জাভেদ সৈয়দ আলী
সরকার প্রতিবন্ধী মানুষকে মূল স্রোতোধারার কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী যে হাতিয়ার আমাদের দিয়েছে তা হলো, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩। এই আইনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকারসংক্রান্ত ধারা ১৬-এর ঝ-তে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তাদের কর্মে নিযুক্তির বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে একই ধারার ড-তে বলা হচ্ছে, শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রসহ প্রযোজ্য সকল ক্ষেত্রে ‘প্রয়োজনীয় স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য উপযোগী পরিবেশ ও ন্যায্য সুযোগ সুবিধা’ বা reasonable accommodation প্রাপ্তির নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।
এ ছাড়া ৩৫ নম্বর ধারায় বলা হচ্ছে, প্রতিবন্ধিতার কারণে কর্মে নিযুক্ত না করা, ইত্যাদি।
(১) আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও, প্রতিবন্ধিতার ধরন অনুযায়ী, উপযোগী কোন কর্মে নিযুক্ত হইতে কোন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে বঞ্চিত বা তাহার প্রতি বৈষম্য করা বা তাহাকে বাধাগ্রস্থ করা যাইবে না।
(২) কোন কর্ম প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য উপযোগী কিনা এই মর্মে কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হইলে, উক্ত বিষয়ে জাতীয় সমন্বয় কমিটি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করিবে এবং এতদ্বিষয়ে জাতীয় সমন্বয় কমিটির নির্দেশনা চূড়ান্ত বলিয়া গণ্য হইবে।
এখানেই শেষ নয়। আরও রয়েছে বৈষম্য নিরোধে প্রতিবন্ধী মানুষের সবচেয়ে বড় শক্তি এই আইনের ধারা ৩৬।
অর্থাৎ কর্মক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হলে আমরা প্রতিবন্ধী মানুষেরা এ বিষয়ে প্রশ্নও তুলতে পারি। এই মুহূর্তে আমার প্রশ্ন হলো, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কি প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য সমপরিমাণ কর্মসংস্থানের সুযোগ-সুবিধা দিতে প্রস্তুত? কর্মক্ষেত্রে র্যা¤প তৈরি এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব শৌচাগার থাকার মধ্যেই সব এইচ আর (হিউম্যান রিসোর্স) নীতিমালার শেষ নয়। যখন কারখানাগুলোতে নীতিমালা এবং কর্মী নিয়োগ কৌশলের অংশ হিসেবে তাদেরকে নিয়োগ করা হবে, কেবল বিকল্প ভাবনা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না, তখনই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণ মূল স্রোতোধারাভুক্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এর শুরুটা হতে পারে একটি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব কর্মক্ষেত্র বাছাইয়ের মাধ্যমে, যা তাদের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে সমানভাবে দৈনন্দিন কাজ করার সুযোগ করে দেবে।
এ লক্ষ্যে আমাদের দেশের কর্মক্ষেত্রগুলোকে আরও বেশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব করে গড়ে তুলতে প্রতিষ্ঠানসমূহ ও কর্তৃপক্ষের জন্য পাঁচটি সহজ সমাধান তুলে ধরার চেষ্টা করছি আমার লেখার মাধ্যমে।
১.একটি সহায়ক প্রযুক্তি প্রকল্প বাস্তবায়ন
বর্তমান সময়ে বেশির ভাগ চাকরিতে ক¤িপউটার ও প্রযুক্তিবিজ্ঞানের চাহিদা রয়েছে। প্রতিবন্ধী মানুষদের তাদের কর্মক্ষেত্রে সাহায্যের জন্য অনেক সময় সহায়ক প্রযুক্তির প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে কালার কোডেড কি-বোর্ড, স্ক্রিন রিডার অ্যান্ড ম্যাগনিফায়ার, সহায়ক শ্রবণযন্ত্রাদি, চিত্তাকর্ষক ব্রেইল ডিস প্লেয়ার রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো একটি সহায়ক প্রযুক্তি প্রকল্প প্রচলন করতে পারে, যা কর্মীদের চাহিদার ভিত্তিতে সেবা প্রদান করবে। যেন একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কোনো রকম বাধা ছাড়াই কাজ করতে পারে। পাশাপাশি সহায়ক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সুফল প্রাপ্তি সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।
২. নিজস্ব ওয়েবসাইটের সহজলভ্যতা সুনিশ্চিতকরণ
প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস¦ ওয়েবসাইটে কর্মচারীদের নিয়মিত ঢুকতে হবে। ওয়েবসাইটগুলোর ডব্লিউথ্রিসি ওয়েব কনটেন্ট এক্সেসিবিলিটি নীতিমালা (ডব্লিউসিএজি) ২.০-এর কঠোর অনুসরণ সুনিশ্চিত হয়। ফলে কর্মচারীর তথ্যের সহজলভ্যতা সুনিশ্চিত হয় এবং কাজ করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পরনির্ভরশীল হতে হয় না।
৩.মিটিংয়ের সময় সহায়তা প্রদান
অনলাইন প্রশিক্ষণগুলোতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিভিন্ন চাহিদা বিবেচনায় আনতে হবে। এর মধ্যে বাংলা ইশারা ভাষায় সাহায্য প্রদান, ব্রেইলে প্রশিক্ষণের পর্যাপ্ত জিনিসপত্র সুনিশ্চিতকরণ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব সহজলভ্য পিডিএফ অন্তর্ভুক্ত করা।
৪.সংবেদনশীলতা ও প্রশিক্ষণ
সব কর্মচারীর জন্য সংবেদনশীলতা কর্মশালা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তি-স¤পর্কিত শিষ্টাচার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্য কর্মীদের প্রতিবন্ধী সহকর্মীদের সঙ্গে আচরণ ও কাজের ক্ষেত্রে তাদের বিশেষ চাহিদাগুলো স¤পর্কে অবগত করতে হবে।
সংবেদনশীলতা অন্যান্য সহকর্মীকে প্রতিবন্ধী মানুষদের প্রতি বৈষম্যমূলক ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রয়োজনে সাহায্য প্রদানের বিষয়ে অবগত করার ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণটি গুরুত্বপূর্ণ হবে।
৫.সহজলভ্য যোগাযোগব্যবস্থা উন্মুক্তকরণ
আন্তযোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন নীতিমালা, কর্মীদের নিজস্ব নিউজলেটার এবং যৌথ নীতিমালাগুলোকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে এবং প্রতিবন্ধী কর্মচারীদের চাহিদার ভিত্তিতে তার সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট