দেলোয়ার খান
কয়েকদিন আগের এক সকালে, আমি শিশু একাডেমিতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে গিয়েছিলাম। বাসে যাবো। উঠতে যেতেই প্রথমে বাসের ড্রাইভার বাধা দিল। আমাকে নেবেই না সে। কারণ আমি হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী ব্যক্তি। বুঝিয়ে বলার পরে এক পর্যায়ে রাজী হল। কিন্তু শর্ত জুড়ে দিল, আমার হুইলচেয়ার এর আলাদা ভাড়া দিতে হবে!
এই কথা শুনে এতো কষ্ট পেলাম যে, ভাষায় প্রকাশ করার নয়। কবে যে এদেশের মানুষ আমাদের স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করবে জানি না। আর কবেই বা আমাদের উপযোগী গণপরিবহন চালু হবে তাও জানি না। এই আমাদের দুঃখ, আর এই বঞ্চনা-অপমান নিয়েই আমরা নাকি সুবর্ণ নাগরিক!
প্রতিবন্ধী মানুষদের দীর্ঘ দিনের প্রতীক্ষা প্রবেশগম্য যাতায়াত ব্যবস্থার। হুইলচেয়ার উপযোগী প্রবেশগম্য বাসের। পরিবহন প্রতিবন্ধকতার জন্যে মন চাইলেও ঘরের বাইরে বের হতে বাধ সাধে। গণপরিবহনে বাড়তি ঝামেলা ভেবে বঞ্চিত প্রতিবন্ধী মানুষেরা। তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে সরকার কর্তৃক প্রদানকৃত সুবর্ণ নাগরিক নামকরণ যেন চরম রসিকতার নামান্তর।
শুরুর ঘটনাটি শুধু গুটিকয়েক ক্ষেত্রে নয়। বাস্তবে প্রতিদিন অহরহই ঘটছে। প্রতিবন্ধিতা আমাদের সীমাবদ্ধতা কিন্তু অসহায়ত্ব নয়। তবু সমাজের প্রতি পদে প্রতিনিয়তই হয়রানির সম্মুখীন আমরা। কর্তৃপক্ষের নিকট প্রশ্ন, সুবর্ণ নাগরিকের প্রাপ্য মর্যাদাটা কি এই-ই যে প্রতিবন্ধী মানুষের “সুবর্ণতাকে” পূঁজি করে অপরের করুণা আর অনুনয়ের ওপর চলতে হবে?
দেশের পরিবহন সমস্যাকে উপলব্ধি করে কর্তৃপক্ষ নতুন নতুন বাস রাস্তায় নামাচ্ছে। কোনটাতে আছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও। কিন্তু আদৌ কি হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী মানুষ এবং এই বিশাল জনগোষ্ঠীর চলাচলের সমস্যাগুলো ভেবে দেখার ফুসরত হয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলের? বিশাল বাজেটে আমদানিকৃত গণপরিবহনের বহরে গুটিকয়েক হুইলচেয়ার প্রবেশগম্য র্যাম্প সুবিধা সম্বলিত বাস রাখা কি খুব কষ্টসাধ্য কিংবা বিলাসিতার কিছু? শুধু চলৎ শক্তি হারাবার কারণে কোন ব্যক্তির জীবনে অন্যতম অংশ হুইলচেয়ারটিকে যদি গণপরিবহন এবং সমাজে বাড়তি ঝামেলা আর পয়সা কামানোর পথ হয় তবে “সুবর্ণ” নাগরিকের পরিচয়টা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়?
মাননীয় যোগাযোগ মন্ত্রী, বিষয়টা কি ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে স্থান পাবার যোগত্যা পায় নি আদৌ?