জাভেদ সৈয়দ আলি
বিশ্বায়নের অন্যতম উপকরণ হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি খাত। বর্তমানে এই খাত অর্থ উপার্জনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ঘরে বসে বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলাপমেন্ট, প্রোগ্রামিং, এস.ই.ও সহ আরও নানা উপায়ে তথ্য প্রযুক্তি খাতের মাধ্যমে যে কেউ আজকাল অর্থ উপার্জন করতে পারেন। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া ছাড়াও মানুষের প্রতিভার বিকাশ ঘটে প্রতিনিয়ত সৃজনশীলতার মাধ্যমে। আর প্রতিটি মানুষের মতই প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য এই খাতে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। সাধারণ মানুষের মত তারাও সম আগ্রহী এ ক্ষেত্রে। কিন্তু যথোপযুক্ত পদক্ষেপ এবং সহায়ক অবকাঠামোগত ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ অভাবে এখনও পিছিয়ে রয়েছে অনেকেই। আগ্রহ সত্বেও শহুরে বাসিন্দারা পারছে না ইট কাঠের খাঁচায় আবদ্ধ হয়ে আর বিশেষভাবে গ্রামাঞ্চলের প্রতিবন্ধী মানুষেরা অসচেতনতার কারণে পিছিয়ে রয়েছে। প্রশিক্ষণ এবং পদক্ষেপ মুখ্য বিষয় তো বটেই।
তবুও আত্মিক মনোবলের জোরেই এদের মাঝে গুটি কয়েক নিজ যোগ্যতায় অসাধ্য সাধন করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন এবং অবদান রাখছেন পরিবার ও সমাজে। হয়ত এদের দেখেই আরও অনেকে অনুপ্রেরণা পাবে এবং তথ্য প্রযুক্তি খাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সাহায্য করবে। এদেরই একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আকবর হোসেন যিনি ঘর থেকে বের হবার সুযোগ পান না কিন্তু নিজের চেষ্টায় অনলাইন জগতের মাধ্যমে বিচরণ করছেন পৃথিবী ব্যাপী। নিজে নিজেই শিখেছেন গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ। তার মতে, যারা নতুন নতুন কাজ শিখতে আগ্রহী তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো বন্ধু হতে পারে গুগল। যে যা শিখতে চায় গুগলে তা লিখে সার্চ করলে বেড়িয়ে আসবে শেখার ও জানার বহু সাইট। ইউটিউবে প্রচুর ভিডিও আছে, যেসব দেখে কম্পিউটারের বেসিক সম্পর্কেও অনেক ধারণা পাওয়া যায়। তবে, সবার আগে প্রতিবন্ধী সম্প্রদায়ের প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চতর শিক্ষার পাশাপাশি ই-শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যকীয় যেহেতু রাষ্ট্র আমাদের সর্বত্র প্রবেশগম্যতা ও যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারছে না।
যতদিন সমাজের মূলধারায় আমাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি না পায় ততদিন সমাজে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি চারদেয়ালে আবদ্ধ থাকা প্রতিবন্ধী মানুষের শিক্ষা নিশ্চিতের বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে ভাবতে হবে। এর জন্য সরকারি বেসরকারি এবং সমাজের বিত্তশালীদের যথার্থ উদ্যোগ ও প্রচারণার ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। গ্রামাঞ্চলের দিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে। কর্মসংস্থানের বিনিময়ে সরকারি হাতে কলমে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি কিংবা ঘরে বসে দেশি-বিদেশি অনলাইন প্রশিক্ষণের সেবার সম্প্রসার ও প্রচারণা বাড়াতে হবে এবং বিনামূল্যে ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, মডেম এবং ব্রডব্যান্ড সুবিধাসহ এধরনের আরও ডিভাইস বিতরণ করতে হবে। এই সম্পৃক্ততার মাধ্যমে প্রতিবন্ধী মানুষ হয়ে উঠবে স্বাবলম্বী, দেশের অর্থনীতিতে রাখতে পারবে অন্যন্য অবদান। মনে রাখা আবশ্যক এরাও দেশের সম্পদ, কেবলমাত্র সদ্বব্যবহার ও সঠিক পরিচালনা প্রয়োজন।
এভাবেই প্রতিবন্ধী সম্প্রদায়ের সঠিক পুনর্বাসনও সম্ভব। তাই সরকারের প্রতি আবেদন, দেশীয় তথ্য প্রযুক্তি খাতকে প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য অপার এক সম্ভাবনার দ্বার প্রান্তে নিয়ে যেতে তাদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দৃষ্টি দেয়া হোক।