অপরাজেয় প্রতিবেদক এক্সপোর্ট প্রসেসিং ব্যুরোর পক্ষ থেকে এবারের ঢাকা বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গন প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য প্রবেশগম্য বলে জানানো হলেও আদতে তা আংশিক প্রবেশগম্য হয়েছে বলে দাবী করেন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বেশ কিছু সংগঠন। তারা জানান প্রথমে মেলা প্রাঙ্গন প্রবেশগম্য হয়েছে জানতে পেরে আমাদের যে আনন্দ উচ্ছ্বাস ছিল স্বাভাবিকভাবেই তাতে ভাটা পড়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, প্রধান ফটকে একটি স্থায়ী র্যাম্প নির্মাণ করা হলেও সেটি বিপদজনকভাবে খাড়া। দু’পাশে নেই সহায়ক রেলিং। তবে এবছরের মেলা প্রাঙ্গনে সাধারণ মানুষের সাথে সাথে প্রতিবন্ধী মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। হুইলচেয়ার নিয়ে প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতে খুব একটা সমস্যা হয় নি বলে জানিয়েছেন মেলায় আগত হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী জহির খন্দকার। তিনি জানান, র্যাম্পটা আরো ঢালু হলে সুবিধা হত। তাহলে আর মেলায় আসতে আমাকে অন্যের সাহায্য নিতে হত না। রেলিং থাকলে আরও সুবিধা হত। তবে আগে সিঁড়ি দিয়ে কয়েকজন টানাটানি করে তোলার চেয়ে একজনের সাহায্য নিয়ে হলেও কোনভাবে এই র্যাম্প দিয়ে উঠে যেতে পারছি অন্তত। একে মন্দের ভাল বলা চলে। তবে এবারের বাণিজ্য মেলা দেখে আসা শারীরিক প্রতিবন্ধী ছোট্ট শিক্ষার্থী হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী মীম উচ্ছ্বসিত কন্ঠে জানালো, অন্যান্য বার তো আসতেই পারতাম না মেলায়। এবার র্যাম্পের কারণে বাসা থেকে বেড়াতে নিয়ে এসেছে আমাকে, তাই আমি অনেক খুশি। এদিকে কেউ বলতে পারে না মেলায় প্রবেশগম্য টয়লেটটি কোন দিকে। খুঁজে দেখা গেল মেলার টয়লেটগুলোর একটিতেও হাইকমোড নেই, র্যাম্প থাকা অনেক দূরের কথা। ইমারত নির্মাণ বিধি আইন অনুযায়ী টয়লেটের দরজা যেখানে প্রায় ছত্রিশ ইঞ্চি হওয়ার কথা সেখানে চব্বিশ ইঞ্চি চওড়া দরজা দিয়ে হুইলচেয়ার প্রবেশ একেবারেই অসম্ভব। তবে এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরোর তথ্য কেন্দ্রসহ হাতিল, নাভানা ফার্নিচার, মার্কস, ইফাদ ইত্যাদি বেশ কিছু বড় স্টলের সামনে চমৎকার কিছু র্যাম্প রয়েছে যদিও তাতেও রেলিং নেই। এদিকে মেলা প্রাঙ্গনের অন্যান্য অসংখ্য স্টলগুলোর সামনে ধাপে ধাপে যেখানে সিঁড়ি রয়েছে, প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য সেখানে নেই কোন র্যাম্প ।
মেলায় ঘুরলেও স্টলে ঢুকতে অনেকেরই সমস্যা হচ্ছে। দুঃখ প্রকাশ করে জহির খন্দকারের মা বললেন, বাইরের দেশে অ-প্রতিবন্ধী মানুষের সাথে সাথে প্রতিবন্ধী মানুষের চলাচলের সুবিধা সহায়ক ব্যবস্থা চিন্তা করেই সব কিছু করা হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মত এমন একটি মেলার সকল স্টল প্রবেশগম্য নয়, এটা আসলে দুঃখজনক। এ বিষয়ে মেলার ইজারাদার মীর শহীদুল আলম বলেন, মূল ফটকের দায়িত্ব আমার ছিল। আমি সেখানে র্যাম্প এর ব্যবস্থা করেছি। ভেতরের স্টল কিংবা টয়লেটের দায়িত্ব ইপিবির। কিন্তু এ বিষয়ে জানার জন্য ইপিবির সচিব জনাব ড. এ এফ এম মনজুর কাদির এর সাথে কয়েকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন এ প্রতিবেদক। উল্লেখ্য, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বি-স্ক্যান এর পক্ষে ২০১৪ এর বাণিজ্যমেলা প্রবেশগম্য করার বিষয়ে এক্সপোর্ট প্রসেসিং ব্যুরোর ভাইস প্রেসিডেন্ট বরাবর চিঠি দেয়া হলে তিনি পরবর্তী বছরের মেলায় প্রবেশগম্যতা ব্যবস্থা রাখার আশ্বাস দেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৯শে ডিসেম্বর’১৪ এবারের বাণিজ্য মেলায় প্রবেশ পথ, টয়লেট এবং কিছু কিছু প্যাভেলিয়নে র্যাম্পের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে মেলা শুরুর আগে জানিয়েছিলেন এক্সপোর্ট প্রসেসিং ব্যুরোর সচিব ড. এ এফ এম মনজুর কবির সাহেব। এই খবরে প্রতিবন্ধী মানুষেরা উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেও মেলায় গিয়ে অনেকে নিরাশ হন। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী উন্নয়ন কর্মী অপরাজেয়কে বলেন, র্যাম্পের রেলিং না থাকলে বেশি সমস্যায় ভোগেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষেরা। আর রেলিং অন্যান্য ধরণের প্রতিবন্ধী মানুষের ধরে উঠা নামার ক্ষেত্রেও খুব কাজে লাগে। আর এটি বেশি খাড়া হলে ক্রাচ এবং হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী মানুষের উঠা নামা বিপদজনক হয়ে পড়ে। এ কারণেই আমরা বারেবারে অনুরোধ করি, প্রতিবন্ধী মানুষের যে কোন ধরণের চাহিদা পূরণের কাজে তাদের সম্পৃক্ত করা অত্যন্ত জরুরী। প্রবেশগম্যতা নির্মাণে আর্থিক অপব্যয় বাড়তেই থাকবে যদি না তাদের চাহিদা জেনে বুঝে কাজ করা হয়।
অপরদিকে মেলায় নিরাপত্তার জন্য বসানো অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পও ছিল না প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য প্রবেশগম্যতা। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে দায়িত্বরত ওসি এড়িয়ে যান বিষয়টি। তবে কর্মরত অপারেটর জুলাশ উদ্দিন বলেন, আমাদের অফিসের সামনে কেউ অভিযোগ নিয়ে এলে আমরা আমাদের লোক দিয়ে তাকে উঠিয়ে নেব। এখানে সবার নিরাপত্তা দিতেই আমরা সর্বদা প্রস্তুত। এছাড়া ভবিষ্যতে মেলা প্রাঙ্গনে অন্যান্য সব জায়গাতেই প্রবেশগম্যতা পাওয়া যাবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন মেলায় আগত প্রতিবন্ধী মানুষেরা।