অপরাজেয় প্রতিবেদক
স্যুটেড-বুটেড হয়ে দেশ-বিদেশের সর্বশেষ সংবাদ আপডেট জানাচ্ছেন একজন সুদর্শন মানুষ। এদিকে দর্শকেরা তন্ময় হয়ে চেয়ে আছেন টিভির দিকে। মুগ্ধ বিস্মিত দর্শকেরা বুঝতেই পারলেন না, যিনি সংবাদ পাঠ করছেন, তিনি একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষ।
লি চাং-হুন সারা বিশ্বের কাছে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী প্রথম ব্যক্তি, যিনি সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে নিজেকে পরিচিত করে তুললেন। নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন। অনুপ্রাণিত করলেন হাজারো দৃষ্টিহীন মানুষকে।
দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহৎ সম্প্রচার চ্যানেল কেবিসি ঠিক করল, তারা একজন প্রতিবন্ধী মানুষকে সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে নিয়োগ দেবে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল সমাজের সর্বস্তরে প্রতিবন্ধী মানুষদের সম-অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। তাদের সঙ্গে বৈষম্য না করতে সবাইকে উৎসাহিত করা। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী মানুষদের যেন সমান পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া হয়। দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য কেবিসি চ্যানেল জুন মাসের ১৭ তারিখে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। প্রায় ৫২৩ আবেদনকারীর মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই শেষে তারা লি চাং-হুনকে নিয়োগ দেয় সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে।
২৭ বছর বয়সী লি চাং-হুন ব্রেইল মেশিনের সাহায্যে নিজের সংবাদ স্ক্রিপ্ট নিজেই তৈরি করেন এবং সংবাদ পাঠ করেন। সাত মাস ধরে সফলতার সঙ্গে তিনি কেবিসি চ্যানেলে সংবাদ উপস্থাপন করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, তার প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, সংবাদ উপস্থাপনের সময় মুখের অঙ্গভঙ্গি এবং অভিব্যক্তি সবার সামনে ঠিকভাবে ফুটিয়ে তোলা। কারণ, টিভিতে সংবাদ পাঠের সময় অভিব্যক্তি অনেক জরুরি। কিন্তু তিনি দেখতে না পাওয়ার কারণে বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে। তবে তার মতে, ব্যাপারটা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। যদিও কেবিসি কর্তৃপক্ষ বর্তমানে লি চাং-হুনকে পাঁচ মিনিট করে সংবাদ উপস্থাপনের সুযোগ দিচ্ছে, কিন্তু আরও বেশি সময় উপস্থাপনের সুযোগ দেওয়ার কথা তারা বিবেচনা করছে।
তার এই দুর্দমনীয় এগিয়ে চলা এবং মনের দৃঢ়তা কেবিসি চ্যানেলের সবাইকে উৎসাহিত করেছে। লি চাং-হুন আরও বলেন, যারা প্রতিবন্ধী মানুষ হয়ে সমাজে রয়েছেন, তাদের মাঝেও অনুপ্রেরণা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।