– অপরাজেয় প্রতিবেদক
বৃহস্পতিবার ১৬ জুন ২০২২ জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সামাদ হলে প্রস্তাবিত ২০২২-২০২৩ সালের বাজেটের উপর প্রতিবন্ধী মানুষদের সংগঠনসমূহের (ডিপিও) পক্ষ থেকে বাজেট প্রতিক্রিয়া হিসেবে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনসমূহের পক্ষে বি-স্ক্যান, পিএনএসপি, ডাব্লিউডিডিএফ, ভিপস্, এবিএফ, ডিসিএফসহ বিভিন্ন জেলার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসংগঠনসমূহ সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজন করে। এর পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলনটি বি-স্ক্যান-এর ফেসবুক পেজ থেকে ফেসবুক লাইভ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সালমা মাহবুব – সাধারণ সম্পাদক বি-স্ক্যান ও পিএনএসপি, মহুয়া পাল – প্রতিষ্ঠাতা ও সিনিয়র সহসভাপতি, এবিএফ, নাসরিন জাহান – নির্বাহী পরিচালক, ডিসিএফ, হারুনউর রশীদ – সভাপতি, বিপিএসএস, জাকির হোসেন- সভাপতি, ডিডিপি, উজ্জলা বণিক – সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপস এবং সভাপতি, এসপিইউএস ।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা প্রস্তাবিত বাজেট ২০২২-২৩ এ মন্ত্রণালয়ভিত্তিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংবেদনশীল বাজেটের প্রতিফলন দেখতে না পাওয়ায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা মনে করেন যে, চলতি বাজেট প্রান্তিক মানুষের মধ্যে যারা বেকার, দরিদ্র ও নির্ভরশীল তাদের অনেকের আশা আকাঙ্খা ভেঙে দিয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব সরকারের কাছে এমন হতাশাজনক বাজেট তারা আশা করেন নি।
বিভিন্ন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠন সমূহ (ডিপিও) এর উদ্যেগে ২০২২-২৩ জাতীয় বাজেটেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাতা ন্যূনতম ২০০০ টাকা এবং চাকরিতে সমঅধিকারসহ ৭ দফা দাবি উত্থাপন কর্মসূচির আওতায় বিগত ১ এপ্রিল, ২০২২ থেকে ধারাবাহিকভাবে সারাদেশে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ এবং স্মারকলিপি প্রদান কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদানসহ সারাদেশের ২০টি জেলায়, জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। দেশব্যপি ডিপিওসমূহের তীব্র দাবি সত্ত্বেও গত ৯ জুন ২০২২ সরকার প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা মাথাপিছু মাত্র ১০০ টাকা বৃদ্ধি করে ৮৫০ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করায় তারা বিস্মিত এবং বাকরুদ্ধ।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনসমূহের পক্ষে সালমা মাহবুব বলেন, বাজেট মানে সংখ্যাগত বা পরিসংখ্যানগত তথ্য বা তত্ত্বের আড়ম্বরতা নয়। একটি বাজেট হচ্ছে সরকারের অর্থনৈতিক দর্শনের প্রতিবিম্ব। ২০১৮ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা ৭৫০ টাকা করার সময় মাথাপিছু গড় আয় ছিল ১৭৫১ ডলার এবং ৭৫০ টাকায় ২০ কেজি মোটা চাল পাওয়া যেত। ২০২২ সালে যখন ভাতা বাড়িয়ে ৮৫০টাকা করা হচ্ছে তখন মাথাপিছু আয় ২৮২৪ ডলার এবং ৮৫০ টাকায় পাওয়া যায় ১৭ কেজি মোটা চাল। অথচ সরকার ২০১৫ সালে জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশল পত্রে ২০২০ সালের মধ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা ১৫০০ টাকা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অন্যদিকে সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা ৩০০০ টাকায় উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। যেখানে পূর্বের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ি ১৫০০ টাকা ভাতা পূরণের কোন লক্ষণই দেখা গেল না, সেখানে আগামী তিনবছরে (২০২৫ সাল) এই ভাতা ৩০০০ টাকা দেয়া হবে তা কি আমরা আশা করতে পারি? তার উপর সরকার “অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা” নামটি সংস্কার করে নতুন নীতিমালায় “প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা” করলেও সরকারি নথিতেই তার বাস্তবায়নের কোন লক্ষণ নেই।
এছাড়া “সামাজিক সুরক্ষায় একজনকে একটির বেশি সুবিধা দেওয়া যাবে না”– এই নীতির কারণে অনেক প্রতিবন্ধী মানুষেরা শিক্ষা উপবৃত্তি বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা যে কোন একটি গ্রহণ করতে পারে। যা চরম বৈষম্যমূলক নীতি। অপরপক্ষে গত তিন বছর ধরে প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তির বরাদ্দ ও উপকারভোগীর সংখ্যা একই স্থানে দন্ডায়মান রয়েছে। এছাড়া গুরুতর প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যাদের ব্যক্তিগত সহায়তাকারির প্রয়োজন হয় তাদের অমানবিক জীবনযাপন করতে হচ্ছে। তাই তাদের জীবনের অতিরিক্ত খরচকে বিবেচনা করে কেয়ারগিভার/ ব্যক্তিগত সহায়তাকারি ভাতা প্রণয়ন করে গুরুতর প্রতিবন্ধী মানুষের প্রতি রাষ্ট্রের দায়কে স্বীকৃতি দানের আহ্বান জানানো হয়।
অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে হারুন-উর-রশীদ, সভাপতি, বিপিএসএস বলেন, ভারতের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা ৫০০০ রুপি ভাতা পান। অথচ আমরা পাই মাত্র ৭৫০ টাকা।
লিয়াকত আলী, সভাপতি, এপিপউস বলেন, সংসদে কোন প্রতিবন্ধী মানুষ না থাকায় আমাদের কথাগুলো কেউ বলে না। এমনকি ইলেকট্রিক রিক্সা চালিয়েও স্বাধীন উপার্জনের সুযোগ তারা পায় না।
জাকির হোসেন, সভাপতি, ডিডিপি বলেন, মহান জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্যবৃন্দরাই পারেন আমাদের কথা বলতে এবং বাজেটে আমাদের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে।
উজ্জলা বণিক, সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপস বলেন, প্রতিবন্ধী মানুষদেরকে কেবল প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা থাকার কারণে সকল সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এমনকী যারা অভাবের তাড়নায় রাস্তায় হাত পাতে তাদেরকেও অপমান করা হয়।
নাসরিন জাহান, নির্বাহী পরিচালক ডিসিএফ ও সভাপতি ভিপস বলেন, সরকার আমাদের জন্য যে বরাদ্দ দিচ্ছে তা কোনভাবেই মানা যায়না। এখানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বাইরে অন্য কোন মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ নেই।
মহুয়া পাল, সহসভাপতি, এবিএফ বলেন, প্রতিবন্ধী মানুষদেরকে আরো সংগঠিত হতে হবে। সরকার যাতে প্রতিবন্ধী মানুষদের কথা শোনে এবং প্রতিবন্ধী মানুষদের জীবন-জীবিকার জন্য সঠিক বরাদ্দ দেয় সেজন্য সরকারের সাথে আরো ঘনিষ্টভাবে কাজ করতে হবে।
সাধারণ নাগরিক প্রত্যাশা করে সরকার হবে গরীবের সরকার। অথচ দেখা যাচ্ছে আগামী অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের কর্মসূচির সংখ্যা ১২৩টি থেকে কমিয়ে ১১৫টি তে নিয়ে আসা হয়েছে। নতুন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। যা জিডিপি’র ২.৫৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ টাকা যা ছিল জিডিপি’র ৩.১১ শতাংশ। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মধ্যে ২৮ হাজার ৩৭ কোটি টাকা সরকারি কর্মচারিদের পেনশেন, সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ ৭ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা, বিভিন্ন প্রণোদনার অর্থ বাবদ ৫০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। পেনশেন সরকারি কর্মচারিদের অধিকার আর সঞ্চয়পত্রের গ্রাহক ধনীরাই বেশি, তাহলে এই কর্মসূচিগুলো সামাজিক নিরাপত্তাখাতে কেন অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে এবং তাদের জন্যই বরাদ্দ রাখা হচ্ছে এই খাতের সিংহভাগ? তাহলে প্রশ্ন এসেই যায় সামাজিক সুরক্ষার খাত কি আসলেই শুধু দরিদ্র মানুষের জন্য? প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃত্তির জন্য ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দও রাখা হয়েছে এই খাত থেকে, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দকে বাড়িয়ে দেখানোর প্রবণতাই কি তাহলে প্রতিবন্ধী মানুষসহ সকল ধরনের প্রান্তিক, দরিদ্র মানুষদেরকে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করে যাবে?
সরকারের ভাতাভোগীদের হাতে নগদ অর্থ পৌঁছে দিতে জি২পি পদ্ধতি চালু করতে উদ্যোগ নেয়, যা ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়। কিন্তু জি২পি সার্ভিসে রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় ভাতা প্রদান বন্ধ ছিল প্রায় ৬ মাস। সেটা এমন একটি সময় বন্ধ ছিল যখন করোনা পরিস্থিতিতে প্রতিবন্ধী মানুষের নাভিশ্বাস, যে সময়ে এই টাকাটি তাদের বেশি প্রয়োজন ছিল। কভিডকালিন পরিস্থিতি ও জি২পি পদ্ধতি চালু করার দুইবছর পার হলেও ভাতা প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা এখনো কাটে নি। এখনো অজস্র, অগনিত প্রতিবন্ধী মানুষ ভাতার আওতার বাইরে রয়ে গিয়েছে। এখানে আরও একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, ভাতার টাকাটি তিনমাস অন্তর নগদ বা বিকাশের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে, কিন্তু ভাতা প্রেরনের ম্যাসেজ কোন সময় সীমা উল্লেখ থাকে না বলে প্রতিবন্ধী মানুষের বুঝতে অসুবিধা হয় কোন তিনমাসের ভাতাটি তিনি পেলেন। মধ্যসত্বভোগীদের দৌরাত্বে অনেকেই এখনো ভাতার টাকা পাচ্ছেনই না বা সময়মত পাচ্ছেন না। এখানে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনসমূহ (ডিপিও) এর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
সরকার বাংলাদেশের ১ কোটি পরিবারকে ফ্যামিলি কার্ড দিচ্ছে। কিন্তু এই কার্যক্রমে প্রতিবন্ধী মানুষ বা তার পরিবারের যুক্ত হওয়ার কোন তথ্য উপাত্ত্ব পাওয়া যায় নি। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক তার ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যেক্তাদের তথ্যভান্ডারে নারী ও পুরুষ উদ্যেক্তাদের তথ্য রাখলেও প্রতিবন্ধী উদ্যেক্তাদের কোন তথ্য নেই। ঠিক একই অবস্থা বিরাজমান যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, মহিলা অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্যভান্ডারের। অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক যে এবারই প্রথম প্রতিবন্ধী শ্রমজীবিদের বিষয়টি জাতীয় শ্রম জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আশা করা যায় এরমধ্য দিয়ে প্রতিবন্ধী শ্রমজীবিদের সঠিক চিত্র তুলে আনা হবে। এছাড়াও ২০২০ সালের মধ্যে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র অনুযায়ী বেকার বীমার প্রচলন করার প্রতিশ্রুতি ছিল, যা এখনো বাস্তবায়ন হয় নি।
দেশের প্রতিবন্ধী মানুষের একটি বড় অংশ শুধুমাত্র “প্রতিবন্ধিতার কারণে” কর্মহীন! মূলত অবকাঠামো ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিগত বাধার কারণেই শুধুমাত্র যোগ্য ও দক্ষ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কর্মে যুক্ত হতে পারছেন না। ফলে শিক্ষিত বেকার প্রতিবন্ধী মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হচ্ছে।
এছাড়াও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা উদ্দ্যোক্তা হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে ঋণ পাচ্ছেন না। অন্যদিকে আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা গ্রহণকারিদেরকে সরকারি ঋণ গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। কারণ হিসেবে অনেক সময় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের ঋণ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অন্তর্ভুক্ত করায় এমন জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে।
তবে এবারের বাজেটে সরকারের কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপকে সংগঠনসমূহ স্বাগতম জানান। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাইরে বাজেটে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের পড়ার উপযোগী ব্রেইল বই প্রিন্টিং-এর উপর আরোপিত ভ্যাট মওকুফ করা হয়েছে। শ্রবণ প্রতিবন্ধী মানুষদের শ্রবণযন্ত্র (হিয়ারিং এইড)-এর ব্যাটারির উপর শুল্ক কমানো হয়েছে এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষদের বিশেষায়িত হুইলচেয়ার আমদানীর উপর সকল শুল্ককর মওকুফ করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মানে ১২০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে।
সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ এর আওতায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৯ গ্রহণ করেছে। এই কর্মপরিকল্পনাটি ৩৫টি মন্ত্রণালয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম ধার্য করা হলেও বিগত তিনটি বাজেটে এই কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়নের জন্য কোন বরাদ্দ দেয়া হয় নি। প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটেও এর কোনো প্রতিফলন নেই যা অত্যন্ত হতাশানজনক। এছাড়াও সামাজিক সুরক্ষা খাতের ১০টি কর্মসূচির মধ্যে কেবল অটিজম ও এনডিডি একাডেমিটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকছে। বাকী সবগুলি বরাদ্দ পাচ্ছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এমনকি ক্রীড়া কমপ্লেক্সটিও হচ্ছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে।
সিডো ও সিআরসি-এর আলোকে ২০০৯ সালের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে নারী সংবেদনশীল বাজেট, ২০১৬ থেকে শিশুবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। এটিও সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ । কিন্তু ২০০৮ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার সনদ (সিআরপিডি) বাস্তবায়ন শুরুর পর থেকে আমরা মন্ত্রণালয়ভিত্তিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়নের দাবি করে আসলেও তা এখনো আলোর মুখ দেখে নি।
বক্তাদের পক্ষ থেকে নিম্নলিখিত দাবিগুলো চলতি ২০২২-২৩ বাজেটেই জাতীয় সংসদের বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করার কথা বলা হয় –
১. ২০২২-২৩ জাতীয় বাজেটেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাতা ন্যূনতম ২০০০ (দুই হাজার) টাকা করতে হবে।
২. ২০২২-২৩ জাতীয় বাজেটেই শতভাগ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপবৃত্তি ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা, উভয়ই নিশ্চিত করতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে।
৩. অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাকরিতে নিয়োগ এবং কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণে বিশেষ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
৪. সরকারি-বেসরকারি সকল সেবার তথ্যভান্ডারে প্রতিবন্ধিতা বিভাজিত তথ্য রাখতে বাজেটে নির্দেশনা চাই।
৫. প্রতিবন্ধী মানুষের প্রবেশগম্যতা নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ করতে হবে।
৬. মন্ত্রণালয়ভিত্তিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংবেদনশীল বাজেট বাস্তবায়নে বরাদ্দ দিতে হবে।
৭. নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট (এনডিডি ট্রাষ্ট), জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (জেপিইউএফ) ও শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট-এর মাধ্যমে গুরুতর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ব্যক্তিগত সহায়তাকারী (কেয়ারগিভার/পারসোনাল এ্যাসিসটেন্ট) ভাতা চালু করতে হবে।
৮. প্রতিবন্ধী ব্যক্তির করমুক্ত আয় সীমা সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬ লক্ষ টাকায় উন্নীত করতে হবে।
৯. কর্মস্থলে ঝুঁকি বীমার গাইডলাইনে প্রতিবন্ধী মানুষের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
১০. প্রতিবন্ধী ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন প্রকল্প চালু করতে হবে।
১১. ভাল ফলাফল করে উচ্চশিক্ষায় উত্তীর্ণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ৩ (তিন) বছরের জন্য বেকার ভাতা চালু করতে হবে।
১২. অবিলম্বে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উন্নয়ন অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠন ও অভিভাবক সংগঠনের কার্যক্রমকে বেগবান করতে এবং প্রতিবন্ধী মানুষদের আরো সংগঠিত করতে সংগঠনসমূহের প্রতিটি কার্যক্রমের ব্যাপকতা অনুযায়ী সরকারি তহবিল থেকে প্রতিবছর ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অনুদান প্রদান করতে হবে।