বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশের শহর ও গ্রামাঞ্চলে স্যানিটেশন ব্যবস্থার আমূল উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। স্যানিটেশন সেক্টরের এ সাফল্য ঈর্ষণীয় হলেও এলাকাভেদে কিছু মানুষের প্রয়োজনীয় স্যানিটেশন চাহিদা মেটানো যেমন দুরূহ, তেমনি চ্যালেঞ্জও বটে।
প্রায় দুই কোটি জনগণের প্রিয় ঢাকা শহরের পথচারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, ভাসমান জনগণসহ অন্যান্য শ্রেণী-পেশার জনগণের স্যানিটেশন চাহিদা মেটানোর জন্য বর্তমানে যে সকল পাবলিক টয়লেট সুবিধা বর্তমান তা যেমন অপ্রতুল, তেমনি ব্যবহারের অনুপযোগীও বটে। প্রতিদিন এ শহরে ৫৫ লাখ মানুষের পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের প্রয়োজন হলেও এখানে ব্যবহার উপযোগী পাবলিক টয়লেটের সংখ্যা মাত্র ৪৭টি। এ বিষয়টি অনুধাবন করে ওয়াটারএইড বাংলাদেশ ও সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজ ২০১০ সালে ঢাকা শহরে বিদ্যমান পাবলিক টয়লেটের উপর একটি গবেষণা করেন। প্রাপ্ত তথ্য মতে বিদ্যমান টয়লেটের মধ্যে বেশ কয়েকটি পরিত্যাক্ত এবং বেশীরভাগই ইজারাদার কর্তৃক মামলাধীন। অধিকাংশ টয়লেটই মহিলা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ব্যবহার অনুপযোগী। বিদ্যুৎ সংযোগ ও পানির অপর্যাপ্ততা টয়লেট ব্যবহারের জন্য বড় অন্তরায়। অধিকন্তু অবস্থানগত কারণে অধিকাংশ টয়লেট ব্যবহারে ব্যবহারকারীদের বিশেষতঃ নারীদের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা ব্যাহত হয়। এ বিষয়টি অনুধাবন করে ওয়াটারএইড বাংলাদেশ ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সহায়তায় শহরে স্যানিটেশন চাহিদা মেটানো এবং সামগ্রিক জনস্বাস্থ্যের উন্নতিকল্পে নতুন পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, ভ্রাম্যমান পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থাসহ বিদ্যামান পাবলিক টয়লেটের সংস্কার, পুনঃনির্মাণ এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম উন্নয়নকল্পে ২০১৩ সাল থেকে সানরাইজ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে পাবলিক টয়লেটকে নারীবান্ধব ও প্রতিবন্ধীবান্ধব করা। পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করা। উপরন্তু টয়লেট ব্যবহার কার্যক্রম পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় একটি যুগপোযোগী মডেল প্রতিষ্ঠা করা। এই কার্যক্রমের আওতায় গাবতলী বাস টার্মিনালে ৮ কক্ষ বিশিষ্ট একটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করেছে। যেখানে নারীদের জন্য ৩টি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ২টি ও পুরুষদের জন্য ৩টি কক্ষ বরাদ্দ আছে। এছাড়াও এখানে ৪টি প্রস্রাবখানা, ১টি গোসলখানা, ১টি লকার সহ সর্বসাধারণের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সেবা প্রদানে “ন্যায্যতা ও অন্তর্ভুক্তি” বিষয়টি ওয়াটারএইডের একটি মূল ভিত্তি। তাই সকল পাবলিক টয়লেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করতে ওয়াটারএইড ও বি-স্ক্যান সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, যারা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন, তাদের নিয়ে নির্মাণকৃত গাবতলী পাবলিক টয়লেটের প্রবেশগম্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি নিরীক্ষা করেছেন ও লিখিত সুপারিশ করেছেনঃ
১. শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য বিদ্যমান দরজাটি আরও হাল্কা হওয়া প্রয়োজন।
২. দুর্বল হাত বা হাত নেই এমন ব্যক্তিদের জন্য দরজাটি সহজভাবে বন্ধ করতে বা খুলতে বিশেষ ধরনের লিভার সিস্টেম যুক্ত তালা প্রয়োজন।
৩. দরজাটি খোলা রাখতে এর পিছনে উড়ড়ৎ ম্যাগনেট লাগানো প্রয়োজন।
৪. হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের নির্বিঘ্নে টয়লেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে কমোডের সামনে উন্মুক্ত জায়গায় দেয়ালের উভয় পাশে হাতল থাকা দরকার।
৫. টিস্যু হোল্ডার আরও নিকটে রাখা প্রয়োজন যাতে সহজেই এটি ব্যবহার করা যায়।
৬. সুইচ বোর্ডের উচ্চতা হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী ব্যক্তিদের নাগালে হওয়া প্রয়োজন।
৭. পানির কলগুলো লিভার সিস্টেম যুক্ত হওয়া প্রয়োজন।
৮. প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য পাবলিক টয়লেটের আশেপাশে ও সম্মুখ সংলগ্ন স্থাপনায় প্রতিবন্ধিতার ধরণানুযায়ী বিভিন্ন চিহ্ন থাকা প্রয়োজন।
ওয়াটারএইড বাংলাদেশ উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে অন্যান্য পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করবে যা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রবেশগম্যতা বৃদ্ধিতে কার্যকারী ভূমিকা রাখতে সহায়ক হবে।
বাবুল বালা
অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম কোঅরডিনেটর- ইঞ্জিনিয়ার
ওয়াটারএইড বাংলাদেশ