অপরাজেয় প্রতিবেদক
প্রতিবন্ধী মানুষের উন্নয়নে শহর থেকে গ্রামের তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠন (ডিপিও)সমূহের সক্রিয় ভূমিকা ও সরকারিভাবে তাদের প্রতিনিধিত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিমত ব্যক্ত করেন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ। এ ছাড়া এসডিজি বাস্তবায়নে রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং সরকারি অর্থ বরাদ্দের ওপরেও গুরুত্বারোপ করেন তারা।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা; প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনের ভূমিকা শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনের পরিষদ (পিএনএসপি) এবং টার্নিং পয়েন্ট ফাউন্ডেশনের যৌথ আয়োজনে। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ পিএনএসপি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এই সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা কমিশনের সচিব জনাব তারিক-উল-ইসলাম বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার পরিকল্পনা মাথায় রেখে সরকার কাজ করছে। তবে এসডিজি বাস্তবায়নে রাজধানী থেকে উপজেলা, ইউনিয়নসহ সব পর্যায়ে কাজ করার জন্য তৃণমূলের ডিপিও সংগঠনগুলোকে আরও সক্রিয়ভাবে অগ্রসর হতে হবে। তিনি আরও বলেন, ডিপিওগুলো থেকে একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি প্রতিনিধি নির্বাচিত করে সরকারের মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে এবং আমিও চেষ্টা করব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সব পর্যায়ে উন্নয়ন নিশ্চিতে একসঙ্গে কাজ করতে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসরিন আরা সুরাত আমিন লক্ষ্যমাত্রা উন্নয়নে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব যোগাযোগব্যবস্থা নিয়ে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ ছাড়া কর্মসংস্থান মেলাসহ জেপিইউএফ কর্তৃক তিন ধরনের হুইলচেয়ার আমদানির ঘোষণা দেন তিনি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে এডিডি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের দেশীয় পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, এসডিজির পাশাপাশি সরকারেরও বিভিন্ন নীতিমালা, কৌশলগত পরিকল্পনা ইত্যাদি রয়েছে। এসডিজি, সিআরপিডি ইত্যাদির পাশাপাশি দেশীয় আইন বাস্তবায়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে সবার সমন্বিতভাবে কাজ করা দরকার বলে তিনি মনে করেন। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনগুলোর একত্রে বৃহত্তর আন্দোলন করার ওপর বিশেষভাবে তাগিদ দেন।
বিশেষ আলোচক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনের পরিষদ (পিএনএসপি)-এর পরিচালক রফিক জামান এসডিজি বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনের ভূমিকা বিষয়ে উল্লেখ করেন, এমডিজিতে দারিদ্র্য নিরসনে কাজ হয়েছিল। ১৯৯০ সালের মধ্যে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমানোর কথা বলা হয়েছিল কিন্তু বৈষম্যপীড়িত গোষ্ঠীকে নিয়ে তেমন কাজ হয়নি।
তিনি বলেন, এসডিজিতে মোট ১৬৯টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রতিবন্ধী মানুষের বিষয় উল্লেখ রয়েছে মাত্র ৬টি নির্দেশকে। তার মধ্যে সহনির্দেশক রয়েছে আরও ৪টি। লক্ষ্যমাত্রা অল্প হলেও প্রতিবন্ধী মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হলেই উন্নয়ন সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। এর মধ্যে নারী প্রতিবন্ধীদের প্রতিনিধিত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার অর্জনের আন্দোলনে সোচ্চার ভূমিকা রাখতে হলে প্রতিবন্ধী মানুষকেই অগ্রসর হতে হবে।
সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন টার্নিং পয়েন্ট ফাউন্ডেশনের প্রকল্প কর্মকর্তা লিসি দেশাই। স্বাগত বক্তব্য দেন টার্নিং পয়েন্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক জীবন উইলিয়াম গমেজ। সভাপতিত্ব করেন পিএনএসপির সভাপতি ওসমান খালেদ। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পিএনএসপির সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব, বাংলাদেশ ভিজ্যুয়াল ই¤েপয়ার্ড পিপলস সোসাইটি (ভিপস)-এর সাধারণ সম্পাদক নাজমা আরা বেগম পপি, এক্সেস বাংলাদেশের সহসভাপতি মহুয়া পাল, সোসাইটি ফর ইউনিক ক্যাপাবল সিটিজেনস (এসইউসিসি) সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন আহমেদ দোলন, স্পাইনাল কর্ড ইনজুরিস ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশেন বাংলাদেশ (সিডাব)-এর সাধারণ সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম, ডিজঅ্যাবল্ড চাইল্ড ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাসরিন জাহান প্রমুখ।
এ ছাড়া সারা দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে ডিপিওসমূহের মধ্যে চন্দনাইশ প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থা, সিরাজগঞ্জ সদর প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উন্নয়ন সমিতি, মহাদেবপুর প্রতিবন্ধী বহুমুখী সমবায় সমিতি, কল্পনা প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থা, রায়গঞ্জ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থা, প্রতিবন্ধী নাগরিক পরিষদ, মুক্তি প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থাসহ আরও বেশ কিছু সংস্থার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।