প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ অনুযায়ী, প্রতিবন্ধী শিশুদেরকে বিদ্যালয়গামী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে জোর দেয়া হচ্ছে অনেক দিন ধরেই। একীভূত শিক্ষা বাস্তবায়নের তাগিদে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে (পিইডিপি) সরকারের মোটা অংকের অর্থ বরাদ্দ পেয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, মান সম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের জন্য জাতিসত্ত্বা, আর্থসামাজিক ও শারীরিক সীমাবদ্ধতার কারণে সকল শিশুর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। পিইডিপি বাস্তবায়ন হলে চাহিদাভিত্তিক অবকাঠামো উন্নয়নসহ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষার্থে বিদ্যালয়গুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী সকলের জন্য শিক্ষা উপকরণ প্রদান ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে।
জাতিসংঘ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার সনদ সিআরপিডি এর ৯ নং ধারায় প্রবেশগম্যতাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া সিআরপিডি এর ২৪ নং ধারায় এবং সদ্য পাশকৃত প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার রক্ষা ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ যার বিধি তৈরির প্রক্রিয়া থমকে আছে, সেখানেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তির শিক্ষাকে নিশ্চিত করতে ভর্তির ক্ষেত্রে বৈষম্যে করা তো যাবেই না উপরন্তু তাদের জন্য সঙ্গতিপূর্ণ বন্দোবস্ত রাখার কথা বলা হয়েছ। অথচ বাস্তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রায় সকল বিদ্যালয়ে বেশ কয়েক শ্রেণীর ক্লাস নীচতলায় নেয়ার পর তা দোতলায় স্থানান্তরিত হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী বিশেষ করে যারা সহায়ক উপকরণের সাহায্যে চলাচল করেন তাদের জন্য বিদ্যালয়গুলোতে লেখাপড়া চালিয়ে নেয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
যেহেতু একটি শিশুকে তার দিনের বেশীরভাগ সময় বিদ্যালয়েই কাটাতে হয় তাই সেখানকার পরিবেশ তাদের অনুকূল হওয়াটাই বাঞ্চনীয়। এক্ষেত্রে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর শিক্ষা নিশ্চিত করতে তাদের উপযোগী ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক। প্রয়োজনীয় উপকরণ ও প্রশিক্ষণও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিদ্যালয়গুলো প্রতিবন্ধীবান্ধব করতে সরকারের নেয়া উদ্যোগের বিষয়ে কতোটা সচেতন শিক্ষকগণ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্নের ঝড় উঠেছে জনমনে। একদিকে একীভূত শিক্ষা বাস্তবায়নের প্রত্যাশায় প্রহর গুনছেন প্রতিবন্ধী মানুষেরা অপরদিকে সরকারি বেসরকারি মূলধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা প্রাপ্তির অধিকার হতে বঞ্চিত তারা। গুটিকয়েক যারা মূলধারায় শিক্ষা গ্রহণ করছেন তাদের বেশিরভাগ হচ্ছেন অবহেলিত। শ্রবণ-বাক শিক্ষার্থী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এবং বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের রয়েছে বিশেষায়িত বিদ্যালয়। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা না পারে বিশেষ স্কুলে পড়তে না পারে মূলধারার বিদ্যালয়ে। মূলত অবকাঠামোগত বাধা, শিক্ষক এবং কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতাই এর প্রধান অন্তরায়। তাহলে তারা শিক্ষা গ্রহণ করতে যাবে কোথায়?
এদিকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত ১২টি বিশেষায়িত স্কুল এবং মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত আরো বেশ কিছু বেসরকারী স্কুল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় আসার কথা। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর চূড়ান্ত খসড়াতে উল্লেখ করা হয়েছিল, বিশেষায়িত স্কুলগুলো প্রাথমিক শিক্ষা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর করা দরকার। দেশের সকল শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে কেন বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থার নামে বিচ্ছিন্ন করে আজও এর সকল কার্যক্রম ও সিদ্ধান্ত পরিচালিত হচ্ছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে? অপ্রতুল জনবল, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাবে এই স্কুলগুলোর শিক্ষা ব্যবস্থা প্রায় মুখ থুবড়ে আছে। অনেকে মনে করেন, এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা তা বিশেষায়িত হোক বা যা কিছু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। সকল ধরনের শিক্ষার্থীদের জন্য একীভূত শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের পাশাপাশি সমন্বিত দৃষ্টি শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্যোগ যেভাবে নেয়া হয়েছে সেভাবেই প্রতিটি সরকারি বিদ্যালয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সকল ধরনের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য এমন কার্যক্রমের উদ্যোগ নেয়া এখন সময়ের দাবী।