বাড়ি10th Issue, March 2015মেট্রোরেলকেও প্রতিবন্ধীবান্ধব করতে হবে যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিতে আন্তরিকতাই সকল উন্নতির মূল

মেট্রোরেলকেও প্রতিবন্ধীবান্ধব করতে হবে যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিতে আন্তরিকতাই সকল উন্নতির মূল

 

 

প্রতিবন্ধীবান্ধব যাতায়াত ব্যবস্থা বিষয়ে এবার অপরাজেয় এর মুখোমুখি হলেন চলচ্চিত্র অভিনেতা এবং নিরাপদ সড়ক চাই এর চেয়ারম্যান জনাব ইলিয়াস কাঞ্চন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন অপরাজেয় এর স্টাফ রিপোর্টার মুয়ায বিন জাকারিয়া।

 

 

অপরাজেয়ঃ  বর্তমান যোগাযোগ ব্যবস্থা কতটা প্রতিবন্ধীবান্ধব বলে মনে করেন?

ইলিয়াস কাঞ্চনঃ (সামান্য হেসে) প্রতিবন্ধীবান্ধবের কথা বলছেন! অ-প্রতিবন্ধীবান্ধবই বলা যায় না বর্তমান যোগাযোগ ব্যবস্থাকে। বরং অ-প্রতিবন্ধী মানুষকে নানান প্রতিবন্ধকতার মাঝে রাখা হয়েছে বলতে পারেন। যোগাযোগ ব্যবস্থার যে দশা তাতে অ-প্রতিবন্ধী মানুষের চলাফেরাই মুশকিল, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কষ্টের কথা তো ভাবাই যায় না!

 

অপরাজেয়ঃ  তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন অ-প্রতিবন্ধী মানুষের চলাফেরা সঠিকভাবে নিশ্চিত না করা অবধি প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য কিছু করার নাই?

ইলিয়াস কাঞ্চনঃ না, তা কেন হবে! অবশ্যই আছে। দেশের পরিবহন স্বল্পতা দূর করে অবশ্যই সেখানে তাদের সহায়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা রাখা দরকার। কারণ তারাও এই বাংলাদেশেরই নাগরিক এবং সর্বত্রই তাদের চলাচলের অধিকার অবশ্যই আছে।

 

অপরাজেয়ঃ  সড়ক, ফুটপাত, ওভারব্রীজ এসব কি প্রতিবন্ধীবান্ধব করা যায়?

ইলিয়াস কাঞ্চনঃ বর্তমানে আমাদের ফুটপাতগুলো সব বেদখল হয়ে গিয়েছে, সরকারের উচিত সব ঠিকঠাক করে সড়কগুলো অ-প্রতিবন্ধী মানুষের পাশাপাশি প্রতিবন্ধী মানুষের বাধামুক্ত চলাচলের বিষয়টি মাথায় রেখে পদক্ষেপ নেয়া।

 

অপরাজেয়ঃ  “নিরাপদ সড়ক চাই” প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য কি কোন কর্মসূচী রাখে?

ইলিয়াস কাঞ্চনঃ আমাদের প্রধান কাজই হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনার দরুন একজন অ-প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যেন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিতে পরিণত না হয় তা নিশ্চিত করা। আমরা আগে থেকেই সরকার এবং জনগণকে সতর্ক করছি যাতে করে সড়ক দুর্ঘটনার ফলে প্রতিবন্ধিতার হার কমে আসে।

 

অপরাজেয়ঃ  প্রতিবন্ধী মানুষের চলাচল উন্মুক্ত করতে কি অ-প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আন্তরিক হওয়া উচিত নয়?

ইলিয়াস কাঞ্চনঃ অবশ্যই উচিত। আন্তরিকতাই সকল উন্নতির মূল। একে অপরের প্রতি আন্তরিক হলে দেখবেন সমাজটাই একদিন বদলে যাবে।

 

অপরাজেয়ঃ  আপনার মতে, প্রতিবন্ধী মানুষের নিরাপদে চলাচলের জন্য সরকারে কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন?

ইলিয়াস কাঞ্চনঃ র‌্যাম্পযুক্ত যানবাহন যেমন বাস দেশের রাস্তায় নামানো উচিৎ। তবে সবচেয়ে ভাল হয় যদি মেট্রোরেলকে প্রতিবন্ধীবান্ধব করে চালু করা সম্ভব হয়। আমি বেশ কিছুদিন আগে সিঙ্গাপুরে ছিলাম। পা ভাঙার ফলে নিজেই প্রতিবন্ধিতার সম্মুখীন হয়ে ছিলাম। হাসপাতাল থেকে অনেক দূরের এক বাসা ভাড়া করে থাকতাম। প্রতিদিন চেকআপের জন্য আমাকে হাসপাতালে যেতে হত কিন্তু ট্যাক্সি ভাড়া অনেক বেশি বলে আমি তখন ক্রাচ নিয়ে দিব্যি মেট্রোরেলে যাতায়াত করতাম। বিশ্বের বেশির ভাগ শহরেই মেট্রোরেল রয়েছে। আমাদের দেশেও একে প্রতিবন্ধীবান্ধব করে চালু করা গেলে সকলেই উপকৃত হবে।

 

অপরাজেয়ঃ গত ২ মার্চ, ২০১২ এর এক সমাবেশে সড়ক ও সেতু মন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদের বিআরটিসি বাসে প্রবেশগম্যতা নিশ্চিতের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রায় তিন বছরে রাস্তায় এমন একটি বাসও চোখে পড়ে নি, এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি ?

ইলিয়াস কাঞ্চনঃ এমনই করেন তারা। আপনারা র‌্যালি করেছেন, বেশ কিছুদিন ঘুরেছেন তার পেছনে। তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে এসেছেন এবং একটা ঘোষণা দিয়ে চলে গেছেন। সবার সাথেই এমনই হয়, এমন কি আমার সাথেও। কারণ তারা জানেন আপনি সহজেই আর তাদেরকে পাচ্ছেন না। আসলে কোন জাবাবদিহিতা নাই। তাই আমরা আশা নিয়ে বসে থাকছি কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। প্রত্যেকটা সরকারই এমন, আমি দীর্ঘ বাইশ বছর ধরে ঘুরে ঘুরে নিরাপদ সড়ক নিয়ে কাজ করছি আর এই-ই দেখে আসছি।

 

অপরাজেয়ঃ  তাহলে কি আমাদের বসে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার নেই?

ইলিয়াস কাঞ্চনঃ না বসে থাকব না। তাদের কাছে যেতে হবে। বিভিন্ন ভাবে ঝাঁকাতে হবে। তারাই (মন্ত্রীরা) আমাকে বলেছেন, “আমাদের না ঝাঁকালে আমরা কোন কাজ করি না।” আসলে সমস্যা সামনে না দেখলে তারা কাজ করেন না। এটা সব সরকারেরই নিয়ম। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নতুবা, আমি গত বাইশ বছর ধরে ধাক্কার ফলে যে কাজ হয়েছে সেটা তিন বছরেই হয়ে যাওয়ার কথা।

 

অপরাজেয়ঃ  এত বছরে “নিরাপদ সড়ক চাই” আন্দোলনের সফলতা যদি ব্যাখ্যা করেন…

ইলিয়াস কাঞ্চনঃ  সফলতার কথা বললে বলতে হয়, অনেকটাই সফল। কারণ একসময় মানুষ এমনকি সরকারও বলত সড়ক দুর্ঘটনা আসলে কপালের লেখা। আমরা মানুষকে এই কুসংস্কার ধারণা থেকে বের করে এনেছি। এখন সরকার এবং সাধারণ মানুষ কেউ বলে না যে সড়ক দুর্ঘটনা ভাগ্যের লিখন। গোটা দেশের মানুষের এই যে মানসিক পরিবর্তন এটা কিন্তু অনেক বড় একটা বিষয় এবং এই কাজটিই সফলতার সাথে করেছে “নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)”।

 

অপরাজেয়ঃ  অনেক ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান সময় আমাদের দেয়ার জন্যে।

ইলিয়াস কাঞ্চনঃ অপরাজেয়র জন্যেও অনেক শুভকামনা।

 

সর্বশেষ

চাকরি নামক সোনার হরিণ নিয়ে যখন তামাশা!

প্রতিবন্ধী মানুষের জব প্লেসমেন্ট সংক্রান্ত সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ বিজনেস এন্ড ডিজেবিলিটি নেটওয়ার্ক (বিবিডিএন) এর সাথে বি-স্ক্যান’র গত ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তিনমাসের একটি চুক্তি হয়।...

মাসিক আর্কাইভ

Translate | অনুবাদ