বাড়ি4th Issue, September 2013বিশ্ব সেরিব্রাল পালসি দিবস ২০১৩

বিশ্ব সেরিব্রাল পালসি দিবস ২০১৩

 

আগামি ২রা অক্টোবর, বিশ্ব সেরিব্রাল পালসি দিবস ২০১৩, “আইডিয়াস ফর চেঞ্জ” শিরোনামে উদযাপিত হতে যাচ্ছে। মূল উদ্দেশ্য বিশ্বময় সেরিব্রাল পালসি সম্পর্কে সচেতনতার মাধ্যমে তাদের জীবনমান উন্নত করা। সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারবর্গের জন্য অনেক আশা ও সম্ভাবনার বার্তা নিয়ে এসেছে দিবসটি।

গত বছর ৪ঠা সেপ্টেম্বর বিশ্ব সেরিব্রাল পালসি দিবসের পদযাত্রা শুরু করে বিশ্বের ১৭ মিলিয়ন সিপি ব্যক্তিকে আশান্বিত করেছে। দিবস পালনের ধারনাটি আসে পঞ্চাশটি আন্তর্জাতিক সেরিব্রাল পালসি চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানের একটি গ্রুপ থেকে। অস্ট্রেলিয়ার সেরিব্রাল পালসি এ্যালায়েন্স ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনাইটেড সেরিব্রাল পালসি, বিশ্ব সেরিব্রাল পালসি দিবসের মূল উদ্যোক্তা। ক্রমান্বয়ে আরো অনেক দেশের সেরিব্রাল পালসি সেবায় নিয়জিত প্রতিষ্ঠান এই ক্যাম্পেইনের সঙ্গে যূক্ত হচ্ছে। এই বিশেষ দিনটির আয়োজনকারীরা ওয়ার্লড সেরিব্রাল পালসি ডে ২০১২ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে, প্রথম বিশ্ব সেরিব্রাল পালসি দিবসটির থীম “চেঞ্জ মাই ওয়ার্লড ইন ওয়ান মিনিট” শিরোনামে সারা বিশ্বের সিপি ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে তাদের আইডিয়া দিতে অনুরোধ করে। এই সাইটটি সিপি আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য একটি ফোরাম হিসেবে কাজ করে। যেখানে তাদের জীবনমান আরো উন্নত ও স্বাবলম্বি করে তুলতে স্বাধীন মত প্রকাশসহ তাদের দেওয়া পরিকল্পনাগুলোর বাস্তবায়নের সুযোগ পায় তারা। সাইটে প্রকাশিত সিপি ব্যক্তিদের পরিবারবর্গ ও বন্ধুদের দেয়া ব্যতিক্রমধর্মী মতামত তথা পরিকল্পনাগুলোর দ্বারা একজন সিপি ব্যক্তির সহজ চলাচল, স্বাবলম্বিতা অর্জন, প্রবেশগম্যতা, কথপোকথন বা সমাজে একীভ’ত হওয়ার জন্য বিভিন্ন আলোচনা-পরামর্শ তুলে ধরে সকলে। নির্ধারিত এক মিনিট সময় এর মধ্যে ভিডিও বা টেক্সট হিসেবেও পরিকল্পনা বা মতামতগুলো অনলাইনে প্রকাশ করার সুযোগ থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পাওয়া পরিকল্পনাগুলোর কার্যকারিতা বিচারে ভোটের মাধ্যমে পুরষ্কার প্রাপ্ত পণ্যটি নির্বাচিত করে। প্রথমবারের মত ওয়ার্লড সেরিব্রাল পালসি ডে ২০১২তে এই বিশেষ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মোট চারশ পরিকল্পনার মধ্যে আলপার সির্ভ্যান নামে তুরস্কের একজন সিপি ব্যক্তির পরিকল্পনা শর্টলিস্টে নির্বাচিত হয়। যার ফলাফল ঘোষিত হয় গত ২৭ এপ্রিল, ২০১৩তে। উল্লেখ্য যে আলপার সির্ভ্যান একটি ব্যাটারি চালিত মোটরাইজড হুইলচেয়ার ব্যবহার করেন এবং তিনি সোলার পাওয়ারে চালিত হুইলচেয়ার তৈরির পরিকল্পনা জমা দেন। পরবর্তীতে ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার একটি দল এর বাস্তব রূপ দিতে সক্ষম হন। চমৎকার একটি সৌরশক্তিতে চালিত হুইলচেয়ার বানিয়ে তারা ২৫০০০ ডলারের প্রথম পুরস্কারটি জিতে নেন। আশা করা যাচ্ছে যে আগামী ওয়ার্লড সেরিব্রাল পালসি দিবসে হুইলচেয়ারটি বাজারে ছাড়া হবে। প্রতিযোগিতাটি সফল করার পিছনে সবার আন্তরিক সহযোগিতা এবং ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার উদ্ভাবনকারি ছাত্রদের প্রচেষ্টায় তৈরিকৃত সোলার পাওয়ারে চালিত হুইলচেয়ারটি দ্বারা প্রমানিত হয় যে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করলে আমরা সিপি ব্যক্তিদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে পারবো।

এবারও ওয়ার্লড সেরিব্রাল পালসি ডে উপলক্ষ্যে গত ১৪ই জুলাই থেকে শুরু হয়েছে প্রতিযোগিতাটি। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত হতে অভিনব সব পরিকল্পনা জমা হচ্ছে সাইটটিতে। ২রা অক্টোবরে বিশ্ব সেরিব্রাল পালসি ডে উদযাপনের পরে নভেম্বর ও ডিসেম্বরে একটি গ্লোবাল ওয়ার্লড সিপি ডে প্যানেল বসবে যেখানে সবাই মিলে তিনটি পরিকল্পনাকে শর্টলিস্ট করবেন। ফেব্রুয়ারি উদ্ভাবক, গবেষক ও সমাজ সেবকদের আমন্ত্রণ জানানো হবে নির্বাচিত তিনটি পরিকল্পনার বাস্ত-বায়নের জন্য। ২১ জুলাই ২০১৪, প্রথম পুরষ্কার ঘোষনা দিয়ে ২০১৪ সালের ক্যাম্পেইন এর জন্য ওয়েবসাইট খোলা হবে।

সেরিব্রাল পালসি বা সিপি কোন রোগ অথবা অসুস্থতা নয়। এর প্রভাবে মানুষের চলাফেরায় শারীরিক অক্ষমতা প্রকাশ পায়। সাধারণত জন্মের পূর্বে অথবা পরে মস্তিস্কের কোন অংশের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সিপি হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি তাদের চলাফেরা এবং মৌখিক প্রকাশ ভঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করতে কিছুটা অসুবিধার সম্মুখিন হন। এর অর্থ এই নয় যে, ঐ ব্যক্তি মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী। সিপি আক্রান্ত কোন কোন ব্যক্তির জ্ঞান-বুদ্ধি একজন অপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির চেয়ে অনেক বেশী হতে পারে। তাই তার এবং পরিবারের জন্য সামাজিক সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। কারণ পারিবারিক ও সামাজিক সহযোগিতায় তারা একটি কর্মঠো স্বাভাবিক জীবন যাপনের সুযোগ পান এবং মেইনস্ট্রিম সমাজে চলাচলে সক্ষম  হন। প্রাথমিক পর্যায় থেকে বিশেষ শিক্ষা ও থেরাপি প্রদান করলে একজন সেরিব্রাল পালসি তে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা সম্ভব। বিশ্বে এমন অনেক সিপি ব্যক্তি রয়েছে যারা তাদের কাজের মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন করতে পেরেছেন। আমাদের দেশেও বিশ্ব সেরিব্রাল পালসি দিবসকে কেবল সেমিনার, মিটিং ও র‌্যালিতে সীমাবদ্ধ না রেখে সারা বছর ধরে আমাদের কাজ করে যাওয়া উচিত। যাতে সিপি ব্যক্তির কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে তাদের স্বাবলম্বি ও যতটা সম্ভব দক্ষ ব্যক্তিতে পরিনত করা যায়, যাতে পরিবার ও সমাজের বোঝা হয়ে নয় স্বাবলম্বী তথা সম্মানজনক জীবন যাপন করে দেশ ও জাতির উন্নয়ন সাধনে কাজ করে যেতে পারেন তারা। এটি আমাদের একে অপরের হাতে হাত মিলিয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই সম্ভব।

শারমিন রহমান (নিয়ন)

ফ্রিল্যান্স রাইটার ও অনুবাদিকা

ভলেন্টিয়ার টিচার

উইলিয়াম এন্ড মেরি টেইলর (ইনক্লুসিভ)স্কুল,

বিশেষ শিক্ষা বিভাগ, সিআরপি-সাভার।

সর্বশেষ

চাকরি নামক সোনার হরিণ নিয়ে যখন তামাশা!

প্রতিবন্ধী মানুষের জব প্লেসমেন্ট সংক্রান্ত সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ বিজনেস এন্ড ডিজেবিলিটি নেটওয়ার্ক (বিবিডিএন) এর সাথে বি-স্ক্যান’র গত ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তিনমাসের একটি চুক্তি হয়।...

মাসিক আর্কাইভ

Translate | অনুবাদ