ইসমাত জাহান অন্তরা
খুব আকর্ষণীয় সুন্দর মুখ দেখে ছেলেটি ফেসবুকে তাকে অ্যাড রিকোয়েস্ট পাঠাল।
একদিন পর……
হ্যালো।
মেয়েটি প্রায় ১৫ মিনিট পর উত্তর দিল- আসসালামুয়ালাইকুম।
আপনি কি করেন?
কিছু না সারাদিন বসে থাকি অনলাইনে।
ও.. কেন?
কারণ আমার অন্য কোন কাজ নেই।
আমি কি আপনার ফোন নাম্বারটা পেতে পারি?
মেয়েটি নাম্বার দিল……
কিছুক্ষণ পর ছেলেটি ফোন করল…
আপনাকে আমি সরাসরি একটা কথা বলতে চাই।
মেয়েটি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, আমি তো আপনাকে চিনতে পারলাম না।
ছেলেটি বলল আমি আবির। আপনি পলা তো?
জী, আমিই পলা। আপনি?
ঐ যে কিছুক্ষণ আগে যে নাম্বার দিলেন……
ও আচ্ছা বলুন কি বলতে চান…
আমি আপনাকে অনেক পছন্দ করি, আমি আপনাকে ভালবাসি।
কতটুকু জানেন আপনি আমার সম্পর্কে?
কিছুই না, আর আমি কিছু জানতেও চাই না।
তবে…
পলা আমি আপনাকে অনেক দিন ধরেই…
কি ছবি দেখে?
হু…
পলা হাসল।
প্লিজ পলা হাসবেন না আচ্ছা আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই (ব্যাকুল হয়ে)।
আপনি সত্যিই ভালবাসেন তো আমাকে?
বললাম তো আমার কিছুই জানার নেই, আপনি যেমন মেয়ে আমি তেমনই ……
আচ্ছা আমাকে দেখে আপনি ভয় পাবেন, আপনাদের ভাষায় আমি পঙ্গু মেয়ে।
আমি আপনার সাথে দেখা করবো। বলুন কোথায় আসতে হবে?
নিন, ঠিকানা লিখুন। আপনি আমার বাসায় আসবেন? পারবেন না সরাসরি আমার বাবাকে প্রস্তাব দিতে?
ওকে আমি আসবো আগামী পরশুদিন বিকেল ৪টা বাজে।
এখন তাহলে আমি রাখি।
কেন, প্লিজ আর একটু কথা বলুন, প্লিজ!!
আমি এখন অনলাইন এ কিছু কাজ করবো…
আপনার কাজ টা কি ?
আমি আমার ভাই এর বইগুলো সব টাইপ করি আর মাঝে মাঝে মন শান্তির জন্য অনলাইন এ বসি।
ও আচ্ছা…
ঠিক আছে তাহলে দেখা হবে আমি কি আপনাকে তুমি করে বলতে পারি পলা?
জী, পারেন আমার তাতে কোনো সমস্যা নাই……
তোমার কি আমার সম্পর্কে কিছু জানার আছে?
আপনি আমাকে খুব ভালবাসেন?
আমার তো নিজের ওপর এ নিয়ে সন্দেহ নেই, আমি তোমাকে আমার থেকেও বেশি ভালবাসি।
তাহলে দেখা হলেই আমি আপনার সব জানবো।
তুমিও আমাকে তুমি করে বল।
পলা বলল, আগে দেখা করি তারপর সব হবে। কিন্তু আমি আপনাকে আমার সম্পর্কে সব সত্যি বলেছি।
আচ্ছা আমি আসবো।
আচ্ছা আমি রাখি…
আবির তো পুরাই অস্থির…
চট জলদি ফোন দিল বন্ধু কে,
হ্যালো !!! বৃষ্টি কই তুই?
এই তো বাসায় কেন?
পলা আমাকে ওর বাসায় যেতে বলেছে।
কি বলছিস?!! কোন পলা, এটা আবার কোথা থেকে এল?
ঐ যে মেয়ে টা ফেসবুকে……
উফফফ!!!! আবির!!! আজকাল কত ফেক আইডি থাকে তুই কি গাধা?! (বিরক্ত হয়ে)।
নারে দোস্ত্ আমি ওকে আমার চাইতেও ভালবাসি।
আচ্ছা ঠিক আছে। কি করতে চাস এখন?
আমি ওর জন্য কিছু কিনতে চাই। প্লিজ তুই আমার সাথে শপিং এ যাবি?
ওকে বল কখন?
কাল সকালে…
আচ্ছা যাব। এখন রাখি?
পরদিন সারাদিন ইচ্ছে মত শপিং করতে বের হল বৃষ্টি আর আবির।
বৃষ্টিঃ দোস্ত পলার হাইট কত রে?
আবিরঃ জানি না রে জিগেস করা হয়নি।
বৃষ্টিঃ আজিব তুই না ওকে এত ভালবাসিস! আর হাইট জানিস না?
আবিরঃ না।
বৃষ্টিঃ কেমন প্রেম করিস?
আবির বিরক্ত মুখে বলল ওহ আগে আমি ওকে দেখি নি তো। কালই ওর বাবাকে বিয়ের প্রস্তাব দেবো।
বৃষ্টিঃ (অবাক হয়ে) বলিস কি ? এত বড় মজনু কবে হলি তুই? বাসায় বলেছিস?
আবিরঃ না। জানাবো পরে।
বৃষ্টিঃ তুই শুধু মুখ দেখেই পাগল হয়ে গেলি?
আবিরঃ বেহেশতের হুরও ফেইল। এত্ত সুন্দর!!!
বৃষ্টিঃ ওকে এখন যাইরে, অনেক দেরী হল চল উঠি।
পরদিন……
আজ সেই আকাঙ্ক্ষিত দিন…
আবির একটার পর একটা শার্ট বের করে আয়নাতে দেখছে নিজেকে কি পড়লে তাকে ভাল লাগবে……
উত্তেজনায় নিজেকে সামলাতেও পারছে না আবার ভয়ও লাগছে কারণ বিয়ের কথা বলবে তাও আবার কন্যার বাবার সাথে……
আবির খুব ভেবে মাথা ঠাণ্ডা করে অনেক উপহার আর মিষ্টি নিয়ে গেল পলাদের বাড়িতে।
দরজায় বেল বাজতেই মাঝারি বয়সের এক মহিলা এসে দরজা খুলে দিল।
আবিরঃ জী… আমি আবির। পলা……
ভাবীঃ ও আচ্ছা… পলা আমাকে বলে রেখেছে, আমি ওর ভাবী। আপনি একটু বসুন, আমি ওকে ডাকছি।
কিছুক্ষন পর তিনি অনেক খাবার নিয়ে এলেন সামনে……
প্লিজ নিন……
আবির বলল, পলা…
ও আসছে……
আবির খুব উত্তেজনা অনুভব করছে। মনে হয় পলা সাজগোজ করছে। একদিকে ভালই হয়েছে ও বাসার সবাইকে বলে রেখেছে। আচ্ছা পলা কি শাড়ি পড়বে? ওকে কি অনেক সুন্দর লাগছে……উফফ!!! কি ভাবছি এই সব! আমি তো সত্যিই পাগল হয়ে গিয়েছি…
ভাবীঃ কি হল তুমি তো কিছুই খাচ্ছ না। খাও, এগুলো পলাই রেঁধেছে।
আবিরঃ ও রাঁধতে জানে?
ভাবীঃ হ্যাঁ, ওর হাতের রান্নার স্বাদ ই আলাদা, খাও ভাই। আমি যাই ওকে আসতে বলি।
আবির দেখল সত্যি পায়েসটা অসাধারণ…
কিন্তু অতিরক্ত উত্তেজনায় কিছুই খেতে পারল না।
কিছুক্ষণ পর…
আবির এতটাই হতভম্ব নিজের অজান্তে কখন যে দাঁড়িয়ে গেল নিজেই টের পেলো না…
পলাঃ কি হল আপনি বসুন, দাঁড়ালেন যে!!
আবির বসতে বসতে বলল, না মানে…
আমি আপনাকে বলেছিলাম আমি আপনাদের সমাজে যাকে বলে পঙ্গু, আপনি বিশ্বাস করেন নি। আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী। জন্মের পর শিশুরা যখন হাঁটতে শেখে আমি তখন থেকে হুইলচেয়ার ব্যবহার করি।
আবির দেখছে পরীর মত সুন্দর, যেন বেহেশত এর হুর। এমন একটা মেয়ে কি করে..!!!
আবির এর মুখে একটাও কথা নেই।
আমি জানি। আপনার অবস্থা আমি বুঝি… আমাকে দেখে সবাই… কিন্তু সত্যিটা আমার কেউ মানতে চায়ও না, আর বিশ্বাসও করে না তাই আমি আপনাকে বাড়িতে ডেকেছি।
আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন।
আমার বিয়েও ঠিক হয়েছিল, বর যাত্রী এসে ফেরত যায়। আসলে আমার নিত্য সঙ্গী এই হুইলচেয়ারটিসহ সবাই আমাকে মেনে নিতে পারে না…
আবির মাথা নিচু করে কাঁদছে…
আবির আপনি কাঁদবেন না। আমরা খুব ভাল বন্ধু হয়ে থাকবো। আপনার জীবনে অনেক কেউ একজন আসবে নিশ্চয়!
আবির চুপ করেই আছে।
পলা আধো কাঁপা চাপা কান্না গলায় বলল জন্ম থেকেই আমি ভাই আর ভাবীর কাছেই মানুষ। তারা আমাকে অনেক বেশী ভালবাসেন।
আবির আপনি আমার অনেক ভাল বন্ধু হয়ে থাকবেন। নিজেকে আমার জন্য দয়া করে কষ্ট দেবেন না।
আবির কোনও কথা না বলে চলে গেল…
পলা নীরবে দেখল।
খুব আলতো করে ওর এক চোখ দিয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল।