সাজিয়া আফরিন তন্বী
দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য ও সেবা বিপণন ও বাজারজাতকরণের উদ্দেশ্যে ধানমন্ডিস্থ রাপা প্লাজার ৪র্থ ও ৫ম তলায় বিগত ১৬-১১-১১ তারিখে স্থাপিত হয়েছে ‘জয়িতা’ বিপণন কেন্দ্র। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে ১৬,০০০ এর অধিক নিবন্ধিত স্বেচ্ছাসেবী মহিলা সমিতি রয়েছে। এসকল নারী উদ্যোক্তাদের পর্যাপ্ত ও অনুকূল নারীবান্ধব অবকাঠামো তৈরী করে দেওয়ার লক্ষ্যেই ‘জয়িতা’ স্থাপিত হয়। সর্বোপরি নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন এবং দেশের দারিদ্র বিমোচনের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে সাধুবাদ।
আমরা, বি-স্ক্যান এর স্বেচ্ছাসেবীদের ছোট্ট একটি দল ‘জয়িতা’র এই কার্যক্রম ঘুরে দেখতে গিয়ে আরো এক অনন্য উদ্যোগের দেখা পেলাম। প্রতিবন্ধীবান্ধব সমাজের লক্ষ্যে এবং প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে চালিয়ে যাওয়া প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্য চমৎকার একটি কার্যক্রম শুরু করেছেন তারা। ‘জয়িতা’র অ৬৩ নম্বর স্টলটি সম্পূর্ণভাবে পরিচালনা করছেন প্রতিবন্ধী মানুষ নিজেরাই। দেখলাম, এ দেশের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও অধিকারবঞ্চিত এ মানুষগুলো কি সুনিপুণ দক্ষতায় সমাজকে বেঁধে রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ওড়না, থ্রিপিস, শাড়ি, ব্যাগসহ মহিলাদের বিভিন্ন রকম জিনিস পাওয়া যায় সেখানে। এছাড়াও রয়েছে নকশী কাঁথা, মাটির তৈরী শোপিস, কার্ড ইত্যাদি। ক্রেতাদেরকেও নিজেদের তৈরী পণ্য দেখাচ্ছিলেন তারা।
স্টলটিতে কর্মরত শাহনাজ আপার সাথে কথা বলে জানলাম-পূর্বে তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের জন্য মধ্যস্বত্ত্ব ভোগীদের উপর নির্ভর করতে হত। ‘জয়িতা’র মাধ্যমে সেসকল উৎপাদিত পণ্য ও সেবা সরাসরি বাজারজাতকরণের টেকসই পথ খুঁজে পেয়েছেন তারা। তারা আশা করছেন এ ধরনের উদ্যোগ পরবর্তীতে আরও নেয়া হবে। জেনে অবাক হলাম-এত দক্ষভাবে তৈরি প্রত্যেকটা জিনিসই প্রতিবন্ধী মানুষের হাতেই তৈরী। নকশী কাঁথাগুলোর প্রতিটি সুতোয় বুনেছেন এক ‘বৈষম্যহীন সমাজ’ এর স্বপ্ন। প্রতিটি জিনিসের নিঁখুত কাজগুলো যেন তাদের সুদৃঢ় ইচ্ছাশক্তির প্রমাণ দিয়ে চলেছে। এসব নকশী কাঁথা পাওয়া যাবে ২,০০০ থেকে শুরু করে ৩,৫০০ টাকার ঊর্ধ্বে। ব্লক, বাটিকের সুতি থ্রিপিস পাওয়া যাবে ৬০০ থেকে ২,৫০০ টাকার মধ্যে। হাতে তৈরী কার্ডগুলোর মূল্য ৮০-১৫০ টাকা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের প্রতিবন্ধী মানুষের কাছ থেকে তৈরী হয়ে আসে এসব পণ্য। তবে তুলনামূলকভাবে ময়মনসিংহ, জামালপুর, জয়শূড় থেকে বেশি পণ্য আসে বলেই জানালেন শাহনাজ আপা।
ওনার সাথে কাজ করছিলেন আরেকজন বন্যা আপা। ছোটবেলায় টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে দু’টি পায়ের চলনশক্তি হারিয়েছেন তিনি। অথচ চলনক্ষমতাহীন দু’টি পা নিয়েও দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তার প্রয়াস দেখে মুগ্ধ হলাম। প্রত্যাশা জাগলো মনে, এমন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নেয়া প্রয়াসগুলো একদিন সমাজে বড় ধরণের পরিবর্তন বয়ে আনবে। ইচ্ছাশক্তির কাছে সব ধরণের প্রতিবন্ধিতার পরাজয় সবসময় এভাবেই হবে।