জীবন আপন গতিতে চলে। সেই গতির সাথে তাল মিলিয়ে যারা জয়ী হয়েছেন তাদের একজন শিউলি সাথী। জন্মের পর ১৫ বছর পর্যন্ত দাঁড়ানোর শক্তি পাননি পায়ে। হাঁটতে পারতেন না বলে অনেক অবজ্ঞা-গঞ্জনার মাঝে বেড়ে উঠেছেন। মগবাজারের প্রতিবন্ধী স্কুল এসডাব্লিউআইডি বা ‘সুইড বাংলাদেশ’-এ ভর্তি হয়ে ঘুরে যায় জীবনের মোড়। সেখানেই শেখেন হাঁটা-চলা। শেখেন খেলাধুলা। হয়ে ওঠেন খেলোয়াড়। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে টপকে বিশেষ অলিম্পিকে ২০০৭ ও ২০১১ সালে বউচি আর ব্যাডমিন্টনে সোনা, রূপা এবং ব্রোঞ্জ পদক জিতে বিরল সম্মান বয়ে আনেন দেশের জন্যে। বাংলাদেশকে তুলে ধরেন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে।
এরপরেও ভাগ্যের চাকা সেভাবে ঘোরেনি। বাংলাদেশ সরকার ২০০৭ সালে একটি সংবর্ধনায় অ্যাথলেটদের কিছু টাকা দেয় এবং ২০১১ সালে শুধুমাত্র একটি ট্র্যাকসুট দেয়। নিয়তি বড় নির্মম। বিশ্বজয়ী সাথীর নিত্য সঙ্গী অভাব যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ে না। ঢাকার ধুপখোলার একটি বস্তিতে বাবা-মাকে নিয়ে থাকেন। বাবা অসুস্থ। পরিবারে সাথীই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার সাবেক শিক্ষাপ্রাঙ্গন ‘সুইড বাংলাদেশ’-এ বর্তমানে বাচ্চাদেরকে নাচ-গান শেখান। বেতন হিসেবে পান মাত্র আঠারো’শ টাকা যা তিন সদস্যের পরিবারের একমাত্র সম্বল। ভেবে পান না সামান্য এই টাকায় কিভাবে বাবা-মার ওষুধ পথ্যি যোগাবেন আর কিভাবেই বা ঘর ভাড়া দেবেন।
বাংলাদেশ বিশেষ অলিম্পিক দলের প্রশিক্ষক কাজী বিলকিস একসময় সাথীর শিক্ষকও ছিলেন। সাথীর বর্তমান পরিস্থিতি জেনে তিনি বিশেষ অলিম্পিক কর্তৃপক্ষের পক্ষে গ্রামীণফোনের ‘চলো বহুদূর’ এ সাথীর গল্প পাঠান। গ্রামীণফোন কর্তৃক নির্বাচিত এই গল্পটি নিয়ে বিজ্ঞাপন নির্মিত হলে দু’লক্ষ টাকা পান সাথী। কাজী বিলকিসের কাছে জানা যায়, গত জুনে প্রধানমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে ২০১৩ সালের বিশেষ অলিম্পিকে ফ্লোর হকিতে অংশ নেয়া ১৪ জন অ্যাথলেট আর ৩ জন কোচকে এক লক্ষ করে টাকা দিয়েছেন এবং ২০০৭ ও ২০১১ সালের ভালো ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শনকারী অ্যাথলেটদের নামও চেয়েছেন। তাই তিনি নিজ উদ্যোগে সেখানে সাথীর নাম পাঠিয়েছেন যদিও এখনো কিছু জানা যায় নি বলে জানান।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে