় মন্ত্রী বরাবরে চিঠি দিয়েছেন।
এদিকে বাংলাদেশ ভিজ্যুয়ালি ইমপেয়ার্ড পিপলস সোসাইটি (ভিপস) এর কোষাধ্যক্ষ আশিকুর রহমান অমিত বলেন, আমার প্রথম পরিচয় আমি একজন মানুষ। ঠিক তেমনি দেশের সাধারণ নাগরিক। আমি এমন কোন কাজ করি নাই আমার পরিচয় পত্রে সুবর্ণ নাগরিক লিখে আলাদা সম্মান জানাতে হবে। দেশের নাগরিক হিসেবে আমার অধিকার চাই, বিশেষ কোন সিল চাই না। তবে কোন নির্দিষ্ট প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যদি এমন কোন কাজ করেন যা দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে, তাকে নিশ্চয়ই “সুবর্ণ নাগরিক” খেতাব দেয়া যেতে পারে। কিন্তু গণহারে সবাইকে এই ধরণের সম্বোধন ব্যবহার করে আমাদের সমাজ থেকে আলাদা না করার অনুরোধ জানাচ্ছি সরকারকে।
স্পাইনাল কর্ড ইঞ্জুরিস ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন বাংলাদেশ (সিডাব) এর সাধারণ সম্পাদক মেজর জহিরুল ইসলাম বলেন, সাধারণত কোন স্বীকৃতি হিসেবে সুবর্ণ নাগরিক নামটি গ্রহণযোগ্য কিন্তু ঢালাওভাবে আমাদের সকলকে এই নাম দেয়া হচ্ছে নেহাতই করুণার উদ্দেশ্যে। পরিচয় পত্রে আলাদা কোন নামকরণের প্রয়োজন নেই। আন্তর্জাতিক কাঠামো অনুকরণে সারা বিশ্বে স্বীকৃত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের লোগো ব্যবহার এবং প্রতিবন্ধিতার ধরণ উল্লেখ করে সরকারি সুবিধা দেয়ার সুপারিশ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, সমাজসেবা অধিদফতরের অধীনে দেশজুড়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জরিপের কার্যক্রম শেষে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পরিচয় পত্র নতুন করে প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে যেখানে একদিকে সুবর্ণ নাগরিক সীল দেয়া হয়েছে।