বাড়ি12th Issue, September 2015সরকার প্রদত্ত সুবিধাসমূহ; সেবা প্রাপ্তিতে অনিয়মে রয়েছে লিখিত অভিযোগের ব্যবস্থা

সরকার প্রদত্ত সুবিধাসমূহ; সেবা প্রাপ্তিতে অনিয়মে রয়েছে লিখিত অভিযোগের ব্যবস্থা

 

আকলিমা খাতুন 

 

বাংলাদেশ সরকার সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সনদ ও পরিচয়পত্র প্রদান, অসচ্ছল ভাতা, শিক্ষা উপবৃত্তি, চিকিৎসা সেবা, পুনর্বাসন ইত্যাদি বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রম বিনামূল্যে একেবারে উপজেলা/ইউনিয়নের মত বাড়ির দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে। শুধুমাত্র সেবাগুলোর সহজ প্রাপ্তি সম্পর্কে অজ্ঞতার ফলে অনেকেই এর সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

অনেকে এও জানেন না আবেদন করার পর যথা সময়ে সেবা প্রাপ্তিতে অনিয়ম বা গাফেলতি হলে দায়িত্বরত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করতে পারেন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বা তার পরিবার।

 

বরাদ্দ দেয়া সত্ত্বেও এক মাসের মধ্যে মাসিক ভাতা ও শিক্ষা বৃত্তি প্রদানে ব্যর্থ হলে, পরিচয় ও সনদপত্র প্রদানসহ পুনর্বাসন, চিকিৎসা সেবা ইত্যাদি কার্যক্রমের ক্ষেত্রে দায়িত্বরত কর্মকর্তা অনিয়ম বা অসহযোগিতা করলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বা তাদের অভিভাবকগণ উপজেলা সমাজসেবা কমিটির সভাপতি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ জানাতে পারবেন। এবং কমিটির সভাপতি তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। এদিকে এক সপ্তাহের মধ্যে উপজেলা সমাজসেবা কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিব যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বা তার অভিভাবক জেলা সমাজসেবা উপ-পরিচালক বরাবরেও লিখিত অভিযোগ করতে পারবেন। তবে উপজেলা সমাজসেবা কমিটির সভাপতির বরাবর লিখিত অভিযোগ পত্রের ফটোকপি ও সংযুক্তি এই অভিযোগপত্রের সাথে জমা দিতে হবে। একই নিয়মে পর্যায়ক্রমে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক, জেলা প্রশাসক এবং পরিচালক (কার্যক্রম) বা মহাপরিচালকও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার ক্ষমতা রাখেন। বিভিন্ন সেবাগুলো প্রাপ্তির নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত দেয়া হল-

 

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সনদ ও পরিচয়পত্র প্রাপ্তির নিয়মাবলিঃ

প্রতিবন্ধিতা সনদপত্র পেতে চাইলে প্রথমে স্থানীয় সমাজসেবা কার্যালয় থেকে নির্ধারিত (বিনামূল্যের) ফরম সংগ্রহ করতে হবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে। উক্ত ফরম পূরণ করে সাথে ইউপি/ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কর্তৃক সত্যায়িত ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, ইউপি/ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কর্তৃক জন্ম নিবন্ধন সনদ এবং নাগরিকত্বের সনদপত্র সহকারে আবেদন জমা দিতে হবে স্থানীয় সমাজসেবা কার্যালয়ে। তারাই সিভিল সার্জনের সাথে সাক্ষাৎকার প্রদানের সময় জানিয়ে দেবেন। নির্ধারিত তারিখে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সাক্ষাৎকার গ্রহণ শেষে স্বাস্থ্যগত প্রতিবন্ধিতা সনদপত্র দেবেন সিভিল সার্জন। সেটিও দায়িত্বশীল সমাজসেবা কর্মকর্তার নিকট আবার জমা দিতে হবে।

সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন সমাজকর্মী কর্তৃক কাগজপত্রসহ নথি অনুমোদনার্থে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার নিকট উপস্থাপন ও অনুমোদন গ্রহণ করতে হয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রসহ নথি সনদ ও পরিচয়পত্র উপ-পরিচালক এর নিকট চূড়ান্ত স্বাক্ষর ও অনুমোদনার্থে জেলা সমাজসেবা অফিসে প্রেরণ করা হয়। জেলা অফিস থেকে স্বাক্ষরিত সনদ পাওয়ার পর আবেদনকারীকে সরবরাহ করা হয় এবং এই পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হতে মাত্র এক মাস সময় নেয়।

 

অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা কার্যক্রমঃ 

নিবন্ধিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তির বয়স ০৬ বছরের ঊর্ধ্বে এবং বার্ষিক গড় আয় সর্বোচ্চ ৩৬,০০০/= হলে তারাই অসচ্ছল ভাতার আবেদন করতে পারবেন। পেনশনভোগী ও চাকরিজীবী ব্যক্তি বা সরকারি অন্য কোন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে সেবা গ্রহণকারীদের জন্য এই সেবা প্রযোজ্য নয়।

এই ভাতা পেতে প্রথমে স্থানীয় সমাজসেবা অফিসের নির্ধারিত ফরমে আবেদন করে উক্ত ফর্মের সাথে ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রত্যয়নপত্র, ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি, জাতীয় পরিচয় পত্রের সত্যায়িত কপি (ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক) এবং সিভিল সার্জন/উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্তৃক প্রতিবন্ধিতার সনদপত্র জমা দিতে হবে। এই আবেদন উপজেলা সমাজসেবা অফিসার বরাবর করতে হবে।

তারপর ইউনিয়ন কমিটি কর্তৃক বাছাইকৃত আবেদনসমূহের প্রাথমিক তালিকা, সুপারিশসহ চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপজেলা কমিটিতে প্রেরণ করা হয়। তারা এই তালিকা যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে চূড়ান্ত করে মাননীয় সংসদ সদস্যের অনুমোদনক্রমে ভাতাপ্রার্থীর নামে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার কর্তৃক ভাতা বই ইস্যু করেন। এরপর ভাতাপ্রার্থীকে জানানো হলে তিনি ১০ টাকার বিনিময়ে নিজ নামে একটি ব্যাংক হিসাব খোলেন এবং সেখানে মাসিক ৫০০ টাকা ভাতা হিসেবে দেয়া হয়।

 

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপবৃত্তি কার্যক্রমঃ

জরিপভুক্ত, শনাক্তকৃত ও সমাজসেবা অধিদফতর কর্তৃক নিবন্ধিত, সরকার কর্তৃক স্বীকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ণরত ৫ বছরের ঊর্ধ্বে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী যাদের পারিবারিক বার্ষিক গড় আয় সর্বোচ্চ ৩৬,০০০/=। তারা নির্ধারিত ফরমে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার বরাবর আবেদন করবেন। এই উপবৃত্তি পেতেও নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে, সাথে জমা দিতে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জরিপ, ৬ কপি পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি এবং শিক্ষা বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদন।

ইউনিয়ন কমিটি কর্তৃক আবেদনসমূহ যাচাই বাছাই করে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান দ্বারা অভিভাবককে অবহিত করা হয়। তারপর বৈধ অভিভাবকের নামে উপবৃত্তির অর্থ উত্তোলনের জন্য ব্যাংক হিসাব খোলা হয়।

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ৪টি স্তরে বিভক্ত করে উপবৃত্তি  প্রদান করা হয়। যথা- জনপ্রতি মাসিক প্রাথমিক স্তরে (১ম-৫ম শ্রেণী) ৩০০ টাকা, মাধ্যমিক স্তর (৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণী) ৪৫০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক স্তর (একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী) ৬০০ টাকা এবং উচ্চতর স্তর (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর) ১,০০০ টাকা।

 

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসন কার্যক্রম/ঋণ প্রদানঃ

নির্ধারিত বিনামূল্যের ফরমে আবেদন করতে পারবেন, যার সাথে ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রত্যয়ন পত্র, পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি (ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক) জমা দিলে উপজেলা কমিটির মাধ্যমে ঋণগ্রহীতা বাছাই করে ঋণ প্রদান করা হয়। প্রথমবার ঋণ গ্রহণের আবেদন করলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে ১ মাসের মধ্যে ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পযন্ত ঋণ প্রদান করা হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে ঋণ গ্রহণের জন্য আবেদনের ২০ দিনের মধ্যে ১৫ হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দেয়া হয়।

 

প্রতিবন্ধী মানুষের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমঃ

বাংলাদেশ সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চিকিৎসা সেবা প্রদান ও কাউন্সিলিং করার জন্য জেলা পর্যায়ে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র তৈরি করেছেন। এই সেবা  কেন্দ্রের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে- প্রতিবন্ধিতার ধরণ নির্ণয়, পুনর্বাসন, ফিজিওথেরাপি, শ্রবণ, দৃষ্টি ও ভাষা শিখন সেবা, অকুপেশনাল থেরাপি, অটিজম বিষয়ক সেবা, কাউন্সিলিং, সহায়ক উপকরণ বিতরণ, সচেতনতা কার্যক্রম এবং পক্ষাঘাতগ্রস্থদের সেবা ইত্যাদি।

সর্বশেষ

চাকরি নামক সোনার হরিণ নিয়ে যখন তামাশা!

প্রতিবন্ধী মানুষের জব প্লেসমেন্ট সংক্রান্ত সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ বিজনেস এন্ড ডিজেবিলিটি নেটওয়ার্ক (বিবিডিএন) এর সাথে বি-স্ক্যান’র গত ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তিনমাসের একটি চুক্তি হয়।...

মাসিক আর্কাইভ

Translate | অনুবাদ