ক্রীড়া প্রতিবেদক
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের নিয়ে আলাদা একটি বিভাগের কথা ভাবছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের নিয়ে প্রথমবারের মত আয়োজিত আইসিআরসি আন্তর্জাতিক পাঁচ জাতি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী দিন বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন এমন ইচ্ছে ব্যক্ত করেন।
গত ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এই টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় পাপন বলেন, বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের সাথে জড়িত হয়ে পড়েছে। কেউ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ক্রিকেটার আবার কেউ হুইলচেয়ারে এবং বিভিন্ন ধরণের শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করছেন। তাদের মধ্যেও আবার দল রয়েছে। তাই আমরা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য আলাদা বিভাগ তৈরির চিন্তা করছি। নানা ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়া প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের একটি দলের ছত্রছায়ায় নিয়ে আসাই মূল উদ্দেশ্য।
এদিকে প্রথমবারের মতো আয়োজিত আন্তর্জাতিক টি২০ টুর্নামেন্টের শিরোপা উৎসবে মেতেছে ইংলিশ দল। পাকিস্তানকে হারিয়ে আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড। যদিও উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক দল বাংলাদেশের বিপক্ষে পরাজয় দিয়েই শুরু হয়েছিল ইংলিশদের। কিন্তু আসর শেষ করলো তারা চ্যাম্পিয়ন হয়ে। ৩টি ম্যাচ জয়ে সমান ৬ পয়েন্ট নিয়ে ফাইনালে উঠে পাকিস্তান এবং ইংল্যান্ড। ৪টি ম্যাচের ২টিতে জয় আর ২টি পরাজয়ে পয়েন্ট ৪ নিয়ে ৩য় স্থানে অবস্থান করছে বাংলাদেশ দল। আর ১টি করে জয়ে ভারত ও আফগানিস্তান পেয়েছে পয়েন্ট ২।
এই পাঁচ জাতি টুর্নামেন্টের ফাইনালে ইংল্যান্ড ১৯ রানে হারায় পাকিস্তানকে। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৪ উইকেটে ১৭৫ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে ইংল্যান্ড। জবাবে ৭ উইকেটে ১৫৬ রানে থেমে যায় পাকিস্তানের ইনিংস। অপরদিকে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ইংল্যান্ডকে হারিয়ে চমক দেখিয়েছে। ইংল্যান্ড দলের অভিজ্ঞতার তুলনায় বাংলাদেশ দল একেবারেই নতুন। সেই অভিজ্ঞ দলকেই উদ্বোধনী ম্যাচে হারিয়েছেন আলম খানরা। ফাইনালে যেতে না পারলেও, নতুন দল হিসেবে বাংলাদেশ সবার মন জয় করে নিয়েছে প্রথম টুর্নামেন্টেই।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) সহায়তায় আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি) এই আয়োজন করে। বাংলাদেশ-ইংল্যান্ডের উদ্বোধনী ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে। কিন্তু বৃষ্টিবিঘ্নিত হবার কারণে সেটি এবং পরবর্তী ম্যাচগুলো বিকেএসপি এর মাঠে হয়।
সারা দেশ থেকে প্রতিভাবান ক্রিকেটার নির্বাচন করতে গত মার্চ মাসে আয়োজন করা হয় এক প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচির। এতে অংশ নেয়া ১৫৬ জন ক্রিকেটার থেকে বাছাই করে ২০ ক্রিকেটারকে নিয়ে বিকেএসপিতে ৯ আগস্ট থেকে কোচ রাশেদ ইকবাল ও মাসুদ হাসানের অধীনে প্রস্তুতি নেয়া হয়। সেখান থেকে ১৫ জনের চূড়ান্ত স্কোয়াড নির্বাচন করা হয়। টুর্নামেন্টের শুভেচ্ছাদূত নির্বাচিত হন জাতীয় দলের অধিনায়ক ও পেস বোলার মাশরাফি বিন মুর্তজা।
এই টুর্নামেন্ট আয়োজনের মূল পরিকল্পনাকারী ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) এর শারীরিক প্রতিবন্ধী বিভাগের প্রধান ইয়ান মার্টিন। তিনি এখন ২০১৯ সালে বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বপ্ন দেখছেন। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) প্রতিনিধি আমিনুল ইসলামের মতে, প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের নিয়ে বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য ঘরোয়া ক্রিকেট জরুরি। অন্তত টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলো তাদের ক্রিকেট বোর্ডের অধীনে এই ধরণের ম্যাচগুলো খেলার অবস্থায় গেলে বিশ্বকাপ হতেই পারে। অস্ট্রেলিয়ার এখনও প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের দলই নেই উল্লেখ করে তিনি প্রত্যাশা করেন এসব নিয়ে বিভিন্ন দেশে আরও কাজ হবে।