সম্পূর্ণ ব্রেইল ব্যালট পেপারে ভোট প্রদানের মাধ্যমে গত ২০ মার্চ, ২০১৫ বাংলাদেশ ভিজ্যুয়ালী ইম্পেয়ার্ড পিপলস সোসাইটি (ভিপস) এর ৫ম কার্যকরী কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনটির প্রায় দেড় শতাধিক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সদস্য স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ভোটাধিকার প্রয়োগ করে ভিপসের ইতিহাসে এবারই প্রথমবারের মতো একজন নারী সদস্যকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করেছে।
এদিকে সংগঠনটির নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক জনাব নাজমা আরা বেগম পপি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নারী সদস্য হিসেবে প্রথম বারের মতো নির্বাচিত হওয়াতে বিভিন্ন ডিপিও সংগঠনের পক্ষ থেকে তাকেসহ ভিপসকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। এই নির্বাচনে ব্রেইল ব্যালট পেপারে ভোট প্রদানের বিষয়টিও বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
আগামী দুই বছরের জন্য নির্বাচিত ১৩ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যগণ হলেনঃ মোঃ সাইদুল হক (সভাপতি), মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূইয়া (সহ-সভাপতি), ফাহিমা খাতুন (সহ-সভাপতি), নাজমা আরা বেগম পপি (সাধারণ সম্পাদক), এ.এস.এম আশিকুর রহমান (অমিত) (কোষাধ্যক্ষ), মোঃ ইফতেখার মাহমুদ (যুগ্ম সম্পাদক), শিরিন আক্তার (সাংগঠনিক সম্পাদক)। অন্যান্য নির্বাহী সদস্যগণ হলেন; সৈয়দা সানজিদা আলম, এ্যাড. নুরুজ্জাহান, মাসুদ আনোয়ার খান মিরাজ, রোকেয়া বেগম, আসাদুজ্জামান, এস এম ফেরদৌস আলম।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের অনগ্রসরতার প্রেক্ষাপটে কতিপয় অগ্রসরমান চিন্তাশীল দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের প্রচেষ্টায় ২০০৫ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় ভিপস। এটি একটি গণতান্ত্রিক ও স্বেচ্ছাসেবী এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত একটি অধিকার ভিত্তিক স্ব-সংগঠন।
ভিপসের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষায় কাজ করা, তাদের ক্ষমতায়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠাকল্পে যুগোপযোগী কর্মসূচী বাস্তবায়ন, বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী ও দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করা এবং তাদের জন্য বাধামুক্ত ও অধিকারভিত্তিক একীভূত সমাজ গঠন করাই ভিপসের লক্ষ্য। বর্তমানে ভিপসের পূর্ণ সদস্য সংখ্যা ১৫৯ জন, যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শিশু-কিশোর, যুবক-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ, জাতী-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের উন্নয়নে এবং তাদের অধিকার অর্জনে এই সংগঠনটি কাজ করে আসছে। এ লক্ষমাত্রা অর্জনের জন্য ইতোমধ্যে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মেয়াদ শেষে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ২০১১-২০১৫ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য পরিচালিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে নিয়োজিত সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনসমূহের সাথে ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কতিপয় যুগোপযোগী ও আধুনিক প্রকল্প গ্রহণ করেছে ভিপস। এছাড়াও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহায়ক সংগঠনের মধ্যে দক্ষতা বৃদ্ধি ও আন্তঃসম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। সংগঠন হিসেবে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান ও দৈনন্দিন কার্যকলাপ পরিচালনায় আধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত ও ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে এবং সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এ্যাডভোকেসি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
দ্রুত গতির ইন্টারনেট সংযোগসহ কম্পিউটার, ব্রেইল প্রিন্টার, ব্রেইল বই ইত্যাদি সহ আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একটি রিসোর্স সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছে ভিপস যেখানে প্রতিদিন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধী মানুষেরা এই তথ্য প্রযুক্তির সুযোগ সুবিধাগুলো ব্যবহার করে নিজেদের দক্ষ ও আপডেটেড রাখছে। এছাড়াও ভিপস গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রণীত প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছে।
বর্তমানে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং সাইটসেভার্সের যৌথ অর্থায়নে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বাধামুক্ত একীভূত সমাজ বিনির্মাণ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে পরিচালিত এ্যকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের আওতায় ডিজেবিলিটি ইনফরমেশন এ্যান্ড সার্ভিস সেন্টার (ডি.আই.এস.সি) প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।