ধারা-২৯ : রাজনৈতিক জীবনে এবং জনজীবনে অংশগ্রহণের অধিকার
অপরাজেয় ডেস্ক
জাতিসংঘ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার সনদ (সিআরপিডি) অনুযায়ী প্রতিবন্ধী মানুষের পরিপূর্ণভাবে মূলধারার রাজনীতি ও জনজীবনে অংশগ্রহণ এবং ভোট প্রদান, নির্বাচনে দাঁড়ানো ইত্যাদির অধিকারও রয়েছে। সব ধরনের প্রতিবন্ধী মানুষের এই অধিকার নিশ্চিত করতে বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে সিআরপিডি।
এর জন্য মুখ্য ভূমিকা পালন করবে সরকার। ভোট দেওয়ার পদ্ধতি সহজতর ও প্রবেশগম্য করার বিষয়টি সরকার নিশ্চিত করবে। ভোটকেন্দ্রের শুরু থেকে ব্যালট বাক্সের গোপনীয়তা পর্যন্ত প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। যেন শ্রবণ প্রতিবন্ধী মানুষ এবং বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মানুষ সহজে বোঝেন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষ যেন সহজে ব্যালট পেপার বুঝতে এবং ব্যবহার করতে পারেন এই ব্যবস্থাও রাখতে হবে সরকারকে। অর্থাৎ সব ধরনের প্রতিবন্ধী মানুষেরা গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রদান এবং নির্বাচনেও অংশ নিতে পারবেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে কর্মকা- পরিচালনা করতে পারবেন। অফিস-আদালতের সব পর্যায়ের কর্মকান্ড সহায়ক প্রযুক্তি ব্যবহারের সহায়তা পাবে। নিজের পছন্দের সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে ভোট দেওয়ার অনুমতি চাওয়া মাত্র সরকারকে তা দিতে হবে।
এ ছাড়া রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের তৎপরতায় অংশ নিতে বেসরকারি সংগঠন ও বিভিন্ন সংস্থায় যুক্ত হওয়ার পরিবেশ তৈরিসহ আন্তর্জাতিক জাতীয়, আঞ্চলিক ও স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠন তৈরির উদ্যোগ নেবে সরকার।
এ লক্ষ্যে এই সনদের ধারা-২৯-এ বলা হয়েছে, শরিক রাষ্ট্র কোন বৈষম্য না করে প্রতিবন্ধী মানুষের রাজনৈতিক অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে;
(ক) অন্য সাধারণ মানুষের সঙ্গে কার্যকর ও সমতার ভিত্তিতে প্রতিবন্ধী মানুষের পরিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক ও জনজীবনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে। জনপ্রতিনিধিদের সরাসরি কিংবা অবাধে বেছে নেওয়ার সুযোগ দেবে। এর মধ্যে যেমন ভোট দেওয়া, নির্বাচনে দাঁড়ানো ইত্যাদির অধিকার ভোগ করবে। এর জন্য সরকার;
(১) ভোট দেওয়ার পদ্ধতি, সুবিধাগুলো এবং উপকরণসমূহ যেন সহজ, প্রবেশগম্য এবং বাধাহীন করবে। অথবা ভোটকেন্দ্র এবং দেওয়ার পদ্ধতি দুই-ই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব বা তাদের উপযোগী রাখবে সরকার, যেন ভোট প্রদান পদ্ধতি সহজে বোঝা এবং ব্যবহার করা যায়।
(২) কোনো রকম বাধাবিঘœ ছাড়াই নির্বাচন ও গণভোটে সব ধরনের প্রতিবন্ধী নাগরিক গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার অধিকার পাবে এবং নির্বাচনে অংশ নেবে। অফিস-আদালত বিভিন্ন দপ্তর পরিচালনাসহ সরকারের সব পর্যায়ে সকল জনগুরুত্বপূর্ণ কাজ করার অধিকার রাখে। এর জন্য যেখানে যেমন প্রয়োজন, সে অনুযায়ী সহায়ক ও নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারে সহায়তা প্রদান করবে রাষ্ট্র।
(৩) নির্বাচনে প্রতিবন্ধী মানুষেরা যেন স্বাধীনভাবে নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারে এবং তাদের অনুরোধে নিজেদের পছন্দের কাউকে সঙ্গে নিয়ে ভোট দেওয়ার অনুমতি দেবে সরকার।
(খ) সক্রিয়ভাবে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করবে সরকার, যেখানে প্রতিবন্ধী মানুষেরা বৈষম্যহীনভাবে এবং অন্য সাধারণ মানুষের সঙ্গে কার্যকরভাবে সমতার ভিত্তিতে দপ্তর পরিচালনার জন্য পরিপূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে এবং জনজীবনে তাদের অংশগ্রহণে উৎসাহিত করবে সরকার।
এর জন্য রাষ্ট্র বা সরকার যা করবে:
(১) বেসরকারি সংগঠন এবং দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি মূলধারার রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ড যুক্ত হওয়া এবং তা পরিচালনায় যেন অংশগ্রহণ করতে পারে প্রতিবন্ধী মানুষ:
(২) আন্তর্জাতিক, জাতীয়, আঞ্চলিক ও স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠন তৈরি ও সংগঠনে যোগদান করা।