বাড়ি15th Issue, june 2016নস্টালজিয়া

নস্টালজিয়া

নিগার সুলতানা

 

সম্পূর্ণ কাচঘেরা সুদৃশ্য বারান্দাটি। কোনো শৌখিন বিলাসী মনের হয়তো প্রকৃতির মিঠে হাওয়ার চেয়ে রসকষহীন এসির ঠান্ডা হাওয়াই বেশি পছন্দ; সেই অভিজাত বদ্ধ বারান্দায় আবার শখ করে ময়ূরও পোষা হয়। উজবুক সেই বিলাসী মন হয়তো ভেবেছে, ওর মতো ময়ূরের জন্যও এসির ঠান্ডা হাওয়াই যথেষ্ট। বৃষ্টি এলেই সেই মোটা কাচ ভেদ করে ময়ূরটির প্রচন্ড ডাক (আমি বলব আর্তচিৎকার) শুনতে পাই, যা পুরো এলাকা সরব করে ফেলে। মেঘ ভরপুর কালো আকাশের ঝমঝম বৃষ্টি কাচের ফাঁক গলে ওরও দৃষ্টি এড়ায় না। ওর বদ্ধ মনের আর্তনাদই হবে ওটা; আমাকে ভীষণ কষ্ট দেয়, ভীষণ। প্রবল বর্ষণে ওর পেখম খুলে নাচতে না পারার ব্যর্থতাটা, ওর নস্টালজিক চোখের অশ্রু ভীষণ কষ্ট দেয়, ভীষণ। বর্ষায় ওই অভিজাত অ্যাপার্টমেন্টের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হয় ঢিল ছুড়ি ওই বারান্দায়। সেই উজবুক বিলাসী মন হয়তো জানেই না জীবনের স্বাভাবিক প্রবাহকে আবদ্ধ করে সৌন্দর্য উপভোগ করাটা নিষ্ঠুরতারই শামিল।

 

ছোটবেলায় এক ঝড়ের দিনে বড়ইগাছের ডাল থেকে ছোট একটা মাছরাঙা পাখি ধরেছিলাম। কিন্তু তারপর বাইরে সারা রাত বৃষ্টির মধ্যে মা পাখিটার ডাকাডাকি আর ঘরে শিশু পাখিটার ছুটোছুটি দেখে সারা রাত ঘুমোতে পারিনি। সকালেই শিশু পাখিটিকে ছেড়ে দিয়ে যেন নিজেকে মুক্তি দিলাম। ছাড়া পেয়েই চোখের পলকে সে বড়ইগাছের ডালে। অবিরাম ডাকছিল তার মাকে। কিন্তু মা পাখিটি নেই। আবার মা পাখিটা যখন বাসায় ফিরে আসে তখন শিশু গায়েব। আমার অস্থিরতা বাড়তে থাকে আর রাতের ঘুম হারাম। পরদিন দুপুরে মা আর তার সন্তানকে একসঙ্গে দেখতে পেয়ে কী শান্তি যে পেয়েছিলাম, বলে বোঝানোর নয়। নিজেকে পাপমুক্ত মনে হয়েছিল আর ঘুমাতেও পেরেছিলাম।

 

এবং সেদিন গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলাম, ভালো লাগাকে অবরুদ্ধ নয়, উন্মুক্ত করে দিতে হয়, তবেই না প্রকৃত শান্তি।

পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

সর্বশেষ

চাকরি নামক সোনার হরিণ নিয়ে যখন তামাশা!

প্রতিবন্ধী মানুষের জব প্লেসমেন্ট সংক্রান্ত সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ বিজনেস এন্ড ডিজেবিলিটি নেটওয়ার্ক (বিবিডিএন) এর সাথে বি-স্ক্যান’র গত ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তিনমাসের একটি চুক্তি হয়।...

মাসিক আর্কাইভ

Translate | অনুবাদ