বি-স্ক্যান’র বাংলা সার্বজনীনগম্যতার নির্দেশনাবলী মনোনয়ন পেল জিরো প্রজেক্টের সংক্ষিপ্ত তালিকায়

বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্যা চেঞ্জ এন্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাস (বি-স্ক্যান) এর বাংলা সার্বজনীনগম্যতার নির্দেশনাবলী (www.buag.info) সংক্রান্ত কার্যক্রম অস্ট্রিয়া ভিত্তিক ইএসএসএল ফাউন্ডেশন এর জিরো প্রজেক্ট ২০২৪ এর জন্য মনোনয়ন পেয়েছে।

২৩ আগস্ট ২০২৩ জিরো প্রজেক্টের অফিশিয়াল ই-মেইল থেকে বি-স্ক্যান বরাবর পাঠানো এক বার্তায় কর্তৃপক্ষ এই তথ্য জানায়। প্রাথমিক এই বাছাই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ডিজ্যাবিলিটি ইনক্লুশন বিশেষজ্ঞবৃন্দ অংশ নেন।

মনোয়নের কারণ ব্যাখ্যা করে জিরো প্রজেক্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, বি-স্ক্যান’র বাংলা সার্বজনীনগম্যতার নির্দেশনাবলীটি সরাসরি  টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও জাতিসংঘের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার সনদের সাথে সম্পর্কিত। একই সাথে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ার কাজে প্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বি-স্ক্যান এর এই কাজ গভীর ভূমিকা পালন করবে।

বিগত তিন বছর ধরে বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী মানুষের সার্বজনীনগম্যতা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে এই ওয়েবসাইট ও প্রকাশনাটি। উল্লেখ্য মাস স্টুডিও এর কারিগরি এবং ইউএনডিপি’র আর্থিক সহযোগিতায় ২০২১ সালে বি-স্ক্যান এই কার্যক্রমটির উদ্যোগ নেয়। ইতোমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্কে এই নির্দেশনাবলীটি যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে প্রচারণা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠন (ডিপিও) সমূহকে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান কর্মসূচি অব্যহত রয়েছে।

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি-এই ধারণাকে সামনে রেখে জিরো প্রজেক্ট বিশ্বব্যাপী সৃজনশীল চর্চার ধারণা আহবান করে। আহবানে সাড়া দিয়ে সারা বিশ্বের ৯৭টি দেশ থেকে মোট ৫২৩টি ধারণা জমা দেওয়া হয়। মনোয়ন প্রক্রিয়াটি এ বছরের মে মাসে শুরু হয়ে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে শেষ হয়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই বি-স্ক্যান এর বাংলা সার্বজনীনগম্যতার নির্দেশনাবলিটি জিরো প্রজেক্ট কর্তৃপক্ষ জিরো প্রজেক্ট ২০২৪ এর সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান দেয়। যা কিনা বি-স্ক্যান এর জন্য এক অনন্য অর্জন। কারণ পথ চলার শুরু থেকেই বি-স্ক্যান প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং অভিগম্য সমাজের জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। চুড়ান্ত ফলাফল ৩ ডিসেম্বর জানা যাবে।

মনোনয়নের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ৬টি মহাদেশের ৬২টি দেশ থেকে মোট ১৬৪টি পলিসি এবং প্র্যাক্টিস স্থান পেয়েছে। জিরো প্রজেক্ট জাতিসংঘ ঘোষিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার সনদের আলোকে বিশ্বব্যাপী প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বাধামুক্ত (জিরো ব্যারিয়ার) সমাজ ও আইনি সহায়তা সেবা উন্নয়নের জন্য সমাধানকল্পে কাজ করে।

বাংলা সার্বজনীনগম্যতার নির্দেশনাবলী বিষয়ক সচেতনতা কর্মশালা

নিজস্ব সংবাদদাতা –

২২ জুন ২০২৩ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্য চেঞ্জ এন্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাস (বি-স্ক্যান) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্বজনীনগম্যতার উপর এক কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালাটি বুয়েটের স্থাপত্য স্টুডিও হলে আয়োজিত হয়। এতে বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগ সহ, পুরকৌশল বিভাগ এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে।

শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এই কর্মশালায় বিভাগীয় প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেন পুরকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব সুমাইয়া আফরোজ সুমা, স্থাপত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব মাহেরুল কাদের প্রিন্স এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রভাষক জনাব মোঃ ওয়ালিউল্লাহ। এছাড়া স্থাপত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মোঃ জাকিউল ইসলাম কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন।

বি-স্ক্যানের সহকারি সমন্বয়কারি মাহফুজুর রহমানের সঞ্চালনায় শুরু হওয়া এ কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বি-স্ক্যান’র সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব। কর্মশালাতে সালমা মাহবুবসহ মাস স্টুডিও এর স্থপতি ফাহিম হাসিন সহন এবং হাউজ বিল্ডিং এন্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট (এইচবিআরআই) – এর রিসার্চ আর্কিটেক্ট মঞ্জুর পারভেজ তাদের তিনটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন।

উল্লেখ্য যে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) ২০২০ এর সার্বজনীনগম্যতার অংশটি বি-স্ক্যান ইউএনডিপির আর্থিক ও মাস স্টুডিও এর কারগরি সহযোগিতায় “বাংলা সার্বজনীনগম্যতার নির্দেশনাবলী” বা Bangla Universal Accessibility Guideline (www.buag.info) হিসেবে একটি আলাদা ওয়েবসাইট তৈরি করেছে। বি-স্ক্যান চেষ্টা করছে বাংলা ভাষায় ইউনিকোডে তৈরি সার্বজনীনগম্যতার এই অনন্য নির্দেশনাবলীটি প্রকৌশলী ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে যাতে তারা এর সর্বোচ্চ ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠে এবং প্রবেশগম্য বাংলাদেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখে। এছাড়াও বর্তমানে এইচবিআরআই, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্থাপত্য অধিদপ্তর, গণপূর্ত অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটের সাথেও এই নির্দেশনাবলীটি গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্কে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে।

কর্মশালায় বুয়েটের তিনটি বিভাগ থেকে আগত ৩৩ জন শিক্ষার্থীদের ডিজেবিলিটি ওরিয়েন্টেশন এবং  সার্বজনীনগম্যতার নির্দেশনাবলীটি সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হয় এবং পরে এর  উপর ভিত্তি করে তাদেরকে সার্বজনীন নকশা তৈরির কাজ দেয়া হয়। কর্মশালাটি সকাল ৯ টায় শুরু হয়ে বিকাল ৫টায় শেষ হয়। ইএমকে এর আর্থিক সহায়তায় “প্রবেশগম্য বাংলাদেশ ক্যাম্পেইন” শীর্ষক স্বল্পমেয়াদি একটি প্রকল্পের আওতায় সার্বজনীনগম্যতা বিষয়ে এই সচেতনতা ক্যাম্পেইন এর আয়োজন করা হয়।

 

প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনের মাধ্যমে নবনির্মিত গণস্থাপনা উন্মুক্ত করার পূর্বে সার্বজনীনগম্যতা নিরীক্ষার দাবি

-অপরাজেয় প্রতিবেদক

বিশ্ব প্রবেশগম্যতা সচেতনতা দিবস উপলক্ষে আজ ২০ জুন ২০২২ হাউজিং এন্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এইচবিআরআই) এবং বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্যা চেঞ্জ এন্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাস (বি-স্ক্যান) এর যৌথ আয়োজনে মিরপুর এইচবিআরআই এর সভাকক্ষে প্রবেশগম্য বাংলাদেশ এবং বিএনবিসি ২০২০ শীর্ষক একটি মত বিনিময় সভা আয়োজন করা হয়।

প্রতিবন্ধী মানুষের সার্বজনীনগম্যতার সাথে যুক্ত গৃহায়ন ও গনপূর্ত মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অধিদপ্তর বা বিভাগের প্রতিনিধিগণ আয়োজনে অংশ নেন। বি-স্ক্যান’র পক্ষ থেকে এইচবিআরআই এর মহাপরিচালক যিনি সভার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তাঁকে এরকম একটি অনুষ্ঠান আয়োজনে সম্মত হওয়ায় আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।

প্রবেশগম্য বাংলাদেশ গড়ার পথে বি-স্ক্যান’র ১২ বছরের সংগ্রাম নিয়ে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বি-স্ক্যান’র সমন্বয়কারি ইফতেখার মাহমুদ। তিনি তার উপস্থাপনায় জানান প্রকল্প নির্ভর না হয়েও বি-স্ক্যান কিভাবে নানা পহ্নায় প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য সার্বজনীনগম্যতার বিষয়টিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন তা তুলে ধরেন। এছাড়াও এই কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে তাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তাও তার বক্তব্যে উঠে আসে। সবশেষে তিনি এইচবিআরআইসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিনিধিদের কাছে কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন যার মধ্যে ছিল – বিএনবিসি’র নতুন সংস্করনের কমিটিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব রাখা, নব নির্মিত গণস্থাপনা উন্মুক্ত করে দেয়ার আগে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনের মাধ্যমে সার্বজনীনগম্যতার নিরীক্ষা করিয়ে নেয়া, সার্বজনীনগম্যতার উপকরণসমূহ সহজলভ্য করা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার ও সুরক্ষা আইনের জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৯ অনুযায়ি প্রবেশগম্যতা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করা, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্ব প্রবেশগম্যতা সচেতনতা দিবসকে সি গ্রেডের দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া উল্লেখযোগ্য।

বি-স্ক্যান’র পক্ষ থেকে ইউএনডিপি’র অর্থায়নে মাস স্টুডিও এর সহযোগিতায় বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) ২০২০ এর সার্বজনীনগম্যতার অনুসরণ করে বাংলায় সার্বজনীনগম্যতার নির্দেশনাবলীর একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে, যা সকল স্তরের মানুষের কাছে প্রবেশগম্যতার বিষয়টিকে সহজ করে তোলা যাবে বলে আশা করা যায়। এই ওয়েবসাইটটি সকল ধরনের প্রতিবন্ধী মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে তৈরি করা হয়েছে বলে জানান মাস স্টুডিও দলের প্রতিনিধি স্থপতি ফাহিম হাসিন সহন।

আইএবি এর সম্পাদক স্থপতি জনাব বায়েজিদ মাহবুব খন্দকার বলেন, তিনি নতুন বিধিমালায় কী করে প্রতিবন্ধী মানুষের সার্বজনীনগম্যতার বিষয়টি সুষ্পষ্টভাবে রাখা যায় তা জানাবেন। তাছাড়া তিনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনের মাধ্যমে প্রবেশগম্যতা নিরীক্ষার বিষয়টি যুক্ত করার বিষয়ে একমত প্রকাশ করেন। এছাড়াও তিনি ভবন নির্মান কাজের সময় একজন প্রবেশগম্যতা বিষয়ক পরামর্শক নিয়োগের কথা জানান।

এলজিইডি-এর প্রকৌশলী মো. আ. রাজ্জাক  জানান যে, পাচঁতলা ভবনের নিচে লিফট না লাগানোর বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। তাই বিষয়টি পরিবর্তন করতে হলে উপরমহলের সিদ্ধান্ত লাগবে। তাছাড়া তিনি নিচতলায় ওয়ানস্টপ সার্ভিস প্রদানের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানান।

স্থাপত্য অধিদপ্তরের সিনিয়র সহকারি স্থপতি সিদ্দিকা নাসরিন সুলতানা বলেন যে, সার্বজনীন প্রবেশগম্যতার বিষয়টি কেবল লিফট, র‍্যাম্প বা টয়লেটে সীমাবদ্ধ না রেখে মানুষের চলাচল ও সেবাকে গ্রহণযোগ্য করতে সার্বিকভাবে বিষয়টি দেখতে হবে। তবেই বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। আর আজকের মতবিনিময় সভার মত এমন অনুষ্ঠান আরও বেশি বেশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আয়োজন করতে হবে।

ডিপিএইচই এর নির্বাহী প্রকৌশলী ও আইইবি এর সহসভাপতি প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান জানান যে, আমাদের নীতিমালা ও আইনে সার্বজনীনগম্যতার বিষয়সমূহের উল্লেখ আছে। এখন দরকার প্রয়োগ। বি-স্ক্যানের মতো প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সকল প্রান্তিক বা পিছিয়ে পড়া মানুষের অবাধ ও সুষ্ঠু চলাচল ও সেবা প্রাপ্তির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।

এইচবিআরআই এর মহাপরিচালক জানান যে, প্রতিবন্ধী মানুষসহ বয়স্ক ব্যক্তি, গর্ভবতী নারী, নারী, শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি, দূর্ঘটনায় আহত ব্যক্তি সকলেরই সার্বজনীনগম্যতার প্রয়োজন রয়েছে। তাই আমাদের প্রতিষ্ঠান কী করে প্রতিবন্ধী মানুষদের সাথে কাজ করতে পারে সেজন্য আমরা বি-স্ক্যান -এর সাথে যৌথভাবে কাজ করে যেতে পারি। তিনি সকলকে আসার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং প্রাপ্ত আলোচ্য বিষয়সমূহ কাজে লাগানোর অনুরোধ করেন।

এইচবিআরআই এর পক্ষে মো. নাফিজুর রহমান প্রিন্সিপাল রিসার্চ অফিসার স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং বি-স্ক্যান’র পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন নিগার সুলতানা, জনসংযোগ সম্পাদক, বি-স্ক্যান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বি-স্ক্যান’র সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব।

মন্ত্রণালয়ভিত্তিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংবেদনশীল বাজেট চাই

– অপরাজেয় প্রতিবেদক

বৃহস্পতিবার ১৬ জুন ২০২২ জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সামাদ হলে প্রস্তাবিত ২০২২-২০২৩ সালের বাজেটের উপর প্রতিবন্ধী মানুষদের সংগঠনসমূহের (ডিপিও) পক্ষ থেকে বাজেট প্রতিক্রিয়া হিসেবে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনসমূহের পক্ষে বি-স্ক্যান, পিএনএসপি, ডাব্লিউডিডিএফ, ভিপস্, এবিএফ, ডিসিএফসহ বিভিন্ন জেলার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসংগঠনসমূহ সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজন করে। এর পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলনটি বি-স্ক্যান-এর ফেসবুক পেজ থেকে ফেসবুক লাইভ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সালমা মাহবুব – সাধারণ সম্পাদক বি-স্ক্যান ও পিএনএসপি, মহুয়া পাল – প্রতিষ্ঠাতা ও সিনিয়র সহসভাপতি, এবিএফ, নাসরিন জাহান – নির্বাহী পরিচালক, ডিসিএফ, হারুনউর রশীদ – সভাপতি, বিপিএসএস, জাকির হোসেন- সভাপতি, ডিডিপি, উজ্জলা বণিক – সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপস এবং সভাপতি, এসপিইউএস ।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা প্রস্তাবিত বাজেট ২০২২-২৩ এ মন্ত্রণালয়ভিত্তিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংবেদনশীল বাজেটের প্রতিফলন দেখতে না পাওয়ায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা মনে করেন যে, চলতি বাজেট প্রান্তিক মানুষের মধ্যে যারা বেকার, দরিদ্র ও নির্ভরশীল তাদের অনেকের আশা আকাঙ্খা ভেঙে দিয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব সরকারের কাছে এমন হতাশাজনক বাজেট তারা আশা করেন নি।

বিভিন্ন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠন সমূহ (ডিপিও) এর উদ্যেগে ২০২২-২৩ জাতীয় বাজেটেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাতা ন্যূনতম ২০০০ টাকা এবং চাকরিতে সমঅধিকারসহ ৭ দফা দাবি উত্থাপন কর্মসূচির আওতায় বিগত ১ এপ্রিল, ২০২২ থেকে ধারাবাহিকভাবে সারাদেশে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ এবং স্মারকলিপি প্রদান কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদানসহ সারাদেশের ২০টি জেলায়, জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। দেশব্যপি ডিপিওসমূহের তীব্র দাবি সত্ত্বেও গত ৯ জুন ২০২২ সরকার প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা মাথাপিছু মাত্র ১০০ টাকা বৃদ্ধি করে ৮৫০ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করায় তারা বিস্মিত এবং বাকরুদ্ধ।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনসমূহের পক্ষে সালমা মাহবুব বলেন, বাজেট মানে সংখ্যাগত বা পরিসংখ্যানগত তথ্য বা তত্ত্বের আড়ম্বরতা নয়। একটি বাজেট হচ্ছে সরকারের অর্থনৈতিক দর্শনের প্রতিবিম্ব। ২০১৮ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা ৭৫০ টাকা করার সময় মাথাপিছু গড় আয় ছিল ১৭৫১ ডলার এবং ৭৫০ টাকায় ২০ কেজি মোটা চাল পাওয়া যেত। ২০২২ সালে যখন ভাতা বাড়িয়ে ৮৫০টাকা করা হচ্ছে  তখন মাথাপিছু আয় ২৮২৪ ডলার এবং ৮৫০ টাকায় পাওয়া যায় ১৭ কেজি মোটা চাল। অথচ সরকার ২০১৫ সালে জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশল পত্রে ২০২০ সালের মধ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা ১৫০০ টাকা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অন্যদিকে সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা ৩০০০ টাকায় উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। যেখানে পূর্বের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ি ১৫০০ টাকা ভাতা পূরণের কোন লক্ষণই দেখা গেল না, সেখানে আগামী তিনবছরে (২০২৫ সাল) এই ভাতা ৩০০০ টাকা দেয়া হবে তা কি আমরা আশা করতে পারি? তার উপর সরকার “অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা” নামটি সংস্কার করে নতুন নীতিমালায় “প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা” করলেও সরকারি নথিতেই তার বাস্তবায়নের কোন লক্ষণ নেই।

এছাড়া সামাজিক সুরক্ষায় একজনকে একটির বেশি সুবিধা দেওয়া যাবে না”– এই নীতির কারণে অনেক প্রতিবন্ধী মানুষেরা শিক্ষা উপবৃত্তি বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা যে কোন একটি গ্রহণ করতে পারে। যা চরম বৈষম্যমূলক নীতি। অপরপক্ষে গত তিন বছর ধরে প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তির বরাদ্দ ও উপকারভোগীর সংখ্যা একই স্থানে দন্ডায়মান রয়েছে। এছাড়া গুরুতর প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যাদের ব্যক্তিগত সহায়তাকারির প্রয়োজন হয় তাদের অমানবিক জীবনযাপন করতে হচ্ছে। তাই তাদের জীবনের অতিরিক্ত খরচকে বিবেচনা করে কেয়ারগিভার/ ব্যক্তিগত সহায়তাকারি ভাতা প্রণয়ন করে গুরুতর প্রতিবন্ধী মানুষের প্রতি রাষ্ট্রের দায়কে স্বীকৃতি দানের আহ্বান জানানো হয়।

অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে হারুন-উর-রশীদ, সভাপতি, বিপিএসএস বলেন, ভারতের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা ৫০০০ রুপি ভাতা পান। অথচ আমরা পাই মাত্র ৭৫০ টাকা।

লিয়াকত আলী, সভাপতি, এপিপউস বলেন, সংসদে কোন প্রতিবন্ধী মানুষ না থাকায় আমাদের কথাগুলো কেউ বলে না। এমনকি ইলেকট্রিক রিক্সা চালিয়েও স্বাধীন উপার্জনের সুযোগ তারা পায় না।

জাকির হোসেন, সভাপতি, ডিডিপি বলেন, মহান জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্যবৃন্দরাই পারেন আমাদের কথা বলতে এবং বাজেটে আমাদের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে।

উজ্জলা বণিক, সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপস বলেন, প্রতিবন্ধী মানুষদেরকে কেবল প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা থাকার কারণে সকল সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এমনকী যারা অভাবের তাড়নায় রাস্তায় হাত পাতে তাদেরকেও অপমান করা হয়।

নাসরিন জাহান, নির্বাহী পরিচালক ডিসিএফ ও সভাপতি ভিপস বলেন, সরকার আমাদের জন্য যে বরাদ্দ দিচ্ছে তা কোনভাবেই মানা যায়না। এখানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বাইরে অন্য কোন মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ নেই।

মহুয়া পাল, সহসভাপতি, এবিএফ বলেন, প্রতিবন্ধী মানুষদেরকে আরো সংগঠিত হতে হবে। সরকার যাতে প্রতিবন্ধী মানুষদের কথা শোনে এবং প্রতিবন্ধী মানুষদের জীবন-জীবিকার জন্য সঠিক বরাদ্দ দেয় সেজন্য সরকারের সাথে আরো ঘনিষ্টভাবে কাজ করতে হবে।

সাধারণ নাগরিক প্রত্যাশা করে সরকার হবে গরীবের সরকার। অথচ দেখা যাচ্ছে আগামী অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের কর্মসূচির সংখ্যা ১২৩টি থেকে কমিয়ে ১১৫টি তে নিয়ে আসা হয়েছে। নতুন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। যা জিডিপি’র ২.৫৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ টাকা যা ছিল জিডিপি’র ৩.১১ শতাংশ। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মধ্যে ২৮ হাজার ৩৭ কোটি টাকা সরকারি কর্মচারিদের পেনশেন, সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ ৭ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা, বিভিন্ন প্রণোদনার অর্থ বাবদ ৫০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। পেনশেন সরকারি কর্মচারিদের অধিকার আর সঞ্চয়পত্রের গ্রাহক ধনীরাই বেশি, তাহলে এই কর্মসূচিগুলো সামাজিক নিরাপত্তাখাতে কেন অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে এবং তাদের জন্যই বরাদ্দ রাখা হচ্ছে এই খাতের সিংহভাগ? তাহলে প্রশ্ন এসেই যায় সামাজিক সুরক্ষার খাত কি আসলেই শুধু দরিদ্র মানুষের জন্য? প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃত্তির জন্য ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দও রাখা হয়েছে এই খাত থেকে, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দকে বাড়িয়ে দেখানোর প্রবণতাই কি তাহলে প্রতিবন্ধী মানুষসহ সকল ধরনের প্রান্তিক, দরিদ্র মানুষদেরকে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করে যাবে?

সরকারের ভাতাভোগীদের হাতে নগদ অর্থ পৌঁছে দিতে জি২পি পদ্ধতি চালু করতে উদ্যোগ নেয়, যা ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়।  কিন্তু জি২পি সার্ভিসে রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় ভাতা প্রদান বন্ধ ছিল প্রায় ৬ মাস। সেটা এমন একটি সময় বন্ধ ছিল যখন করোনা পরিস্থিতিতে প্রতিবন্ধী মানুষের নাভিশ্বাস, যে সময়ে এই টাকাটি তাদের বেশি প্রয়োজন ছিল। কভিডকালিন পরিস্থিতি ও জি২পি পদ্ধতি চালু করার দুইবছর পার হলেও ভাতা প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা এখনো কাটে নি। এখনো অজস্র, অগনিত প্রতিবন্ধী মানুষ ভাতার আওতার বাইরে রয়ে গিয়েছে। এখানে আরও একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, ভাতার টাকাটি তিনমাস অন্তর নগদ বা বিকাশের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে, কিন্তু ভাতা প্রেরনের ম্যাসেজ কোন সময় সীমা উল্লেখ থাকে না বলে প্রতিবন্ধী মানুষের বুঝতে অসুবিধা হয় কোন তিনমাসের ভাতাটি তিনি পেলেন। মধ্যসত্বভোগীদের দৌরাত্বে অনেকেই এখনো ভাতার টাকা পাচ্ছেনই না বা সময়মত পাচ্ছেন না। এখানে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনসমূহ (ডিপিও) এর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

সরকার বাংলাদেশের ১ কোটি পরিবারকে ফ্যামিলি কার্ড দিচ্ছে।  কিন্তু এই কার্যক্রমে প্রতিবন্ধী মানুষ বা তার পরিবারের যুক্ত হওয়ার কোন তথ্য উপাত্ত্ব পাওয়া যায় নি।  অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক তার ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যেক্তাদের তথ্যভান্ডারে নারী ও পুরুষ উদ্যেক্তাদের তথ্য রাখলেও প্রতিবন্ধী উদ্যেক্তাদের কোন তথ্য নেই। ঠিক একই অবস্থা বিরাজমান যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, মহিলা অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্যভান্ডারের। অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক যে এবারই প্রথম প্রতিবন্ধী শ্রমজীবিদের বিষয়টি জাতীয় শ্রম জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আশা করা যায় এরমধ্য দিয়ে প্রতিবন্ধী শ্রমজীবিদের সঠিক চিত্র তুলে আনা হবে। এছাড়াও ২০২০ সালের মধ্যে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র অনুযায়ী বেকার বীমার প্রচলন করার প্রতিশ্রুতি ছিল, যা এখনো বাস্তবায়ন হয় নি।

দেশের প্রতিবন্ধী মানুষের একটি বড় অংশ শুধুমাত্র “প্রতিবন্ধিতার কারণে” কর্মহীন! মূলত অবকাঠামো ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিগত বাধার কারণেই শুধুমাত্র যোগ্য ও দক্ষ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কর্মে যুক্ত হতে পারছেন না। ফলে শিক্ষিত বেকার প্রতিবন্ধী মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হচ্ছে।

এছাড়াও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা উদ্দ্যোক্তা হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে ঋণ পাচ্ছেন না। অন্যদিকে আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা গ্রহণকারিদেরকে সরকারি ঋণ গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। কারণ হিসেবে অনেক সময় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের ঋণ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অন্তর্ভুক্ত করায় এমন জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে।

তবে এবারের বাজেটে সরকারের কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপকে সংগঠনসমূহ স্বাগতম জানান। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাইরে বাজেটে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের পড়ার উপযোগী ব্রেইল বই প্রিন্টিং-এর উপর আরোপিত ভ্যাট মওকুফ করা হয়েছে। শ্রবণ প্রতিবন্ধী মানুষদের শ্রবণযন্ত্র (হিয়ারিং এইড)-এর ব্যাটারির উপর শুল্ক কমানো হয়েছে এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষদের বিশেষায়িত হুইলচেয়ার আমদানীর উপর সকল শুল্ককর মওকুফ করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মানে ১২০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে।

সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ এর আওতায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৯ গ্রহণ করেছে। এই কর্মপরিকল্পনাটি ৩৫টি মন্ত্রণালয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম ধার্য করা হলেও বিগত তিনটি বাজেটে এই কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়নের জন্য কোন বরাদ্দ দেয়া হয় নি। প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটেও এর কোনো প্রতিফলন নেই যা অত্যন্ত হতাশানজনক। এছাড়াও সামাজিক সুরক্ষা খাতের ১০টি কর্মসূচির মধ্যে কেবল অটিজম ও এনডিডি একাডেমিটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকছে। বাকী সবগুলি বরাদ্দ পাচ্ছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এমনকি ক্রীড়া কমপ্লেক্সটিও হচ্ছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে।

সিডো ও সিআরসি-এর আলোকে ২০০৯ সালের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে নারী সংবেদনশীল বাজেট, ২০১৬ থেকে শিশুবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। এটিও সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ । কিন্তু ২০০৮ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার সনদ (সিআরপিডি) বাস্তবায়ন শুরুর পর থেকে আমরা মন্ত্রণালয়ভিত্তিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়নের দাবি করে আসলেও তা এখনো আলোর মুখ দেখে নি।

বক্তাদের পক্ষ থেকে নিম্নলিখিত দাবিগুলো চলতি ২০২২-২৩ বাজেটেই জাতীয় সংসদের বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করার কথা বলা হয় –

১. ২০২২-২৩ জাতীয় বাজেটেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাতা ন্যূনতম ২০০০ (দুই হাজার) টাকা করতে হবে।

২. ২০২২-২৩ জাতীয় বাজেটেই শতভাগ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপবৃত্তি ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা, উভয়ই নিশ্চিত করতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে।

৩. অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাকরিতে নিয়োগ এবং কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণে বিশেষ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।

৪. সরকারি-বেসরকারি সকল সেবার তথ্যভান্ডারে প্রতিবন্ধিতা বিভাজিত তথ্য রাখতে বাজেটে নির্দেশনা চাই

৫. প্রতিবন্ধী মানুষের প্রবেশগম্যতা নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ করতে হবে।
৬. মন্ত্রণালয়ভিত্তিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংবেদনশীল বাজেট বাস্তবায়নে বরাদ্দ দিতে হবে।

. নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট (এনডিডি ট্রাষ্ট), জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (জেপিইউএফ) ও শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট-এর মাধ্যমে গুরুতর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ব্যক্তিগত সহায়তাকারী (কেয়ারগিভার/পারসোনাল এ্যাসিসটেন্ট) ভাতা চালু করতে হবে

. প্রতিবন্ধী ব্যক্তির করমুক্ত আয় সীমা সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে লক্ষ টাকায় উন্নীত করতে হবে।

. কর্মস্থলে ঝুঁকি বীমার গাইডলাইনে প্রতিবন্ধী মানুষের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

১০. প্রতিবন্ধী ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন প্রকল্প চালু করতে হবে।

১১. ভাল ফলাফল করে উচ্চশিক্ষায় উত্তীর্ণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ৩ (তিন) বছরের জন্য বেকার ভাতা চালু করতে হবে।

১২. অবিলম্বে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উন্নয়ন অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠন ও অভিভাবক সংগঠনের কার্যক্রমকে বেগবান করতে এবং প্রতিবন্ধী মানুষদের আরো সংগঠিত করতে সংগঠনসমূহের প্রতিটি কার্যক্রমের ব্যাপকতা অনুযায়ী সরকারি তহবিল থেকে প্রতিবছর ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অনুদান প্রদান করতে হবে

 

চাকরি নামক সোনার হরিণ নিয়ে যখন তামাশা!

প্রতিবন্ধী মানুষের জব প্লেসমেন্ট সংক্রান্ত সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ বিজনেস এন্ড ডিজেবিলিটি নেটওয়ার্ক (বিবিডিএন) এর সাথে বি-স্ক্যান’র গত ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তিনমাসের একটি চুক্তি হয়। মূলত বিবিডিএন এর ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি ২০২২ অনুষ্ঠিত চাকরি মেলায় আবেদনকৃত প্রতিবন্ধী মানুষের ডাটাবেজ তৈরি করা এবং চাকরিদাতাদের চাহিদা অনুযায়ি সেই ডাটাবেজ থেকে প্রতিবন্ধী মানুষদের ইন্টারভিউ এর জন্য খুঁজে দেয়াই আমাদের মূল কাজ ছিল। তারই আওতায় টিম গ্রুপের সাথে প্রতিবন্ধী মানুষের কর্মসংস্থানে কার্যক্রম শুরু করে বি-স্ক্যান। ১৭ মে ২০২২ বেশ কিছু প্রতিবন্ধী মানুষের অনস্পট ইন্টারভিউ এর ব্যবস্থা করা হয়। যেখানে ২৪ জন পরীক্ষা দেন যাদের মধ্য থেকে ১৬ জন নিয়োগ পান।

১ জুন ২০২২ ছিল সেই ১৬ জন প্রতিবন্ধী মানুষের কাজে যোগদানের দিন। বি-স্ক্যান থেকে প্রোগ্রাম অফিসার – মাহফুজুর রহমান রাকিব গিয়েছিলেন টিম গ্রুপে তাদের এই আনুষ্ঠানিক যাত্রার সঙ্গী হতে। এভাবেই প্রতিবন্ধী মানুষদের স্বাগত জানানো হয়েছে স্বনামধন্য একটি গ্রুপের গামেন্টস ফ্যাক্টরিতে সেখানে ১৬ জনের মধ্যে যোগ দিয়েছেন মোট ১১ জন, ৩ জন কিছু ব্যক্তিগত অসুবিধার কারণে যোগ দেন নি, তবে সুখবর হলো তাদেরকেও কাজে নিয়োগ দেয়া হবে। আর ২ জন কাজ পেয়েও কাজে যোগ দেন নি।

আমাদের কাছে প্রতিদিন অনেক প্রতিবন্ধী মানুষ অনুনয়-বিনয় করেন একটি চাকরির জন্য। গত ২৬-২৭ জানুয়ারি ২০২২ বিবিডিএন আয়োজনে যে চাকরি মেলা হয়েছিল তার মধ্য দিয়ে কিছু চাকরিদাতা আগ্রহী হয়েছেন প্রতিবন্ধী মানুষকে চাকরি দিতে।  আমাদের বুঝতে হবে, এই চাকরিদাতাদের সাথে প্রতিবন্ধী মানুষের কোন উঠা বসা নেই, তাই তারা অবগত নন কোন ধরনের আর্থিক, সামাজিক ও শারীরিক সীমাবদ্ধতায় একজন প্রতিবন্ধী মানুষের কিভাবে তার জীবন ধারন করেন, দৈনন্দিন কাজকর্ম করেন। প্রতিবন্ধী মানুষকে বোঝা-পড়ার দায় কী তাদের আছে। যেখানে নিজেদের অনেক পরিবারই আমাদের বিষয়ে বুঝতে আগ্রহী হয়না। প্রতিবন্ধী মানুষের বিষয়ে উনারা শিখছেন, বোঝার চেষ্টা করছেন আর অন্যান্য সংগঠনের মতোই আমরাও (বি-স্ক্যান) চেষ্টা করছি চাকরি দাতাদের ভুল ধারনাগুলো ভেঙ্গে দিতে। প্রতিবন্ধী মানুষের কর্মদক্ষতাগুলো সম্পর্কে বুঝাতে।

আমরা প্রায় ৭৫০ চাকরি প্রার্থী প্রতিবন্ধী মানুষের ডাটাবেজ তৈরি করেছি। যেখানে ২৫টি চাকরি দাতা সংস্থা রয়েছে । তাদের মধ্য থেকে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান লোক চাওয়া শুরু করেছেন। তেমনি একটি আয়োজন ছিল গত ১৭ মে, ২০২২। একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে কমশিক্ষিত (এসএসসি পাশ) প্রতিবন্ধী মানুষ চাওয়া হয়েছে। যারা চাকরির জন্য এসেছেন তারা সব কিছু জেনে বুঝেই এসেছেন কিন্তু ফ্যাক্টরিতে যাওয়ার পর কেউ কেউ মামার বাড়ির আবদার শুরু করলেন। এই কাজ করবো না, সেই কাজ করবো না, এক মাস দেখবো ওখানে না দিলে চলে যাবো ইত্যাদি। আমরা পুরো আশ্চর্য হয়ে গেলাম তাদের আচরণে, কাজই শুরু করে নি, তার আগেই এসব কথা।

 

সারা দেশে অসংখ্য অপ্রতিবন্ধী মানুষ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন শুধু একটি চাকরির জন্য, আর উনারা এইসব এগিয়ে আসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সহযোগিতা করা তো দূরে থাক, পরিবেশটাই নষ্ট করে ফেলছেন। একবারও ভাবছেন না আমি আরও ১০ জন প্রতিবন্ধী মানুষের সুযোগ নষ্ট করছি। কেউ আপনাদের ধরে বেধে এই চাকরি করতে নিয়ে আসে নি। আপনারা স্বেচ্ছায় সেখানে গিয়েছেন। তাহলে এসব কথা কেন? এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আমরাও তো ছোট হয়ে যাচ্ছি। ওরা তো ভাববে আমরা কি লোক দিলাম যারা কাজই করতে চায় না। আগামীতে আপনাদের জন্য আমরা কাজ করি সেটা আপনারা চান না? কিছুদিন আগে বি-স্ক্যান গ্রুপে একজনের পোস্ট দেখলাম উনি জানতে চেয়েছিলেন ১৭ তারিখের ইন্টারভিউয়ের রেজাল্ট কি? আর উনি নিজে ডাক পেয়েও যোগ দেন নি। কি হাস্যকর! যেখানে প্রশিক্ষণ ছাড়া কেউ নেয় না, সেখানে এই প্রতিষ্ঠান শুধু আপনাদের যোগ দিতে বলেছেন, প্রশিক্ষণ তারা দিয়ে নেবে, তারা কি কোন অপরাধ করেছে আপনাদের চাকরি দিতে চেয়ে?

এই ঘটনা শুধু এখানে নয়, আরও অনেক ঘটেছে, ঘটছে। যেমন – গতকাল (১ জুন) একটি কোম্পানি বেশ কয়েকজন প্রতিবন্ধী মানুষ চেয়েছেন। ডাটাবেজ থেকে চাকরিদাতাদের চাহিদা অনুযায়ি লোকের তালিকা দেয়াও কিন্তু অনেক কঠিন এবং সময় সাপেক্ষ একটি কাজ। শুধু তালিকা তৈরিই নয়, এদের প্রত্যেককে আবার ফোন দিয়ে জানা হয়েছে তারা উক্ত পদে চাকরি করতে চান কিনা, যারা রাজি হয়েছিলেন, তাদেরটাই দেয়া হয়েছে। অথচ আজ যখন প্রতিষ্ঠান থেকে ৫/৬ জনকে ফোন দেয়া হয়েছে তারা কেউ বলেছেন করবেন না, কেউ বলেছেন ভেবে দেখি ইত্যাদি। বিরক্ত হয়ে ঐ প্রতিষ্ঠান থেকে আর কাউকে ফোনই দেয় নি। আমরা ১৮ জনের তালিকা দিয়েছিলাম।

 

আপনারা কি বুঝতে পারছেন কি করছেন?

চাকরি কি শুয়ে বসে আরামে আয়েশে করার কোন কিছু মনে হয়?

আপনারা কি বুঝতে পারছেন এভাবে প্রতিবন্ধী মানুষের প্রতি বিরূপ ধারনা জন্ম নিচ্ছে?

প্রতিবন্ধী মানুষকে চাকরি দিতে চেয়ে এখন কি চাকরিদাতারাই  অন্যায় করেছে?

চাকরি করার মানসিকতা যদি নাই থাকে, তবে কেন আর একজন প্রতিবন্ধী মানুষের সুযোগ নষ্ট করছেন?

 

দুনিয়ায় কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না। যদি এটা মানতে না পারেন তবে দয়া করে দুদিনের সখের চাকরি করা থেকে বিরত থেকে যাদের সত্যিই সত্যিই চাকরি দরকার এমন প্রতিবন্ধী মানুষগুলোকে বাঁচতে দিন। আপনাদের মত কিছু প্রতিবন্ধী মানুষের আচরণ সহমর্মী চাকরিদাতা এবং যারা অবস্থার পরিবর্তনের জন্য কাজ করছে তাদের নিরুৎসাহিত করছে।

সামনে যে আর্থ-সামাজিক কঠিন সময় অপেক্ষা করছে সেখানে প্রচুর মানুষ চাকরিচ্যুত হওয়ার ঝুকিতে পড়বে, এরকম একটি সময়ে আপনারা চাকরির অফার পাচ্ছেন, এমন সুযোগ কতটা কষ্টের ফল সে বিষয়ে আপনাদের কোন ধারনাই নেই।

যাই হোক আশা করি আপনারা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করবেন। সবশেষে যারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন তাদের সবাইকে বি-স্ক্যান’র পক্ষ থেকে অভিনন্দন।

– সালমা মাহবুব
সাধারণ সম্পাদক, বি-স্ক্যান

বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রতিবন্ধী মানুষের বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবিতে মানববন্ধন

আজ শনিবার ১৯ জুন, ২০২১ সকালে প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠন এইউডিসি, বি-স্ক্যান, বিডিডিটি, সিবিডিসিপিও, ডিসিএফ, ডিডিআরসি, এইচডিডিএফ, এনসিডিডব্লিউ, এনজিডিও, ডব্লিউডিডিএফ, পিএনএসপি, এসডিএসএল, সম্মেলন ফাউন্ডেশন, পিসিপিএফ, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, আকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এবং সুইড বাংলাদেশ এর অংশগ্রহণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

এবারের ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে প্রতিবন্ধী মানুষকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে বলে মানববন্ধনে আগত বক্তরা দাবি করেন। তারা জানান প্রতিবন্ধী মানুষের সংগঠনসমূহ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাথে একাধিক ওয়েবিনার, সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা দেয়া সত্ত্বেও তার একটিও কেন আমলে নেয়া হয় নি।

বিডিডিটি থেকে লাভলী বলেন, দৈনিক ২৫ টাকা হারের প্রতিবন্ধী মানুষকে কিভাবে ভাতা দেয়া হয়? এই করোনাকালিন সময়ে এটা কোন যৌক্তিক সহযোগিতা হতে পারে না।

এইচডিডিএফ এর চেয়ারম্যান রাজীব শেখ বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্ব-কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হোক।

ডব্লিউডিডিএফ থেকে রওনক জাহান উষা বলেন, সরকারকে গুরুতর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন ব্যক্তিগত সহায়তাকারীর ব্যবস্থা করতে হবে কারণ তারাও নাগরিক।

এনজিডিও এর সভাপতি সুশান্ত, ডিপিও-দের কার্যক্রমকে বেগবান করতে বাজেটে প্রতিবছর প্রতিষ্ঠান ভেদে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অনুদান দেয়ার ব্যবস্থা করার আহবান জানান।

এনসিডিডব্লিউ এর সভাপতি নাসিমা আক্তার বলেন, গত দুবছর যাবত প্রতিবন্ধী মানুষের ভাতা বাড়ানো হচ্ছে না। অতচ সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কৌশলপত্র অনুযায়ি ২০২০ সালের মধ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য ভাতা ১৫০০ টাকা করার প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন, আমরা তার বাস্তবায়ন দেখতে চাই।

ডিসিএফ এর নির্বাহি পরিচালক নাসরিন জাহান বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংবেদনশীল মন্ত্রণালয় ভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ চাই। প্রতিবন্ধী মানুষের দায়িত্ব শুধুমাত্র সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হতে পারে না। আর সরকার চাইলেই মাত্র আরো ৬০০ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ করলে প্রতিবন্ধী মানুষের ভাতা ৭৫০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা করা সম্ভব।

শানজিদা আক্তার, ডাব্লিউবিবি ট্রাষ্ট বলেন, গত দু’বছর যাবৎ প্রতিবন্ধী ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর বদলে ভাতা প্রাপ্তির আওতায়ই বাড়ানো হচ্ছে যা প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনধারণে কোন প্রভাব ফেলছে না।

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী শারমিন বলেন, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা পেলে তাদের শিক্ষা উপবৃত্তি দেয়া হবে না। কিন্তু এটা কেন হবে, প্রতিবন্ধী ভাতা জীবন ধারণের জন্যে আর শিক্ষা উপবৃত্তি তার স্বনির্ভর হওয়ার পথের পাথেয়। কোনভাবেই প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপবৃত্তি বন্ধ করা যাবে না।

সরকারি চাকরিতে প্রতিবন্ধী মানুষের কোটার সঠিক বাস্তবায়ন করার কথা তুলে ধরেন সম্মিলন ফাউন্ডেশন।

বি-স্ক্যান’র সমন্বয়কারি ইফতেখার মাহমুদ মানববন্ধনটি সঞ্চালনাকালে বলেন – আজকে সংসদে পরিমনিকে নিয়ে আলোচনা হয় কিন্তু দেশের জনসংখ্যার ১০ থেকে ১৫ ভাগ প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য অন্তত ভাতাটুকু বৃদ্ধির কথা কেউ বলে না। আমাদের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব এমপিও প্রয়োজন।

প্রতিবন্ধী নাগরিক সংগঠনের পরিষদ (পিএনএসপি) এবং বি-স্ক্যান এর সাধারণ সম্পাদক ২০১৬ সালের পর আমরা আর প্রবেশগম্যতা নিয়ে কোন বাজেটে বরাদ্দ দেখতে পাই নি। এই বরাদ্দ প্রতি বছর দিতে হবে। আজ  পাঁচতলা সরকারি ভবনে লিফট বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। আমরা মধ্যম আয়ের দেশ হতে চলেছি এখন তো দোতলাতেও লিফট থাকতে হবে। লিফট প্রবেশগম্যতার জন্য একটি প্রয়োজনীয় অংশ, এটা বিলাসবহুল গাড়ি নয় যা না হলেও চলে। তিনি অবিলম্বে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উন্নয়ন অধিদফতর বাস্তবায়নের দাবি জানান।

সকালবেলা বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রায় দেড়শ প্রতিবন্ধী মানুষ এবং তাদের সংগঠন প্রেসক্লাবের সামনে তাদের দাবি নিয়ে মানববন্ধনে সমবেত হন। তারা জানিয়েছেন যে অর্থমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ তারা পান নি, তবে সমাজকল্যাণ সচিবের কাছে তাদের ৭দফা সুপারিশ দেয়া হয়েছে। তারা আশা করছেন তাদের দাবি দাওয়ার কিছুটা হলেও সরকার এই বাজেটে বাস্তবায়নের জন্য আন্তরিকভাবে বিবেচনা করবেন।

কভিড-১৯ মোকাবেলায় প্রতিবন্ধী মানুষকে নগদ অর্থ সহযোগিতা প্রদান

অপরাজেয়

মে ১৭, ২০২০

কভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনের (ডিপিও) জাতীয় নেটওয়ার্ক প্রতিবন্ধী নাগরিক সংগঠনের পরিষদ (পিএনএসপি) এর উদ্যোগে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (জেপিইউএফ) এর সহযোগিতায় ২০ জন দরিদ্র প্রতিবন্ধী মানুষকে ২৫০০ টাকা করে নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের রায়ের বাজার, বছিলা, রামপুরা, মোহাম্মদপুর, আদাবর, মিরপুর, তিলকাপাড়া, কাজিপাড়া, পলাশি, উত্তরা, বাড্ডা, গেন্ডারিয়া, কামরাঙ্গিরচর, সাভার এলাকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেও মাঝে এই অর্থ বিতরণ করা হয়।
উলে­খ্য যে, জেপিইউএফ থেকে দরিদ্র প্রতিবন্ধী মানুষকে অর্থ সহযোগিতা জন্যে পিএনএসপিকে ৫০০০০ টাকা অনুদান প্রদানের পাশাপাশি আরও বেশ কিছু ডিপিওকে এই অনুদান প্রদান করে। করোনাকালের এই দুঃসময়ে অনুদান প্রদানের জন্য ঢাকার ডিপিওগুলোকে প্রাধান্য দেয় জেপিইউএফ। কভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রতিবন্ধী মানুষদের সংগঠন ডিপিওদেরকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিবন্ধী মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (জেপিইউএফ) প্রতিবন্ধী নাগরিক সংগঠনের পরিষদ (পিএনএসপি) এর পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
আমরা আশা করি ভবিষ্যতেও জেপিইউএফ’র এই ধরনের উদ্যোগে অব্যাহত থাকবে।

সিলেটে প্রতিবন্ধী মানুষের মানববন্ধন, চান যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মক্ষেত্র

অপরাজেয় প্রতিবেদক

যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি কিংবা আধাসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির দাবিতে গত মঙ্গলবার সিলেট শহরের কোর্ট পয়েন্টে মানববন্ধন করেন বিভিন্ন চাকরি প্রত্যাশী প্রতিবন্ধী মানুষেরা।

সারাদেশে উৎসাহের সহিত পালিত হচ্ছে মুজিব বর্ষ। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী নাগরিক ঐক্য পরিষদ সিলেটের উদ্যোগে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। গত মঙ্গলবার নগরীর কোর্ট পয়েন্টে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন সদস্য মো. মাহমুদুল হাসান, সুমন ভট্টাচার্য্য, মো. রইছ উদ্দিনসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধী মানুষেরা।   

বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী নাগরিক ঐক্য পরিষদ সিলেটের আহবায়ক ইমাম উদ্দিনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী চাকরি প্রত্যাশী প্রতিবন্ধী মানুষেরা বক্তব্যে তুলে ধরেন তাদের প্রতি বৈষম্য ও বঞ্চনার কথা। তারা জোরালোভাবে বলেন, যোগ্যতা থাকার পরও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা পাচ্ছি না চাকরি। এমনকি চাকরিরক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দকৃত কোটা থাকার ফলেও তা যথাযথভাবে মানা হচ্ছে না।
সরকারি ও আধা-সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা প্রতিবন্ধিতাকে অযোগ্য বিবেচনার নেতিবাচক ধরনায় এখনো আটকে রয়েছে। তারা বলেন, নানান প্রতিকূলতার থাকার পরও সন্মান, স্নাতক কিংবা স্নাতকত্তোর উর্ত্তীণ হয়েছি। অবকাঠামো, প্রবেশগম্যসহ নানান সামাজিক বাধা টপকে গেছি। তবুও চাকরি ক্ষেত্রে এসেও আমরা সে বৈষম্য থেকে বের হতে পারছি না। তার দায় রাষ্ট্র ও সমাজের। দুঃখজনক হলেও সত্য যে বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও আমাদের সাথে বৈষম্য করছে।

বক্তারা বলেন,পড়াশোনা শেষ করেও বেকারত্বের কারণে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। তারা দাবির সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহবান করেন, যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষিত বেকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সরকারি চাকুরি প্রদানের। পরবর্তীতে একই দাবিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন ও সিলেটে বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে পৃথক স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে মানববন্ধন শেষ করেন চাকরি প্রত্যাশী প্রতিবন্ধী মানুষেরা।

সাংবাদিক সম্মেলনে প্রতিবন্ধী নেতৃবৃন্দের বাজেট প্রতিক্রিয়া; শেষ ঠিকানা যেন সামাজিক নিরাপত্তা খাত!

অপরাজেয় প্রতিবেদক

চলতি বাজেটেও সরকারের কল্যাণনির্ভরতার প্রভাব লক্ষণীয়, যা সামগ্রিক উন্নয়নকে করছে বাধাগ্রস্ত। যেন প্রতিবন্ধী মানুষের শেষ ঠিকানা সামাজিক নিরাপত্তা খাত- সাংবাদিক সম্মেলনে বাজেট প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় পর্যায়ের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ।

জাতীয় বাজেট ২০১৯-২০ অর্থবছরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ১৬২৯.৫১ কোটি অর্থ বরাদ্দ পেয়েছে। তন্মধ্যে প্রতিবন্ধী মানুষের ভাতার জন্য বরাদ্দ পেয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের মোট বরাদ্দের ৮৫.৩৩ শতাংশ।

ভাতার ওপর সর্বাধিক এই গুরুত্ব অনেকের কাছে দৃষ্টিনন্দন হলেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনসমূহ বাজেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দের নীতি ও খাত পুনর্বিবেচনায় নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন। অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ডিসিএফ, ডব্লিউডিডিএফ, এনজিডিও, এনসিডিডব্লিউ, এসডিএসএল, ডিডব্লিউএস, ভিপস ও টার্নিং পয়েন্ট- মোট ৯টি সংগঠন গত ১৭ জুন জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জাতীয় বাজেট ২০১৯-২০: প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবস্থান’ শীর্ষক এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়োগ দিলে ৫ শতাংশ কর রেয়াতের সুবিধা; প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ব্যবসা ও উৎপাদনমূলক কর্মকান্ডেযুক্ত করার পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন ইতিবাচক কর্মসূচিকে স্বাগত জানান তারা। পাশাপাশি বাজেট প্রণয়নের পূর্বে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনসমূহকে সম্পৃক্ত না করায় সরকারের ব্যাপক সমালোচনাও করেছেন।

অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন আলাদা মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমেই সম্ভব বলে উল্লেখ করেন তারা। তবে প্রতিবারের ন্যায় দীর্ঘদিনের এ দাবি এবারও উপেক্ষিত। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনের প্রতিনিধিদের মতে, নীতি নির্ধারকরা এখনও মেডিকেল মডেলের কাঠামোয় আবদ্ধ এবং এ কারণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষমতায়ন ও অধিকারের বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে না। জাতিসংঘের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার সনদ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩ এর মতো শক্তিশালী আইনি কাঠামো থাকার পরও উন্নয়ন পরিকল্পনায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষমতায়ন ও অধিকার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি না হওয়ায় উপস্থিত প্রতিনিধিরা বিস্ময় প্রকাশ করেন। তারা স্পষ্ট বলেন, এ বাজেট বরাদ্দ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের হারবৃদ্ধি অনুকূলে নয়। সবার জন্য শিক্ষা এলক্ষ্যে নির্ধারিত হলেও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত ন্যায্য বরাদ্দ থেকে। দেশের ৯০% প্রতিবন্ধী শিশুর বিদ্যালয়ের গন্ডিতে উপস্থিতি নেই। এ বছর মাত্র ১০ হাজার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এসংখ্যায় ইউনিয়ন প্রতি উপবৃত্তির আওতায় পরে মাত্র ২ জন শিক্ষার্থী।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনের প্রতিনিধিরা টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন এবং সামাজিক কাঠামোর পূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটাতে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করার জোরাল দাবি জানান। তারা বলেন, বাজেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বরাদ্দ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দৃশ্যমান হয়। কিন্তু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য তথা সার্বিক উন্নয়ন শুধু এই একটি মাত্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সম্পাদিত হতে পারে না।

বিশেষায়িত বিদ্যালয়ে শিক্ষা উপকরণ সংকট; নানামুখী সমস্যায় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা

অপরাজেয় প্রতিবেদক

পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, সঠিক রঙের ব্যবহার, সহায়ক উপকরণ, ইন্ডিকেটর বা সঠিক দিকনির্দেশনা এবং কম্পিউটার প্রশিক্ষণে সহায়ক সফটওয়্যার ও অডিও বইয়ের অভাবসহ নানামুখী সমস্যার কারণে সাধারণ বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হতে পারছে না দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা।

বাংলা ইশারা ভাষার প্রচলনের অভাব ও যোগাযোগের বাধার কারণে শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরাও সাধারণ বিদ্যালয় থেকে দূরে থাকছে।

এর বাইরে আছে গণপরিবহনে সহায়ক যাতায়াত ব্যবস্থার অভাব।

মোটাদাগে এ কয়েকটি কারণেই আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও সাধারণ বিদ্যালয় ছেড়ে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ছুটতে হচ্ছে বিশেষায়িত বিদ্যালয়ে। এসব বিদ্যালয়ে নিজেদের গন্ডির মধ্যেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা। কিন্তু বেশ কিছু শিক্ষার্থীর অভিভাবকের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, তারা নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না সন্তানদের নিয়ে। প্রতিযোগী মনোভাব, নিয়মিত পাঠ্যসূচিবহির্ভূত কার্যক্রমসহ প্রচুর মেলামেশার ফলে সাধারণ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যতটা বিকাশ হয়, বিশেষায়িত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসবের অভাবে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে। অভিভাবকেরা চান না তাদের প্রতিবন্ধী সন্তান সমাজবিচ্ছিন্ন অবস্থায় বেড়ে উঠুক।

জানা যায়, পড়াশোনার জন্য বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই এসব বিশেষায়িত বিদ্যালয়ের হোস্টেলে থাকেন; ছেলেদের জন্য এটি তুলনামূলক স্বচ্ছন্দের হলেও নারী শিক্ষার্থীরা এসব হোস্টেলে নিরাপদ বোধ করেন না। নিজেদের গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ থাকা এবং একা চলাফেরার কারণে এসব শিক্ষার্থীর বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ নেই বললেই চলে।

রাজধানীর বিভিন্ন বিশেষায়িত বিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী কিশোরী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দলগত আলোচনায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের দুটি বিদ্যালয় এবং ব্যাপ্টিস্ট মিশন বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশেষায়িত বিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের কাছ থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করেছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠন বি-স্ক্যান।

ব্যাপ্টিস্ট মিশন বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানান, বিশেষায়িত বিদ্যালয়গুলোতে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক সুযোগ-সুবিধা ও উপকরণ থাকে, শিক্ষকেরাও বাড়তি যত্ন নেন, যা সাধারণ স্কুলগুলোতে মেলে না।

‘শিক্ষকদের অতিরিক্ত যত্ন, আবাসিক ব্যবস্থা, ব্রেইল বই এসব আমরা এখানে পাই, যা অন্য বিদ্যালয়ে নেই। তা ছাড়া এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা আমাদের সুবিধা-অসুবিধা, ভালো-মন্দ চাহিদা বোঝেন। স্বাধীন চলাচল শেখাতে মোবিলিটি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যা আমরা সাধারণ বিদ্যালয়গুলোতে পেতাম না,’ বলেন ওই শিক্ষার্থী।

সাধারণ বিদ্যালয়ে অন্যরা যেখানে শ্রেণিকক্ষের বোর্ড থেকে সহজেই শিক্ষকদের লেখা টুকে নিতে পারে, সেখানে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের নির্ভর করতে হয় কেবল শিক্ষকের মুখে বলা লেকচারে।

বিশেষায়িত বিদ্যালয়গুলোতে এ সমস্যা নেই। সাধারণ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারীরা ইশারা ভাষায় দক্ষ না হওয়ায় সেখানে নির্দ্বিধায় যেতে পারছেন না শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরাও।

পরিবারের সদস্যরা ইশারা ভাষায় দক্ষ না হওয়ায় অনেকে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে না, যে কারণে শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অনেকে বিশেষায়িত বিদ্যালয়ের হোস্টেল ছেড়ে বাড়িতেও যেতে চায় না বলে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষায়িত এক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জানিয়েছেন।

সাধারণ বিদ্যালয়ে দরকারি সুযোগ-সুবিধার অভাবের পাশাপাশি যাতায়াত সমস্যাও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের বিশেষায়িত বিদ্যালয়মুখী করছে।

অভিভাবকদের অভিযোগ, রাজধানীর গণপরিবহনগুলো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব নয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও বয়স্ক ব্যক্তিদের ওঠানামার জন্য বিভিন্ন বাসে ও পরিবহনে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা, সেগুলো নেই।

বাসচালক ও সহযোগীরা এমনকি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের গাড়িতে তুলতেও অনাগ্রহী থাকেন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ওঠানামায় যে অতিরিক্ত সতর্কতা প্রয়োজন, তা করতেও নারাজ থাকেন তারা।

যদিও এসব প্রতিষ্ঠানের নানান ঘাটতি অভিভাবকেরা সাধারণ না বিশেষায়িত বিদ্যালয় এ নিয়ে ভোগেন দ্বন্দ্বে। বিশেষায়িত বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানেও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত খেলাধুলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা নেই। হোস্টেলগুলোতে চিকিৎসাসেবাও অপ্রতুল। কোথাও কোথাও এমনকি ফার্স্ট এইড বক্সও নেই। অসুস্থ হলে হোস্টেল ছেড়ে বাড়ি চলে যেতে হয়।

হোস্টেলগুলোতে আছে আলোর অভাব, নেই পর্যাপ্ত লাইট-ফ্যানও। শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষায়িত এক বিদ্যালয়ের হোস্টেলে পানির সংকটও বিদ্যমান। পর্যাপ্ত কম্পিউটার না থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তিশিক্ষা থেকেও বঞ্চিত থাকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ বিদ্যালয়গুলোতে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের প্রবেশগম্যতা এবং তাদের জন্য দরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও উপকরণ নিশ্চিত করা উচিত।

এ ছাড়া বিশেষায়িত বিদ্যালয়কে প্রাক্ প্রাথমিকের আওতায় রেখে সাধারণ বিদ্যালয়কে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে গড়ে তোলা এবং গণপরিবহনে যাতায়াত নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়াও অতীব জরুরি।  

Translate | অনুবাদ